ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভ্যাস বাড়ায় আয়ু

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

অভ্যাস বাড়ায় আয়ু

প্রতিদিন কত কিছু করি আমরা! সকালে ঘুম থেকে উঠেই নানা কাজে লেগে পড়তে হয় আমাদের। এসব কাজের মধ্যে আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে যুক্ত হয় নানা অভ্যাস। তার কোন কোনটি ভাল অভ্যাস, কোনটি আবার খারাপ। একদল ব্রিটিশ গবেষক সম্প্রতি ছয় লাখ মানুষের জীবনের বিভিন্ন অভ্যাস ও বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রোগের ইতিহাস নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের নির্দিষ্ট কিছু অভ্যাস একটি মানুষের গড় আয়ুতে যোগ করতে পারে বাড়তি কয়েকটি বছর। অর্থাৎ কিছু অভ্যাস মেনে চললে আপনি হয়ত আরও কয়েক বছর বেশি বাঁচবেন। গবেষকরা তাদের গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন এই অভ্যাসগুলো সম্পর্কে। লিখেছেন তাওফিকুর রহমান ধূমপান করবেন না গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, যেসব অভ্যাস স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে তার মধ্যে প্রথম হলো ধূমপান। গবেষণায় দেখা গেছে যারা ধূমপান করেন আর যারা করেন না, এদের মধ্যে যারা ধূমপান করেন তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এক্ষেত্রে দু’জনের গড় আয়ুর পার্থক্য খুবই চমকপ্রদ। গড় হিসেবে দেখা গেছে, ‘দিনে এক প্যাকেট সিগারেট আপনার গড় আয়ু থেকে সাত বছর কমিয়ে দেয়!’– গবেষণার অন্যতম প্রধান উশার ইনস্টিটিউটের পিটার জোসি জানিয়েছেন এই তথ্য। তাই আপনি যদি কখনও ধূমপান না করে থাকেন তবে ভবিষ্যতেও কখনও ধূমপান করার কুবুদ্ধি মাথায় আনবেন না। কমিয়ে আনুন কোলেস্টেরল এই গবেষণায় গবেষকরা মানব শরীরের যে জিনটি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম বেশির ওপর ভূমিকা রাখে তার ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষের দেহে এই জিনটি বিদ্যমান তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে তাদের গড় আয়ু কিছুটা কমে যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন এই কমে যাওয়ার পরিমাণ হলো আট মাস। অর্থাৎ যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি তাদের গড় আয়ু স্বাভাবিক মানুষের থেকে আট মাস কমে যায়। এক্ষেত্রে আপনার শরীরে এই জিনটি আছে কিনা সেটা হয়তো আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তবে আপনি খুব সহজেই আপনার খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সবুজ শাকসবজি, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি খাদ্য খাওয়া এবং চর্বি জাতীয় খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি রোধ করতে পারবেন। ফলে আপনার জীবনে যোগ হবে আরও আটটি মাস! ঝরিয়ে ফেলুন বাড়তি ওজন গবেষণার এই পর্যায়ে গবেষকরা সেই সব মানুষের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন, যারা তাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে এনেছেন। গবেষণার ফলাফল ছিল খুবই সুনির্দিষ্ট। দেখা গেছে, প্রতি কেজি ওজন কমানোর ফলে তাদের জীবনের গড় আয়ু বেড়ে গেছে ২ মাস করে। আপনি যদি আপনার শরীরের বাড়তি ওজনের ৬ কেজি কমিয়ে ফেলতে পারেন তবে আপনি আরও এক বছর বেশি বেঁচে থাকতে পারবেন! তাই এখনই আপনার বর্তমান ওজন মাপুন। দেখুন তা স্বাভাবিক ওজন থেকে বেশি না কম। যদি বেশি হয় তবে আর বসে না থেকে এখনই লেগে পড়ুন ওজন কমানোর কাজে। ত্যাগ করুন ধূমপান আপনি যদি একজন ধূমপায়ী হয়ে থাকেন তবে এতদিনে নিশ্চয়ই আশপাশের লোকজন, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে অনেক বকা খেয়েছেন। সেই সঙ্গে ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি থেকে নিশ্চয়ই ধূমপানের বহু কুফলও জেনে গেছেন। এবার তাহলে একটা বাড়তি তথ্য জেনে নিন। গবেষকরা পরীক্ষায় দেখেছেন, সকল ধূমপায়ীর জীবনেই এমন একটি সময় আসে যখন সে সম্পূর্ণভাবে ধূমপান পরিত্যাগ করতে পারে। আর এ সময় যদি সে ধূমপান ত্যাগ করতে সক্ষম হয় তবে সে তার জীবনের হারানো সেই সাত বছর (উপরের ১ নং পয়েন্টের) আবার ফিরে পেতে পারবে এবং তার গড় আয়ু একজন অধূমপায়ী ব্যক্তির সমান হয়ে যাবে। তাহলে কবে আসবে সেই মুহূর্তটি? হয়তো সেই মুহূর্তটি আজই, এখনই। যে সিগারেটটি হাতে নিয়ে আপনি এখন এই লেখাটি পড়ছেন সেটা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার এখনই সময়। তাই জীবনে যদি বাড়তি সাত বছর বেশি বাঁচতে চান তবে ছুঁড়ে ফেলে দিন হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটি। খুলে দিন মনের জানালা একটি পুরনো ধারণা কিংবা বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে না থেকে বরং খোলা মনের হোন। সব সময় নতুন নতুন জিনিস জানার চেষ্টা করুন। নতুন কিছু দেখার চেষ্টা করুন। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করুন। পুরনো অন্ধ বিশ্বাস কিংবা কুসংস্কার ত্যাগ করে মনকে করুন আরও বিশাল। গবেষকরা জানিয়েছেন, সংকীর্ণমনা মানুষের চেয়ে খোলামেলা, হাসিখুশি মানুষেরা বেশিদিন বাঁচেন। তাই আপনি যদি নতুন কিছু করতে ভয় পান কিংবা নতুন কিছু জানার অনাকাক্সক্ষা আপনার থেকে থাকে তবে আজই পরিত্যাগ করুন।
×