ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন ॥ নেতাকর্মীদের খালেদা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন ॥ নেতাকর্মীদের  খালেদা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী দিনে যে কোন আন্দোলনের জন্য দলীয় নেতকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানান। বলেন, সরকার পাকিস্তানীদের কায়দায় চলছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া সবার দাবি সবার অংশগ্রহণে আমরা নির্বাচন চাই। আমাদের দাবি নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। রবিবার সন্ধ্যায় মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। মুক্তিযোদ্ধা দলের বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে এই মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সারাদেশ থেকে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। মহানগর নাট্যমঞ্চের মিলনায়তন ও এর বহিরাঙ্গন ব্যানার- ফেস্টন ও জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতি দিয়ে বর্ণিলভাবে সাজানো হয়। সকালে অনুষ্ঠানস্থলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও ৭ বীরশ্রেষ্ঠ স্মরণে সাতটি কবুতর মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা দলের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বেগম জিয়া বলেন, স্বাধীনতার সুফল কেবল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের লোকজন ভোগ করছে। কাউকে কথা বলতে দেয়া হয় না। সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। এর নাম কি গণতন্ত্র? এটাই কি স্বাধীনতার সুফল। আসলে স্বাধীনতার সুফল কেবল আওয়ামী লীগ ও তাদের লোকজন ভোগ করছে। তারা লুটপাট করছে। কাজেই দেশকে আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলমুক্ত হতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হলে আরেকবার জেগে উঠতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাই আসুন, সবাই ঐক্য করি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কোন প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে চলছে না। সবাই দেখেছে, কিভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলায় প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ করেছে। এ জন্য তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। এস কে সিনহার অপরাধ, তিনি সত্য কথা বলেছিলেন, স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য কাজ করেছিলেন। অথচ প্রধান বিচারপতিকে তার এজলাসে আর বসতে দেয়া হলো না। বাড়িতেও বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তার অপরাধ, এই সরকারের অপরাধ নিয়ে কথা বলেছেন। সংসদ অকার্যকর, কোন জবাবদিহিতা নেই বলেছিলেন। তাই তাকে অপসারণ করল। তাকে দেশের বাইরে যেতে বাধ্য করা হলো। তার স্ত্রীকে যেতে দেয়া হলো না। বিদেশেও তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হলো। প্রধান বিচারপতি হিসেবে যে সম্মানটুকু পাওয়ার তাও দেয়া হয়নি। তিনি দেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে জোর করে ইস্তফা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের ভয় পায়। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনলেই তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির কথা শুনলে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশের অনুমতি নিয়েও গড়িমসি করেছে। আওয়ামী লীগ কাউকে সম্মান দিতে জানে না। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছেন, এ নিয়ে সব সময় আওয়ামী লীগ হীনম্মন্যতায় ভোগে। তারা সত্যটাকে গোপন করে। শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন দেশ ও দেশের মানুষ এটা জানে। তার ঘোষণায় সাড়া দিয়েই সারাদেশের মানুষ, সিপাহীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। খালেদ জিয়া বলেন, প্রতিনিয়ত গুম, খুন হচ্ছে। কেউ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে, জবাবদিহি চাইলে সরকার গুম করছে, মামলা দিয়ে কারাগারে দিচ্ছে। গুম হওয়ার পর যাঁরা ফেরত আসছেন তাঁরা কোন কথা বলছেন না। কারণ, তাঁদের বলে দেয়া হয়েছে ফিরে এসে কিছু বললে পরবর্তী ফল ভাল হবে না। গুম-খুনের জন্য সরকার দায়ী। তিনি বলেন, সচিবালয়ে রাতের অন্ধকারে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভাল ভাল অফিসারকে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। একসময় তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। একই অবস্থা পুলিশেও। ভাল অফিসারদের পদোন্নতি না দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কি করতে চায় এর একটি রূপরেখা ‘ভিশন-২০৩০’ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপাসর্ন। বলেন, আগামীতে একটি আধুনিক দেশ গড়ে তুলতে চাই। যেখানে সবাই মিলেমিশে কাজ করবে। কৃষককে কমমূল্যে কৃষি উপকরণ দেব। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে তারা নাকি বিএনপিকে লাল কার্ড দেখাবে। কিন্তু দেশবাসীকে তাদের অনেক আগেই লালকার্ড দেখিয়েছে। এখন তো গু-ামি করে, অস্ত্র ঠেকিয়ে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছেন। সাহস থাকলে নিরপেক্ষ নির্ব্চান দিয়ে দেখেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আব্দুস সালাম, এলডিপি চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব) অলি, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীরপ্রতীক) প্রমুখ। এর আগে মুক্তিযোদ্ধা দলের এই সম্মেলনে ইসতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাদেক আহমেদ খান যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নিবাচিত হন। খালেদা জিয়া তাদের নাম ঘোষণা করে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেন।
×