ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাকড়সার জাল নিয়ে গবেষণা

পাল্টে যাবে নির্মাণশৈলী, বড় দুর্যোগেও ক্ষতি হবে না স্থাপনার

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

পাল্টে যাবে নির্মাণশৈলী, বড় দুর্যোগেও ক্ষতি হবে না স্থাপনার

সমুদ্র হক ॥ মাকড়সা এখন আর ফেলনা নয়। ফসলের মাঠে ও ঘরের কোনায় লালার সুতায় জাল বিছানো এই ক্ষুদ্র পতঙ্গ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, মাকড়সার জাল অনুপ্রেরণা হতে পারে আধুনিক নির্মাণ শৈলীর নতুন প্রযুক্তি। যা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অবকাঠামো স্থাপনা রক্ষা করবে। এই জাল শৈলীতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বড় ভূমিকম্পসহ বড় দুর্যোগের কবল থেকে বেঁচে যাবে লাখো মানুষ। তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির এই যুগে ঘরের কোনায় ও ফসলের মাঠে গাছ গাছালিতে জাল ফেলে অপেক্ষায় থাকা মাকড়সা বড় ধরনের গবেষণায় বিষয় হয়েছে। অবাক করার মতো ফলাফলও এনে দিয়েছে। এতকাল জানা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এরোনেটিকস এ্যান্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) বিশ্বের বড় কাজগুলো করে। নাসা ও বিশ্বের বিজ্ঞানীরা বর্তমানে ‘আজ যা স্বপ্ন কাল তা বাস্তব’ এমন ধারণা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইন্টারনেট সূত্র জানায়, মাকড়সার জাল নিয়ে গবেষণা মানবকল্যাণ বয়ে আনবে। এতকাল বিজ্ঞানিরা গবেষণা করেছেন মাকড়সার সুতায় এমন কি আছে যা দিয়ে বানানো জাল ভারি বস্তু এবং প্রাণীকে ধরে রাখে! এই ভাবনায় প্রথমে বানানো হয় কল্প-গল্পর শিশুতোষ ছবি স্পাইডার ম্যান। ছবির একজন নির্মাতার কথা- বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই যেখানে মাকড়সা নেই। এমন কি ক্ষেতে খামারে ঘাসের ওপরও এই ছোট্ট পোকা মুূহূর্তেই জাল বানিয়ে তা দিয়ে শিকার ধরে। বিশ্বে মাকড়সার কত যে প্রজাতি আছে তার ইয়ত্তা নেই। মানুষ ও বড় প্রাণী খেঁকো মাকড়সাও আছে। একবার জালে তুলতে পারলে মাকড়সা রক্ত চুষে নেবে দূরে থেকেই। কেউ বলে এই পোকাটি ড্রাকুলারের অস্তিত্ব বহন করে। ছোট মাকড়সা ছোট জাল বুনে পোকামাকড় ধরে। বড় মাকড়সা বড় প্রাণী ধরে। অনেক দেশের জঙ্গলে মাকড়সার জাল বড় গাছের মতো। বড় ছোট যে মাকড়সাই হোক এদের লালায় থাকে রেশমি সুতার স্থিতিস্থাপকতা। এই বৈশিষ্ট্য নিয়েই অতি দ্রুত জাল বুনতে থাকে। যা দ্রুতগতির। প্রাকৃতিক উপায়ে জাল বানাতে পারে একমাত্র মাকড়সা। যুক্তরাষ্ট্রের এরিজেনো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ জানিয়েছেন, মাকড়সার সুতার বৈশিষ্ট্য খুবই সূক্ষ্ম, যা অতি উচ্চমানের জৈব পলিমার। সহজে ছেড়ে না বা নষ্ট হয় না। এই পলিমারের সঙ্গে আছে কোলোজন পলিমার। যা শুধু জীবিত প্রাণীর দেহে উৎপন্ন হয়। মাকড়সার জালের প্রধান শক্তিই হলো এই কোলোজন পলিমার। জাল বুনতে একাধিক এ্যাঙ্গেল বা কৌনিক পন্থা অবলম্বন করে মাকড়সা। এমনভাবে জাল বোনে যাতে প্রচ- বাতাস ও ঝড়ে ক্ষতি না হয়। উচ্চ স্থিতিস্থাপকতা ও কৌনিক অবস্থান ধরে রাখে এই সুতা। সুতাই নিয়ন্ত্রণ করে জাল। আবার জালের মূল শক্তি নির্ভর করে গঠনের ওপর। এই গঠনে অতিরিক্ত ওজন বহন করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তে এসেছেন আগামীর পৃথিবী বস্তু জগতের সকল নির্মাণকে পাল্টে দেবে। প্রযুক্তির এমন নির্মাণ শৈলী হবে যাতে কোন ভূমিকম্প কোন দুর্যোগ অবকাঠামো স্থাপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এ্যারিজেনো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও প্রাণ রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক জেফরি জার্গের মাকড়সার জালকে একবিংশ শতকের বড় রহস্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এতকাল যা অজানা ছিল একটি পোকা তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আগামী পৃথিবীর সঙ্গে কীভাবে চলতে হবে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন মাকড়সার জাল সিনথেটিক ফাইবারকে নতুন যুগে পৌঁছে দিয়েছে। উদ্ভাবিত এই ফাইবারই মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে।
×