ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভূ-গর্ভস্থ পানি সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

ভূ-গর্ভস্থ পানি সঙ্কট

প্রতিদিনই কমছে পানির উৎস। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই হ্রাস পাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। মানবজাতিকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে পানি সঙ্কট। বিশ্বের ভূ-গর্ভে পানির যত মজুদ আছে তার এক-তৃতীয়াংশই মানুষের কর্মকা-ের জন্য যাচ্ছে দ্রুত ফুরিয়ে। ভূ-গর্ভের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ পানির সঠিক পরিমাণ কত তা স্পষ্টভাবে জানা না থাকায় তা জানা এবং সে পানি কত সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে তা বের করার চেষ্টা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থার (নাসা) বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে তৎপর। পৃথিবীর ৩৭টি বৃহৎ পানির স্তরের মধ্যে ২১টির পানি যাচ্ছে ফুরিয়ে। এ স্তরগুলোর অবস্থান ভারত ও চীন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের সীমানার মধ্যে। নাসা ১৩টি পানির স্তরকে আখ্যায়িত করেছে চরম সঙ্কটাপন্ন হিসেবে। যেগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। স্তুরগুলো ব্যবহার উপযোগী করা তথা প্রাকৃতিক উপায়ে স্তরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। ঢাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নামছে নিচের দিকে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানিরও তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক স্থানে এক যুগ আগেও যেখানে মাটির ষাট থেকে নব্বই ফুট গভীরে পানি পাওয়া যেত, সেখানে এখন ১৬০ ফুট গভীরেও মিলছে না পানি। এর পেছনে যেসব কারণ উঠে এসেছে তা হচ্ছে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা ও অন্যান্য নদীতে পানির স্তর কম থাকা এবং গভীর নলকূপের মাধ্যমে অতিরিক্ত হারে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন। ওয়াসা সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভূ-গর্ভস্থ স্তর থেকে পানি উত্তোলনে বাধ্য হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর পাশের নদীগুলোর পানি মাত্রাতিরিক্ত দূষিত হয়ে পড়ায় তা পরিশোধন করে ব্যবহার করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর যে বাড়তি চাপ পড়ছে তা অশনি সঙ্কেত বৈকি। ঢাকাসহ দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি সুবিধার বাইরে। এক সময় পুকুর বা উপরিস্থ জলাধারের পানি ছিল সুপেয়। গ্রামীণ জনপদের মানুষ সেই পানি পান করতেন। নানাবিধ দূষণ সেই অবস্থাকে নষ্ট করেছে। সুপেয় পানির ভয়াবহ সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ বাড়া স্বাভাবিক। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগের দূষিত পানি ভূ-গর্ভের শূন্যস্থানে প্রবেশ করে নাগরিক জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। এ ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারকারীরা নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে। ফলে সুপেয় পানির ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আর এ কারণে ভবিষ্যতে সুপেয় পানি পাওয়া সহজসাধ্য হওয়ার কথা নয়। বরং সঙ্কট আরও বাড়বে। পানির স্তর আরও নেমে গেলে ভয়াবহ বিপর্র্যয় ও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা হবে তীব্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে সাড়ে নয় কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পারছে না। অনেক এলাকা রয়েছে ভয়ানক ঝুঁকিতে। অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ দ্বারা পানি উত্তোলনের ফলে এমনটা হচ্ছে। গৃহস্থালি কাজকর্ম, চাষাবাদ নানা প্রয়োজনে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। দেশের অভিন্ন ৫৪টি নদীতে উজানে বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রত্যাহারের কারণে নানা প্রতিকূলতা তৈরি হয়েছে। ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির চাহিদা বাড়ছে। নদ-নদীর পানির ধারণক্ষমতা হ্রাসও এ বিপদের জন্য দায়ী। নদীদূষণ এ অবস্থাকে ভয়ানকভাবে বিপজ্জনক করে তুলছে। খাবার পানির সঙ্কটের পাশাপাশি কৃষিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এমনকি ভূ-গর্ভস্থ পানি না পাওয়ায় অনেক এলাকায় আবাদি জমি পতিত রাখতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক, যা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে দেশের জন্য স্পষ্ট হুমকি। অবশ্য এমনটাও বলছেন কর্তৃপক্ষ যে, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে এনে বৃষ্টি, বন্যার পানি শোধনাগারে পরিশোধন করে সরবরাহ করা হবে। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির আধারকে রক্ষা করাও যেমন সম্ভব হবে, তেমনি অতিমাত্রায় পানি উত্তোলন কমবে এবং পানিতে আর্সেনিকের আগ্রাসনও অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে।
×