ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়িবাঁধে ধস ॥ আট গ্রামে চাষাবাদ ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

বেড়িবাঁধে ধস ॥ আট গ্রামে চাষাবাদ ব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ বেড়িবাঁধের দুই পাশের মাটি ধসে পড়েছে। স্লুইসগেট চলে গেছে মাঝ নদীতে। চারপাশে গভীর পানি। ফলে স্লুইসগেটটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। এখন জোয়ার হলেই গোটা এলাকা তলিয়ে যায় পানির নিচে। এ অবস্থায় গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের আটটি গ্রামে কৃষি কাজে মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে রবি ফসলের আবাদ। কৃষকরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। স্থানীয় কৃষি বিভাগও বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছে। পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাষাবাদে কৃষক যাতে তাদের প্রয়োজনীয় পানি পেতে পারে এ লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে ৪৩/২ বি পোল্ডার বেড়িবাঁধের বাউরিয়া গ্রামের ভদ্রা নদীর শাখা খালের মুখে পাউবো এ স্লুইসগেট নির্মাণ করে। দক্ষিণ বাউরিয়া গ্রামের দুই গেটের এ স্লুইসগেট নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকা। সরেজমিন দেখা যায়, স্লুইসগেটটি বর্তমানে ভদ্রা নদীর শাখা খালের মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুই পাশ দিয়ে প্রবল স্রোতে এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। জোয়ারের সময় বাড়ছে পানির স্রোত। বাউরিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মাওলা জানান, ২০১৫ সালের বর্ষা মৌসুমে স্লুইসগেটের এক পাশে গভীর থেকে মাটি সরে সুরঙ্গের মতো সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে মাটি সরে যেতে থাকে। স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে মাটি দিয়ে তা আবার ভরাট করে। কিন্তু তা টেকসই হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। এক পর্যায়ে দুই পাশের বেড়িবাঁধের মাটি ধসে পড়ে। গোটা স্লুইসগেটটি মাঝ নদী বরাবর দাঁড়িয়ে পড়ে। গত দু’ বছর ধরে পানির স্রোতে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন ক্রমে বাড়ছে। এখন আর স্লুইসগেটটি কোন কাজেই লাগছে না। স্থানীয় কৃষক দেলোয়ার হাওলাদার জানান, এলাকার জমিতে তরমুজের ফলন ভাল হয়। অনেকেই তরমুজ চাষ করে লাভবান হচ্ছিল। কিন্তু গত দুই বছর ধরে এলাকা প্লাবিত হওয়ায় তরমুজের আবাদ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় ইউপি মেম্বার হেলাল হাওলাদার জানান, স্লুইসগেটটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলায় বাউরিয়া, চালিতাবুনিয়া, খন্তাখালী, গেরাবুনিয়া, রামানন্দ, সোনাখালী, কাঞ্চনবাড়িয়া ও আলগী মোট আট গ্রামের ফসলি জমি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। রবি ফসলের চাষাবাদ প্রায় বন্ধের পথে। তিনি আরও জানান, ভদ্রা নদীর মোহনায় বাউরিয়া এলাকার একটি ও উত্তর-পশ্চিমে বাদুরা এলাকায় অপর একটি স্লুইসগেট দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হতো। বাউরিয়া স্লুইসগেটের দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ায় পানির প্রবল স্রোত গিয়ে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বাদুরা স্লুইসগেটের ওপর। এতে করে ওই স্লুইসগেটটি ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, এলাকার আটটি গ্রামে আবাদি জমি রয়েছে ৪১০ হেক্টর। যেভাবে স্লুইসগেটের দুই পাড়ের মাটি সরে পানি প্রবেশ করছে তাতে এবারের রবি ফসল ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে মুগ ডালের। দ্রুত বাউরিয়া এলাকায় স্লুইসগেট নির্মাণ করা না হলে জোয়ারের পানি বাড়লেই রবি ফসলের ক্ষতি হবে। এ বিষয়ে পটুয়াখালী পাউবো কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, আসলে ভদ্রা নদীতে প্রবল স্রোত। আগের স্লুইসগেট দুই গেটের হওয়ায় পানির প্রবল স্রোতে পাশের মাটি সরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে শাখা নদীর ভেতরে নতুন করে একটি স্লুইসগেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি হবে তিন গেটের। নেদারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকারের ‘ব্লু গোল্ড’ নামের যৌথ প্রকল্পের আওতায় এর ডিজাইন করা হয়েছে। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু হবে।
×