ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বড়দিনের প্রার্থনায় পোপ ফ্রান্সিস

শরণার্থীদের অবহেলা নয়

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

শরণার্থীদের অবহেলা নয়

ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস (৮১) রবিবার বড়দিনের আনন্দক্ষণে বিশ্বের মানুষ যাতে বাস্তুচ্যুত লাখো শরণার্থীর দুঃখকষ্টকে উপেক্ষা না করে সেই আহ্বান জানিয়েছেন। ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় বড়দিনের আগের রাতের প্রার্থনায় তিনি এ আহ্বান জানান। খবর এএফপি ও বিবিসির। পোপ ফ্রান্সিস শরণার্থীদের অবহেলা না করা বা তাদের বিষয়টি এড়িয়ে না যাওয়ার জন্য বিশ্বের ১৩০ কোটি ক্যাথলিক খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ‘নিষ্পাপদের রক্তপাতের’ আকাক্সক্ষা চরিতার্থ করার জন্য অভিবাসীদেরকে তাদের ‘ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা’ হয়েছে। জোসেফ ও মেরির পদাঙ্কের আড়ালে অনেকের পদাঙ্ক লুকিয়ে রয়েছে। আমরা লাখ লাখ মানুষকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হতে দেখেছি। তাদেরকে তাদের প্রিয়জন ছেড়ে অজানার উদ্দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। চলমান শরণার্থী সঙ্কট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সৃষ্টি। অনেকেই তাদের কারণে ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই নেতারা তাদের সম্পদ বাড়ানোর জন্য ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেন। তারা নিরপরাধ অসহায় মানুষের রক্ত ঝরানোকে কোন বিষয়ই মনে করেন না। শরণার্থীদের পরিস্থিতিকে পোপ তুলনা করেছেন মেরি ও জোসেফের বিড়ম্বনার সঙ্গে। বাইবেল থেকে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সেই গল্প, যখন মেরি ও জোসেফ নাজারেথ থেকে বেথলেহেমে গিয়ে কোন আশ্রয় পাচ্ছিলেন না। বড়দিনের প্রার্থনায় উপস্থিত খ্রীস্টের অনুসারীদের সামনে পোপ বলেন, বহু মানুষ আজ ঘরবাড়ি ছেড়ে দেশান্তরে বাধ্য হয়েছে, সেই সব শাসকদের ভয়ে যারা নিরপরাধ মানুষের রক্ত ঝরানোর মধ্যে দোষের কিছু দেখে না। পোপ ফ্রান্সিস সোমবার বড়দিনের সকালে ভ্যাটিকানের ঐতিহ্যবাহী ‘উরবি ইট ওরবি’ (শহর ও বিশ্বের কাছে) প্রার্থনা সভাতেও ভক্তদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। এতে তিনি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করায় যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তাতে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, জেরুজালেম শান্তির নগরী। সেখানে যদি কোনপক্ষের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সেখানে আর শান্তি থাকবে না। তিন ধর্মের মানুষের জন্যই জেরুজালেমকে উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত। চার বছর আগে ল্যাটিন আমেরিকা থেকে প্রথম নির্বাচিত পোপ ফ্রান্সিস নিজেও একজন ইতালীয় অভিবাসীর নাতি। রবিবারের প্রার্থনায় তিনি বলেন, জোসেফ ও মেরির পদাঙ্কে মিশে আছে আরও বহু মানুষের পদচিহ্ন। লাখো মানুষের পায়ের চিহ্ন এই পথে দেখি যারা স্বেচ্ছায় অভিবাসী হয়নি। তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। প্রিয়জনকে পেছনে ফেলে তাদের পা বাড়াতে হয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস মনে করিয়ে দেন, যিশুর প্রতি যে বিশ্বাস এনেছে সে অবশ্যই বিদেশীদের স্বাগত জানাবে। তা সে বিশ্বের যে প্রান্তেরই হোক না কেন। পোপ ফ্রান্সিস যে তার আগের পূর্বসূরিদের মতো কট্টর মনোভাব পোষণ করেন না তার প্রমাণ পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়ে। বিশ্বের দুই কোটি ২০ লাখ অভিবাসীর অধিকারের প্রশ্নে সব সময়ই তিনি সরব ছিলেন। গত বছর তিন ধর্মের শরণার্থীদের পা ধুয়ে চুমু খেয়ে তিনি আলোচনার জন্ম দেন। মিয়ানমারের রাখাইনে দমন পীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিজের চোখে দেখতে নবেম্বরের শেষে ও ডিসেম্বরের শুরুতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করেন পোপ। সে সময় ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবারের কাছ থেকে তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শুনে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। ওই অনুষ্ঠানে পোপ বলেন, ঈশ্বরের উপস্থিতি রোহিঙ্গা রূপেও বিরাজমান। আর রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে পোপ বলেন, যারা তোমাদের ওপর পীড়ন চালিয়েছে, যারা তোমাদের আঘাত করেছে তাদের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাইছি। তোমাদের মহৎ হৃদয়ের কাছে আমার আবেদন আমাদের ক্ষমা কর।
×