ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধনুয়া-এলেঙ্গা গ্যাস লাইনের অগ্রগতি মাত্র ২৫ ভাগ

৩ বছরের পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ১০ বছরেও শেষ হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

৩ বছরের পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ১০ বছরেও শেষ হয়নি

রশিদ মামুন ॥ তিন বছরের পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্প ১০ বছরেও শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্রীয় গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল)। আবার কোন পাইপ লাইন নির্মাণ শুরুর তিন বছরে অগ্রগতি দেখা গেছে মাত্র ২৫ ভাগ। দেশের একক গ্যাস সঞ্চালনকারী জিটিসিএল এর কাজের গতি সরকারের উচ্চ পর্যায়কে হতাশ করছে। সম্প্রতি জ¦ালানি এবং খনিজসম্পদ বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির শুরুতে পাইপ লাইন প্রস্তুত না থাকায় বিপাকে পড়তে হবে। জ¦ালানি বিভাগের উপপ্রধান মোঃ আবু ইউসুফ মিয়া স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ গ্যাস পাইপ লাইন প্রকল্পের মেয়াদ ১০ বছর অতিক্রম করলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। একইভাবে ধনুয়া-এলেঙ্গা গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও অগ্রগতির পরিমাণ মাত্র ২৫ ভাগ। গত ১৭ ডিসেম্বর মোঃ আবু ইউসুফ মিয়া এই প্রতিবেদন জমা দেন। জ¦ালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি জ¦ালানি বিভাগে পাইপ লাইন নির্মাণের অগ্রগতি নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে পাইপ লাইন নির্মাণের অগ্রগতি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা দরপত্র প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়াকে দায়ী করেন। বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালকদের দক্ষতা এবং যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। প্রকল্প পরিচালকদের ডেকে কোথায় কি সমস্যা আছে চিহ্নিত করে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন বিদ্যুত জ¦ালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। বৈঠকে জ¦ালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও পেট্রোবাংলা এবং জিটিসিএল এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জ¦ালানি বিভাগ সূত্র জানায়, বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ গ্যাস পাইপ লাইনটি মূলত নারায়ণগঞ্জ এলাকার বিদ্যুত কেন্দ্রে সরাসরি গ্যাস দেয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়। বিগত ২০০৭ সালে পাইপ লাইনটি নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়। পাইপ লাইনটির এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (ইআরপি) বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা ছিল। এতে পাইপ লাইনটি পেপারলেস ভাবে নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও প্রকল্পর পুরো কাজ শেষ হয়নি। জ¦ালানি বিভাগ বলছে এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে ধনুয়া-এলেঙ্গা পাইপ লাইনটি ২০১৪ থেকে ২০১৯ মেয়াদে শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতির পরিমাণ ২৬ দশমিক ২৬ ভাগ এবং ভৌত অগ্রগতি ২৫ দশমিক ৫০ ভাগ। পাইপ লাইনটি নির্মাণ শেষ হলে দেশের পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। জানতে চাইলে জিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আতিকুজ্জামান বলেন, বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ গ্যাস পাইপ লাইন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও প্রকল্পর ইআরপির কাজ এখনও শেষ হয়নি। দরপত্র প্রক্রিয়ায় দেরির কারণে এখন প্রকল্পের সব কাজ শেষ হয়নি বলে জানান তিনি। অন্যদিকে এলেঙ্গা-ধনুয়া পাইপ লাইনটির ৬৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটার বসে গেছে বাকিটা আগামী বছরের মধ্যে বসানো শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ধনুয়া-এলেঙ্গা পাইপ লাইনটিতে ৬টি নদীর ক্রসিং এবং একটি সিসি গেইট স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। এখন গ্যাসের স্বল্পতা থাকলেও আগামী বছর এলএনজি আমদানির শুরুতে পাইপ লাইন প্রস্তত না থাকলে বিপাকে পড়তে হবে। জ¦ালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী বছর থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হচ্ছে। সরকার প্রথমেই বিদ্যুত উৎপাদনে এলএনজির সরবরাহ বৃদ্ধি করতে চায়। এতে করে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে আসবে। কিন্তু এই দুটো পাইপ লাইনের সব কাজ শেষ হওয়া এর জন্য জরুরী। সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে সামিট এখন তেল ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এতে সরকারকে বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এর বাইরে সিরাজগঞ্জে একটি গ্যাসচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের হাব নির্মাণ করা হয়েছে। দেশীয় গ্যাসের স্বল্পতা শুরু হলে সেখানে এলএনজি সরবরাহ করতে হবে। এছাড়া কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এবং খুলনাতে দ্বৈত জ¦ালানির বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোও ডিজেল দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। সরকার চাইছে এসব কেন্দ্র গ্যাস দিয়ে চালাতে। আগামী বছর এলএনজি শুরুর প্রথমেই এসব বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাাহ করতে ধনুয়া-এলেঙ্গা পাইপ লাইনটির প্রয়োজন পড়বে।
×