ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১ জানুয়ারি সমাবেশ থেকে আসবে নতুন নির্দেশনা

রংপুরের জয়ের ধারা ধরে রাখতে চায় জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

রংপুরের জয়ের ধারা ধরে রাখতে চায় জাতীয় পার্টি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রংপুর সিটি নির্বাচনে বিজয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা বলছেন, রসিক সিটি নির্বাচনের ফল জাপার ঘরে আসায় উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এই সুযোগ কাজে লাগাতে বাড়ানো হচ্ছে সাংগঠনিক তৎপরতা। চলতি মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে রূপরেখা। এক জানুয়ারির সমাবেশ থেকে আসছে নতুন নির্দেশনাও। এদিকে পিরোজপুর-৩ আসনের এমপি রুস্তম আলী নতুন করে দলে ফেরায় জাপার ঘরে এখন খুশির আমেজ। তাই ফুরফুরে এরশাদ দলের মহাসচিবকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে কুয়াকাটা বেড়াতে গেছেন। আগামী এক জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের সকল জেলা-উপজেলা-মহানগর থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচী পালনে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রংপুর নির্বাচনের পর দলের কাকরাইল কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে জাপা নেতাকর্মীরা একে অপরকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন। চলছে বিজয় উল্লাস। এবার দলের লক্ষ্য আসন্ন গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ উপনির্বাচনে অংশ নেয়া। এছাড়া আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও প্রার্থী দেবে দলটি। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হবেন এ নিয়েও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা চলছে। দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, ৯০ দশকে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে সুসময় চলছে জাপার। ক্ষমতার কাছাকাছি অর্থাৎ ছায়া সরকার হয়ে সংসদে বিরোধী দলে আছে দলটি। যদিও সে অনুযায়ী সাংগঠনিক কার্যক্রম শক্তিশালী করতে পারেননি এরশাদ। এর অন্যতম কারণ হলো বারবার ভাঙনের মুখে পড়েছে জাপা। এখন এরশাদের করা দল চারভাগে বিভক্ত। তবে দলকে শক্তিশালী করতে না পারলেও দেশের রাজনীতিতে জাপা এখন ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে জোটের রাজনীতি চাঙ্গা হওয়ায় কদর বেড়েছে এরশাদের। সব দলই এখন এরশাদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এরশাদ মিলে মহাজোট গঠন হয়। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে এরশাদ মহাজোট থেকে বেরিয়ে বিরোধী দলে আসে। সরকারে এরশাদের দলের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এরশাদ ফের মহাজোট গঠন করতে পারেন। মহাজোট না হলেও আওয়ামী লীগের সক্ষে আপোস আপোস খেলায় নির্বাচনে অংশ নেবেন, তা অনেকটাই স্পষ্ট। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসনও চেয়েছেন এরশাদ। জাপা নেতারা বলছেন, রংপুর নির্বাচনের পর তৃণমূলে থেকে বারবার একই বক্তব্য আসছে তা হলেÑ আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেয়া। নেতাকর্মীরাও মনে করছেন, রংপুরের মতো জাতীয় নির্বাচনের ফল লাঙ্গলের পক্ষেই আসবে। এমন দাবি নিয়ে জেলা-উপজেলার নেতারা এখন ঢাকামুখী। তারা প্রতিদিনই বলছেন একক নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে। দলের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাত করে তারা একই দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে জাপা ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। আসনপ্রতি তিনজন করে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অন্তত ২০জনকে প্রার্থী হিসেবে নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে। অনেকে মৌখিক গ্রীন সিগন্যালও পেয়েছেন। সে অনুযায়ী মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বলেন, আমরা রংপুরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। পল্লীবন্ধু এরশাদকে যেদিন বিনা দোষে বন্দী করা হয়েছিল সেদিন এই রংপুরবাসীই নিজেদের জীবন বাজি রেখে তাদের ছাওয়াল এরশাদকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন করেছিল। এরশাদকে উন্নয়নের সিংহপুরুষ বলা হয়। তিনি রংপুরের সন্তান। সন্তান বিপদগ্রস্ত হলে মা ঘরে বসে থাকতে পারে না। তেমনি পল্লীবন্ধুর প্রতিটি দুঃসময়ে রংপুরবাসী মায়ের মতো সন্তানের পাশে এসে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, আমাদের দলে সবাই ঐক্যবদ্ধ, তার প্রমাণ রসিক নির্বাচন। এ নির্বাচনে দলের সকল শীর্ষনেতা এমনকি তৃণমূলের কয়েক সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী দলের প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য নিজের অর্থ খরচ করে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন। দলের প্রতি নেতাকর্মীদের এ কমিটমেন্ট বাংলাদেশের অন্য কোন দলে আছে বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, আসন্ন গাইবান্ধা-১ আসনের উপনির্বাচনেও দলের প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাব। একতাই বল। তার ওপর আমাদের পুঁজি আছে, সে পুঁজি বা মূলধন হচ্ছেন পল্লীবন্ধু এরশাদ। উন্নয়নের কথা ভাবলে, শান্তির কথা ভাবলে, নিরাপত্তার কথা ভাবলে মানুষ আমাদের অবশ্যই সকল নির্বাচনে জয়ী করবে। রসিক নির্বাচনের মাধ্যমে এ জয়ের ধারা শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের মতে, দলের এ বিজয় ঘুমিয়ে থাকা কর্মীদের আবার জাগিয়ে তুলবে। উর্বর জমিতে আবারও লাঙ্গলের চাষাবাদ শুরু হবে। আর এজন্য তারা দলীয় ঐক্যকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। জাপা সূত্রে জানা যায়, জয়ের এ ধারা অব্যাহত রাখতে আসন্ন বৃহত্তর রংপুরের গাইবান্ধা-১, সুন্দরগঞ্জ উপনির্বাচনের ফলও নিজেদের ঘরে আবার আনতে চায় জাপা। রসিক নির্বাচনের এ বড় জয় নির্বাচনকে নিজেদের আয়ত্তে আনতে ভূমিকা রাখবে বলে জাপা নেতাদের অভিমত। দলের কর্মীদের মতে, রসিক নির্বাচনের মতো এ উপনির্বাচনকেও যদি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া যায় তাহলে আবারও একটি বড় জয় আসন্ন। রসিক নির্বাচনে দলের এ বড় জয় সম্পর্কে জাপা কোচেয়ারম্যান জিএম কাদের বেেলন, মানুষ এখন অনেক সচেতন। ভোটারদের মাঝে উপলব্ধি হয়েছে, দেশ কার শাসনামলে ভাল চলেছে। আমি বিশ্বাস করি, রংপুরবাসীর এ ভোট জাতির জন্য মেসেজ। দেশবাসী পরিবর্তন চায়, হিংসা বা প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখতে চায় না। তারা উন্নয়ন ও সহনশীল রাষ্ট্র কামনা করে, এর জন্য এরশাদের জাতীয় পার্টি ছাড়া বিকল্প নেই। লাঙ্গলের এ বড় বিজয় নেতাকর্মীদের উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এ ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। তিনি বলেন, রসিক নির্বাচনের মতো গাইবান্ধা উপনির্বাচনও যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, তাহলে অবশ্যই জাতীয় পার্টি সেখানেও জয়লাভ করবে। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, রসিকে এ বিপুল জয়ের মাধ্যমে প্রমাণ হলো, দেশবাসী এরশাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। রসিকে এ জয়ে সারাদেশে দলীয় নেতাদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, আমরা আশাবাদী জাপা আরও এগিয়ে যাবে। কারণ, মানুষ এখন জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। সামনের প্রতিটি নির্বাচনে মানুষ জাপার প্রার্থীর পক্ষে রায় দেবেন বলেও তিনি আশাবাদী। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে সারাদেশে এখন সাজ সাজ রব। দেশজুড়ে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন চলছে। এক জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেন্দ্রীয় কর্মসূচী থেকে দল প্রধান নেতাকর্মীদের জন্য নতুন নির্দেশনা দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
×