ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষকদের কাছ থেকে বান্ডিল নিয়ে ভাল রিপোর্ট দেবেন তা হবে না॥ শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

শিক্ষকদের কাছ থেকে বান্ডিল নিয়ে ভাল রিপোর্ট দেবেন তা হবে না॥ শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পিয়ার ইন্সপেকশন পরিদর্শন নিরীক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সঠিকভাবে ও সময়মত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জবাবদিহিতা থাকে না। শিক্ষার মান উন্নয়নেও পরিদর্শন ও নিরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী সকলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে বান্ডিল নিয়ে ভাল রিপোর্ট দেবেন তা হবে না। সেই দিন শেষ হয়ে গেছে। রবিবার শিক্ষা ভবনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ল্যাপটপ ও প্রশিক্ষণ সনদ বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। ডিআইএ’র পরিচালক প্রফেসর আহমদ সাজ্জাদ রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব আহমেদ শামীম আল-রাজী এবং ডিআইএ’র যুগ্মপরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং মান উন্নয়নের জন্য তাগিদ সৃষ্টি করে। দক্ষ প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষদের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পিয়ার পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম গতিশীলতা পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতির পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের কোন দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। তিনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের বিভিন্ন সময়ে ঘুষ দুর্নীতির কথা তুলে ধরে বলেন, অনেক ঘটনা ঘটেছে। এখন অবস্থা ভাল। কর্মকর্তাদের কৌশলে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, একজন কর্মকর্তা দুর্নীতি করেছে। আমরা ধরলে কোথাও না কোথাও টাকা নিয়ে পার পাবে। তাই দুদক দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছি। এ সময় কিছুৃটা ব্যঙ্গত্মক সুরে তিনি বলেন, ‘একজন সাধারণ শিক্ষকের কাছ থেকে বা-িল ভর্তি টাকা নিয়ে আসবেন পরে ভাল রিপোর্ট দেবেন এসে। স্কুল পরিদর্শনে গেলে খাম রেডি করাই থাকে। উনারা যেয়ে খেয়ে দেয়ে খাম নিয়ে এসে রিপোর্ট দেন। ঘুষ নিয়ে প্রথমে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এক পর্যায়ে যেন বাস্তবতার কাছে নতি স্বীকার করলেন মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করেছি, সহনীয় হয়ে খান। কেননা আমার সেই সাহসই নেই বলার যে, ঘুষ খাবেন না। যে অবস্থা তাতে তা অর্থহীন হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই যে দেশের গরিব মানুষের কথা। গরিব মানুষের টাকায় আমার আপনার সকলের বেতন হচ্ছে। এটা গরিব মানুষের টাকা। আমি গত ৯ বছর ধরে বলছি দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। গরিব মানুষের টাকা। এক টাকা দিয়ে দুই টাকার কাজ করতে হবে। ঘুষের ব্যাপকতা কতটা ছড়িয়েছে তাও জানালেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, ‘নানা জায়গায় এমন হইছে, সব জায়গাই এমন হইছে। খালি যে অফিসাররা চোর তা না, অনেকেই চোর এখন। আমিও চোর। এ জগতে এমনই চলে আসছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।’ বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি কমেছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন সব কার্যক্রম ডিজিটাল হলে তা আরও কমে আসবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণে অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অর্পিত দায়িত্ব আরও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য তিনি ডিআইএ’র কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ২৭ জন কর্মকর্তার মাঝে ল্যাপটপ বিতরণ করেন। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা এবং ই-ফাইলিং শীর্ষক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের সনদও প্রদান করেন মন্ত্রী।
×