ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেতন বৈষম্য

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আমরণ অনশন, দ্বিতীয় দিনে অসুস্থ ৩২

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আমরণ অনশন, দ্বিতীয় দিনে অসুস্থ ৩২

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রাজধানীর শহীদ মিনারে সরকারী প্রাথমিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের আমরণ অনশন কর্মসূচী চলছেই। রবিবার দ্বিতীয় দিনের মতো অনশন চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অন্তত ৩২ জন শিক্ষক। যাদের মধ্যে ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ নামে তিনটি সংগঠনসহ সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ প্রাথমিক সরকারী শিক্ষক মহাজোট ব্যানারে এই কর্মসূচীর আয়োজন করে শিক্ষকরা। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে কর্মসূচী। শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন তাদের দাবি পূরণ না হলে কর্মসূচী বন্ধ করবেন না তারা। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, আগের বেতন স্কেলগুলোতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পেতেন। কিন্তু ২০১৫ সালের বেতন কাঠামোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ব্যবধান তিন ধাপ। এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে (মূল বেতন ১০ হাজার ২০০) বেতন পাচ্ছেন। আর প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১০তম গ্রেডে (মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা)। সহকারী শিক্ষকরা এই বৈষম্য নিরসনে প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিতে ১১তম গ্রেডে (১২ হাজার ৫০০) বেতন চান। জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহীনুর আকতার বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বেতন বৈষম্য আছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপে নির্ধারণের দাবিতে আমাদের এই আন্দোলন। গত সাড়ে তিন বছর আন্দোলন করেও সমাধান না পাওয়ায় আমরা অনশনে বসেছি। সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা এক হওয়ার পরও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের ‘বেতন বৈষম্য’ রয়েছে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এটা ছিল না। এরপর থেকে ১৯৮৫ সালে এক ধাপ, ২০০৬ সালে দুই ধাপ এবং ২০১৪ সাল থেকে তিন ধাপের পার্থক্য তৈরি করা হয়েছে। এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বেতন পাচ্ছেন একাদশ গ্রেডে। আর আমাদের দেয়া হচ্ছে চতুর্দশ গ্রেডে। বর্তমান নিয়মে একজন প্রধান শিক্ষক বেতন স্কেলের দ্বাদশ গ্রেডে চাকরি শুরু করেন। আর সহকারী শিক্ষকরা সেই স্কেলে চাকরি শেষ করবেন। অর্থাৎ ১৬ বছর চাকরি করার পর সহকারী শিক্ষকরা পাবে দ্বাদশ গ্রেডে ১১ হাজার ৩০০ টাকা, এটা অমানবিক। অনশনে কয়েক হাজার সহকারী শিক্ষক অংশ নিয়েছেন। রবিবার দুপুরে শহীদ মিনারে দেখা গেছে, কয়েক হাজার শিক্ষক সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনশনে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বাকিদের অনশনস্থলেই স্যালাইন দেয়া হয়েছে। এদিকে শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণের দাবি ন্যায্য উল্লেখ করে এই দাবি মেনে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। শহীদ মিনারে আমরণ অনশন কর্মসূচীতে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যদি জানতাম শিক্ষকদের শহীদ মিনারে এসে অনশন করতে হবে তবে আমি মুক্তিযুদ্ধ করতাম না। মানুষ গড়ার কারিগরদের রাস্তায় নামতে হয়, শহীদ মিনারে রাত কাটাতে হয়, অনশন করতে হয়- এটা একটি সভ্য দেশের জন্য লজ্জার।
×