ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রেল বহরে যোগ হচ্ছে আধুনিক ১৫০ কোচ ও ২০ ইঞ্জিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

রেল বহরে যোগ হচ্ছে আধুনিক ১৫০ কোচ ও ২০ ইঞ্জিন

আনোয়ার রোজেন ॥ রেলপথে যাত্রীদের ভ্রমণ আরও নিরাপদ ও আরামদায়ক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রেলের বহরে যোগ হচ্ছে ১৫০টি যাত্রীবাহী আধুনিক কোচ (বগি) এবং ২০টি ইঞ্জিন। এর মাধ্যমে পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ও যাত্রীবাহী বগি প্রতিস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ইঞ্জিন ও বগি যুক্ত হলে রেলপথে যাতায়াত সময় কমে আসবে এবং যাত্রীদের জন্য আধুনিক, নিরাপদ ও উন্নত যাতায়াত নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বর্তমানে মিটারগেজ সেকশনে রোলিং স্টকের (ইঞ্জিন, যাত্রী ও মালবাহী গাড়ি) সঙ্কট রয়েছে। এগুলো কেনা হলে রোলিং স্টকের স্বল্পতা দূর হবে। তাছাড়া রেলওয়ের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। এসব দিক বিবেচনা করে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সরবরাহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপ¯ ’াপন করা হতে পা লওয়ে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে যাত্রীবাহী ১৫০টি বগি আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পাল্টে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে উন্নতমানের ২০টি রেল ইঞ্জিন ও ১৫০ বগি কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) শামসুজ্জামান বলেন, প্রথমবারের মতো কোরিয়া থেকে যাত্রীবাহী কোচ (বগি) কেনা হচ্ছে। এর আগে দেশটি থেকে কয়েকটি ইঞ্জিন আনা হয়েছিল, যেগুলোর মান অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভাল। রেল কোচ ও ইঞ্জিন কেনার এই প্রকল্পে বড় অঙ্কের ঋণও দিচ্ছে কোরিয়া। জানা গেছে, ২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ও ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী বগি সংগ্রহে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা দেবে দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। জানা গেছে, অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর তুলনায় কম সুদে এ ঋণ সহায়তা দিচ্ছে দেশটি। দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বার্ষিক সুদের সহজ শর্তে ঋণ পাবে বাংলাদেশ। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৮৬টি মিটারগেজ এবং ৯৬টি ব্রডগেজসহ মোট ২৮২টি ইঞ্জিন রয়েছে। এসব ইঞ্জিনের গড় আয়ুষ্কাল বা কার্যকারিতা ২০ বছর। এগুলোর মধ্যে ১৬৮টি (১১০টি মিটারগেজ ও ৫৮টি ব্রডগেজ) ইঞ্জিনের বয়স ৩০ বছর অতিক্রম করেছে। চাহিদার কারণে ব্যয়বহুল মেরামত ও অধিক জ্বালানি ব্যয়ের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনগুলো এখনও চালানো হচ্ছে। এছাড়া অনেক পুরনো মডেলের হওয়ায় এসব ইঞ্জিনের মেইনটেনেন্স পার্টসও সহজলভ্য নয়। চাহিদা ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় পুরনো এসব ইঞ্জিন বহর থেকে প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। অন্যদিকে রেলওয়েতে যাত্রীবাহী বগি রয়েছে ১ হাজার ১৬৫টি। এসব বগির উপযোগিতা বা অর্থনৈতিক মেয়াদ ৩৫ বছর। ৪৫৬টি যাত্রীবাহী বগির বয়স ইতিমধ্যে ৩৫ বছর অতিক্রম করেছে। ১৩৫টির মেয়াদ ৩১-৩৪ বছর। যাত্রী চাহিদার কারণে মেরামতের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ যাত্রীবাহী বগিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এগুলো আরামদায়ক ও নিরাপদ নয়। এসব বগি অনেক আগেই বহর থেকে বাদ দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু বগিস্বল্পতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন করে ইঞ্জিন এবং বগি কেনার জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পাঁচ বছরে ১ হাজার ১২০টি যাত্রীবাহী বগি ও ১০০টি ইঞ্জিন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই লক্ষ্য পূরণে ভূমিকা রাখবে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের সময় কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রেলওয়েতে নতুন ইঞ্জিন এবং বগি যুক্ত হবে। ফলে আধুনিক ও নিরাপদ ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নত যাত্রীসেবা দেয়া সম্ভব হবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের বিবেচনার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
×