ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একদার শিল্পনগরী বগুড়া

গতি আসছে না অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায়

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

গতি আসছে না অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায়

সমুদ্র হক ॥ এলাকা নির্ধারিত হয়েছে। কোন জমি অধিগ্রহণ করা হবে তাও ঠিক হয়েছে। অর্থের বরাদ্দ হয়েছে। কেউ ওই ভূমিতে দ্রুত ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরিয়াল ভিউ (ম্যাপ নির্ধারণ) নেয়া হয়েছে। শুধু- ভূমি হুকুম দখলের অনুমোদন না পাওয়ায় বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমি) প্রতিষ্ঠায় গতি আসছে না। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানালেন, ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। অপেক্ষা- হুকুম দখলের চূড়ান্ত অনুমোদন। তা এলেই ভূমি মালিকদের অর্থ পরিশোধ করে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কাজ শুরু হবে। কৃষি ভিত্তিক উত্তরাঞ্চলের সার্বিক কর্মকা-কে স্থিতিশীল করে নানা ধরনের শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তদারকিতে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিইজেড) স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় প্রায় দু’বছর আগে। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) প্রস্তাবিত বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সার্বিক কাজ সম্পন্ন করে। ভূমি অধিগ্রহণের স্থান নির্ধারিত হয়। তারপরও অপার সম্ভাবনার দুয়ার খোলায় কোন গতি আসছে না। শিল্পনগরী বগুড়ার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নগরীর শাজাহানপুর উপজেলায় ২শ’৫১ দশমিক ৪৩ একর ভূমির অধিগ্রহণের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দের জন্য ৩শ’ কোটি টাকারও বেশি প্রাক্কলন করার পর বরাদ্দ হয়েছে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দক্ষিণে শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া, চকজোড়া, পারটেকুর, বীরগাঁও, চকভ্যালি মৌজায় ভূমি হুকুম দখলের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। নিকট অতীতের শিল্পনগরী বগুড়া তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। দিনে দিনে সবগুলো শিল্প নিভে যায়। লাখো শ্রমিকের কান্নার ¯্রােত শিল্প মালিকদের মন গলাতে পারেনি। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে হাইরাইজ ভবন, আবাসিক ভবন, বানিজ্যিক কেন্দ্র । বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের উদ্যোগেও ভাটা পড়েছে। বগুড়া দিনে দিনে পরিণত হয়েছে শপিংমল, বাণিজ্যিক শোরুম, আধুনিক শপিং কমপ্লেক্স, আধুনিক মার্কেট, তারকা খচিত হোটেল, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার নগরীতে। বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বিইজেড) স্থান নির্ধারণ এমনভাবে করা হয়েছে যাতে নিকট ভবিষ্যতে বগুড়া- সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ বিইজেডের কাছ দিয়ে যায়। ৭৪ কিলোমিটার এই রেলপথ নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগে দূরত্ব অনেক কমে যাবে। সূত্র জানায় ভারত এই রেলপথ নির্মাণে সহযোগিতা দেবে। কৃষিপণ্য উৎপাদনে বগুড়া বড় ভূমিকা রাখছে। ষাটের দশকেই বগুড়া অঞ্চল কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। ওই সময়ই বগুড়া কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। দিনে দিনে তা আরও সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে কৃষির উৎপাদিত অনেক পণ্য বিশেষ করে সবজি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে উন্নত কোন ব্যবস্থা নেই। শীতের সবজি মৌসুমে অনেক সবজি বিশেষ করে- মুলা, গাজর, বেগুন, কফির বাড়তি উৎপাদনে কৃষক দাম না পেয়ে ফেলে দেয়। বগুড়ার আদমদীঘির একটি গ্রাম কম্বল ও চাদর উৎপাদন করে সারাদেশে সুনাম অর্জন করেছে। গ্রামটি কম্বলের গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। তাঁত শিল্প আধুনিকায়ন না হওয়ায় এগিয়ে যেতে পারছে না। ডেইরি ফার্মের অবস্থাও একই রকম। গ্রামাঞ্চলে নারীরা সেলাই মেশিনে উৎপাদিত গার্মেন্ট বানিয়ে বড় মার্কেটে যেতে পারছে না। বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকায় নারী অটোমোবাইল কারখানা স্থাপন করে মোটর সাইকেল অটোরিকশা মেরামত করছে। ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ তৈরির বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে বগুড়া। বছর কয়েক আগে বিসিক এই উদ্যোগ নিয়ে এগোতে পারেনি। বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে যুগের চাহিদার প্রয়োজনে ইলেকট্রনিক্স এক্সেসারিজ (যন্ত্রাংশ) তৈরির অপার সম্ভাবনা বিরাজ করছে। বগুড়ায় যত সবজি উৎপাদিত হয় সেগুলো এবং কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি উপযোগী নানা ধরনের প্যাকেটজাত খাবার তৈরি করে রফতানিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যা এক্সপোর্ট প্রমোশন জোনের (ইপিজেড) চেয়ে কোন অংশে কম হবে না। বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পর দ্রুত যে যুগোপযোগী আধুনিক অটোমেটিক যন্ত্রপাতি বসিয়ে নানা ধরনের শিল্প স্থাপিত হতে পারবে সেই সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে। যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর আশা করা হয়েছিল উত্তরাঞ্চলে শিল্পে গতি আসবে। কোন কারণে সেই গতি আসেনি। আশা করা হয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এবার আর গতি আনতে অসুবিধা হবে না। ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলের ঈশ্বরদী ও নীলফামারীতে ইপিজেড স্থাপিত হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ইপিজেডের সহযোগী হতে পারবে। এক সূত্র জানায়, বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল গতি পাওয়ার সঙ্গে বেসরকারীভাবেও অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হতে পারে। উল্লেখ্য ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জে বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে যাচ্ছে। সিরাজগঞ্জে ১১টি কোম্পানির অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে।
×