ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল ;###;মাল আবদুল মুহিত, সেরা খেলোয়াড় ডিফেন্ডারআঁখি

ভারতকে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ভারতকে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ ১৬ কোটি বাংলাদেশীর প্রত্যাশা যেমন ছিল, তেমনি ছিল উৎকণ্ঠাও। তীরে এসে আবার না তরী ডুবিয়ে দেয় বাংলাদেশ অ-১৫ মহিলা ফুটবল দল। কিন্তু তাদের এই আশঙ্কা ছিল অমূলক। সবাইকে আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। রবিবার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আকর্ষণীয়-জমজমাট ফাইনালে তারা ১-০ গোলে হারায় ভারতকে। শনিবার এক ফুটবলপ্রেমী নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে মজার একটি মন্তব্য পোস্ট করেছিল, ‘ভারতের বন্যাদের কি গোলবন্যায় ভাসাইয়া এবং মারিয়া হারাইতে পারিবে বাংলাদেশের মারিয়ারা?’ হ্যাঁ, মারিয়ারা পেরেছে। ভারতের অধিনায়ক বন্যা কবিরাজের হাতে সুদৃশ্য ট্রফিটা উঠতে দেয়নি তারা। আগেরদিন বাংলাদেশের অধিনায়ক মারিয়া মান্দা বলেছিল, ‘ম্যাচ শুরুর প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা গোল করতে চাই।’ তার সেই কথা ‘প্রায়’ ফলেই গিয়েছিল। খেলা শুরুর প্রথম মিনিটেই ভারতের জালে বল ঢুকিয়ে দেয় স্বাগতিক দল। গোলরক্ষক মনিকা দেবীর হাত থেকে বল ছুটে গেলে আনুচিং মগিনি শট করে গোল করলে উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ দল এবং গ্যালারির দর্শকরা। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তাদের এই আনন্দ পরিণত হয় বিষাদে। কারণ ভুটানী রেফারি চোকি ওম ফাউলের বাঁশি বাজান। তার ব্যাখ্যাÑ আনুচিং গোলরক্ষকের হাত থেকেই বলে শট নিয়েছে। বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে পড়ে সবাই। ৬ মিনিটে কর্নার পায় বাংলাদেশ। মারিজিয়ার কর্নারে আনুচিংয়ের হেড পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। ১৬ মিনিটে নীলার ক্রস আনুচিংয়ের হেড পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ২২ মিনিটে সতীর্থের কাছ থেকে বল পাওয়া আনুচিং ডি-বক্সে ঢুকে পড়ে বল মারজিয়াকে দেয়ার চেষ্টা করে। তবে সামনে এসে ভারতের গোলরক্ষক তা প্রতিহত করলে সুযোগ নষ্ট হয়। ৩২ মিনিটে বাঁপ্রান্তের ডি-বক্সে দিয়ে একক প্রচেষ্টায় ঢুকে পড়ে তহুরা। ডান পায়ের গড়ানো কৌণিক শট নেয়। গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পায়নি। কিন্তু বল সাইডপোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। আফসোসে পোড়ে বাংলাদেশ। একের পর এক আক্রমণ করেও যখন গোল পাচ্ছিল না বাংলাদেশ, তখন হতাশা বাড়ছিল। সেই হতাশার অবসান হয় ৪২ মিনিটে। বক্সের ভেতর তহুরার কাছ থেকে বল পায় আনুচিং। তার শট প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি শটে বল জালে জড়ায় ডিফেন্ডার শামসুন্নাহার (১-০)। কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। ৫৭ মিনিটে মারিয়া থেকে থ্রু পাস পেয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ে আনুচিং। জোরালো শট করে। ভারত গোলরক্ষক কর্নারের বিনিমিয়ে বাঁচায়। ৬০ মিনিটে মারিয়ার কাছ থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ে তহুরা। ফাঁকায় পেয়ে যায় গোলরক্ষককে। তাকেও কাটায়। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। সুন্দর আক্রমণ ধূলিসাত! ৮৩ মিনিটে মারজিয়ার পরিবর্তে মাঠে নামে ঋতুপর্ণা চাকমা। ৮৫ মিনিটে মনিকার কর্নার। ডিফেন্ডার ফিরিয়ে দেয়। ফিরতি বলে মনিকার উঁচু ক্রস। শামসুন্নাহার পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ। নইলে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতো বাংলাদেশ। ৮৮ মিনিটে আনুচিংয়ের বদলে নামানো হয় মিডফিল্ডার শামসুন্নাহারকে। ভারত মাঝে মধ্যে আক্রমণ করেছে ঠিক, তাদের কোন আক্রমণই দানা বাঁধতে দেয়নি বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। বয়সভিত্তিক ফুটবলে এই নিয়ে ‘এক হালি’ হার উপহার দিল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে এএফসি অনুর্ধ-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে দু’বার হারিয়েছিল বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বে ৩-১ এবং ফাইনালে ৪-০ গোলে। এই আসরে লীগ ম্যাচে ভারতকে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। আর রবিবারের ফাইনালের স্কোরলাইন তো আগেই জেনে গেছেন পাঠক। এই আসরে লীগ ম্যাচে নেপালকে ৬-০, ভুটানকে ৩-০ এবং ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এখনও অপরাজিত থাকার পাশাপাশি একমাত্র দল হিসেবে কোন গোলও হজম করেনি তারা। পক্ষান্তরে ভারত লীগ ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ এবং নেপালকে ১০-০ গোলে হারায়। হারে বাংলাদেশের কাছে। এই আসরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গোল (১৩টি) করেছে তারাই। অবশ্য বাংলাদেশ সমান গোল করেছে। তবে বাংলাদেশ দলের কৃতিত্ব হচ্ছে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি একমাত্র দল হিসেবে একটি গোলও হজম করেনি। বাংলাদেশ দলের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এই আসরে তাদের একাধিক ফুটবলার (৬ জন) গোল করেছে। তহুরা ও আনুচিং ৩টি করে, শামসুন্নাহার, মনিকা ও আঁখি ২টি করে, সাজেদা ১টি করে। বাংলাদেশ দলের গর্বিত কোচ বলা যেতেই পারে গোলাম রব্বনী ছোটনকে। এর আগে কোচ ছোটনের অধীনে এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার (২০১৬) চ্যাম্পিয়ন, একবার এবং এএফসি অনুর্ধ-১৬ আসরের (২০১৬) আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল। বিজয়ের মাসে নিজেদের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে এই শিরোপা জয়ের মধুর স্মৃতি বাংলাদেশী ফুটবল অনুরাগীদের হৃদয়ে যে বহুদিন থেকে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
×