ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞার মুখেও পিয়ংইয়ং অবিচল

ফিরে দেখা ২০১৭ ॥ বছরজুড়ে আলোচনায় ট্রাম্প-কিম বাগ্যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

ফিরে দেখা ২০১৭ ॥ বছরজুড়ে আলোচনায় ট্রাম্প-কিম বাগ্যুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিার মধ্যে পুরো ২০১৭ সালজুড়ে তীব্র বাগযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। চলতি বছরের প্রথম দিনই কিম জং উন ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি এ বছরেই হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করবেন এবং তিনি তার কথা রেখেছিলেন। এটি তৈরি করে এর পরীক্ষা করার সময় উত্তর কোরিয়া ও চীনের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিশাল ফাটলের সৃষ্টি এবং ছয় দশমিক তিন মাত্রার ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে পিয়ং ইয়ং-এর অব্যাহত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের আগেই অঙ্গীকার করেছিলেন, তার নজরদারির মধ্যে থেকে উত্তর কোরিয়া কখনই আর আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে পারবে না, কিন্তু উত্তর কোরিয়া তা করে দেখিয়েছে এবং বেশ উচ্চমাত্রার এবং শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রের সাফল্যজনক পরীক্ষা চালিয়েছে। এসব পরীক্ষার পর কিম জং উন বলেছেন, তিনি এই মানসিকভাবে অক্ষম বৃদ্ধকে (ট্রাম্প) ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমেই পোষ মানাবেন। জবাবে ট্রাম্প কিম জংকে ‘বেঁটে খাটো মোটা’ লোক, উম্মাদ, সিক পাপী ও লিটল রকেটম্যান বলে ঠাট্টা উপহাস করতে ছাড়েননি। তবে মুখে ট্রাম্প যাই বলুন না কেন কিম জং উন তার পরমাণু কর্মসূচী ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে ট্রাম্প ও তার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় মিত্র বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ঘুম হারাম করে দিয়েছেন। ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতির প্রায় পুরো সময়জুড়ে ছিল উত্তর কোরিয়াকে বাগে আনার কৌশল নিয়ে চিন্তাভাবনা। তাকে পোষ মানানোর জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছেÑ তা সত্ত্বেও কিম জং নির্বিকার। শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রাম্পকে চীন ও রাশিয়ার দ্বারস্থ হতে হয়েছে। চীন উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ ও বাণিজ্য অংশীদার হওয়ায় এর ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণ ও কিছু পণ্যের আমদানি রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সম্মত হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুরোধে চীন কিছুটা কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করায় ১৫ সেপ্টেম্বরের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর দু’মাস ধরে উত্তর কোরিয়া কোন ধরনের পরীক্ষা চালায়নি, তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক ও সমর বিশেষজ্ঞরা এই মর্মে উৎকণ্ঠায় আছেন যে উত্তর কোরিয়ার এই নীরবতা মোটেই নিষ্ক্রিয়তা নয়। কেননা পিয়ং ইয়ং এর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এতটাই উৎকর্ষ লাভ করেছেÑ যে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ-ের যে কোন শহরেই হামলা চালাতে সক্ষম। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অঙ্গরাজ্য হাওয়াই দ্বীপের অংশবিশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্রের আওতাধীন ছিল বলে মনে করা হতো। সামরিক বিশ্লেষকরা যে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন তা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু প্রযুক্তির উৎকর্ষতা। সর্বশেষ যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উত্তর কোরিয়া নিক্ষেপ করেছেÑ তা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের দশগুণ উচ্চতায় উঠে এবং বহু দূর পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেই সঙ্গে দেশটির পরমাণু বিজ্ঞানীরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ছোট ছোট আকারের পরমাণু তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। এই পারমাণবিক অস্ত্রগুলো যদি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে সংযোজন করা যায়Ñ তাহলে উত্তর কোরিয়া এক অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তি হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়া ট্রাম্প উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের মতো ‘বেঁটে খাটো মোটা’ লোকের কাছে যেন অসহায় হয়ে পড়ছেন। এদিকে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচীর দরুণ দেশটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অবরোধ আরোপে সেখানের অর্থনীতি সুস্পষ্ট চাপের সম্মুখীন হয়েছে। সেজন্য দেশটির রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট হ্যাকাররা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হ্যাকিং করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কামিয়ে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৫০ টিরও বেশি দেশের বাণিজ্যিক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্তর কোরিয়া হ্যাকাররা সফল হামলা চালিয়েছে। তারা ব্রিটেনের এক স্বনামধন্য হাসপাতালে হ্যাকিং করে এর চিকিৎসা সেবার ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটায়। হাসপাতালের জরুরী ও সার্জারি বিভাগে ইনফ্রারেভ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা এটি অকার্যকর করে ফেলে। বাংলাদেশও উত্তর কোরীয় হ্যাকারদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারা কোটি কোটি ডলার লুট করে নেয়। -এএফপি
×