ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিশুরা পাবে চকোলেট, বড়রা প্রার্থনা করবে ঈশ্বরের কাছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

শিশুরা পাবে চকোলেট, বড়রা প্রার্থনা করবে ঈশ্বরের কাছে

নিখিল মানখিন ॥ দারুণ সাজে সেজে উঠেছে রাজধানী শহর। এখন আলো ঝলমলে রাত। এখানে ওখানে মরিচবাতি। দিনের বেলায়ও চোখে পড়ছে সাজসজ্জা। ঘরের ভেতরটা গুছিয়ে নেয়া হয়েছে নতুন করে। বাইরেও আনন্দের বার্তা। এক বছরের প্রতীক্ষা শেষে আজ আসছেন লাল সাদা পোশাকের সান্তাক্লজ। বিশাল দাড়ি গোঁফ আর ভুঁড়ি নিয়ে শিশু কিশোরদের সামনে উপস্থিত হবেন তিনি। পকেট ভর্তি চকলেট! সবই তাদের মধ্যে বিতরণ করবেন। বিপুল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বড়রাও। ঘরের এক কোণে রাখা বিশেষ বৃক্ষটি এখন সুন্দর সাজানো। অভিজাত হোটেলগুলো জলজল করছে। সবই বড়দিন উপলক্ষে। আজ সোমবার ২৫ ডিসেম্বর শুভ বড়দিন। মেরি ক্রিসমাস। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসবে বরাবরের মতোই যোগ দেবে অন্য ধর্মাবলম্বীরা। অসাম্প্রদায়িক বাঙালী চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত বড়দিনটি হবে সবার। বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আজ থেকে ২ হাজারের বেশি বছর আগে এই শুভদিনে পৃথিবীকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্ট। বেথেলহেমের এক গোয়ালঘরে কুমারী মাতা মেরির কোলে জন্ম হয়েছিল যিশুর। খ্রিস্ট ধর্মানুসারীরা বিশ্বাস করেন, কোন পুরুষের সহবাস ছাড়াই যিশু খ্রিস্টের জন্ম। সেই অর্থে তিনি ঈশ্বরের পুত্র। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় সেখান হতেই বিকশিত হয় মুক্তির এই আলোর দিশারী। যার স্পর্শে পাপের আবর্তে নিমজ্জিত থাকা মানুষের অন্তরে এনে দেয় শান্তির পরশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপন করা হবে বড়দিন। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশের সব গির্জা ও বড় হোটেল রঙিন বিজলিবাতি আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। খ্রীস্টান ধর্মে বিশ্বাসীদের অনেকের ঘরেই বসানো হয়েছে প্রতীকী গোশালা। বেথেলহামের গরিব কাঠুরিয়ার গোয়ালঘরেই যিশু খ্রিস্টের জন্ম। সেই ঘটনা স্মরণ করে বাড়িতে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি করতেই এটি করেন যিশুর অনুসারীরা। বড়দিনের কেনাকাটা অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে রবিবার রাতে প্রার্থনাসভার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। রাতে প্রার্থনার বিশেষ মাহাত্ম হচ্ছে, পৃথিবীতে যিশুর আগমন উপলব্ধি করা। রাজধানীর কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালে রাতে প্রধান প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়। বড়দিন উপলক্ষে আজ সোমবার বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে এবং বেসরকারী টিভি চ্যানেলসমূহে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। দিনটি সরকারী ছুটির দিন। খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের অনুসারীরা আজ সোমবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই রাজধানীসহ খ্রীস্টান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বড়দিনের আমেজ শুরু হয়। শনিবারই সম্পন্ন হয়েছে এদিন পালনের সব প্রস্তুতি। গির্জাসহ বাসাবাড়ি বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়েছে। ক্যাথলিক খ্রীস্টানরা তৈরি করেছেন যিশুর জন্মদিনের গোয়ালঘর। প্রটেস্ট্যান্টদের স্থাপনাগুলোতে শোভা পাচ্ছে যিশুর আগমনী তারকা। এসব এলাকায় রবিবার বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে প্রার্থনা সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রবিবার রাতভর অনুষ্ঠান চলার পর আজ সোমবার সকালে প্রতিটি গির্জায় অনুষ্ঠিত হবে এক থেকে দুটি বিশেষ খ্রিস্টযোগ। এ উপলক্ষে রমনার আর্চবিশপ হাউস সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালকে বিশেষ সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়াও রমনা সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল, তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জা, মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চসহ রাজধানীর বিভিন্ন চার্চে বিশেষ খ্রিস্টযোগ অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য গির্জার প্রবেশপথে সাজানো হয়েছে ক্রশ, শুভেচ্ছা কার্ডসহ উপহারসামগ্রী বিক্রির দোকান। বড়দিন উপলক্ষে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, র‌্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেনসহ অন্যান্য হোটেল বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বড়দিনে এসব হোটেলে শিশুদের জন্য থাকবে ক্রিসমাস কিডস্ পার্টিসহ নানা ধরনের খেলার আয়োজন। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও আলোকসজ্জায়। সেখানে শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতা, ফ্যাশন শো, জাদু প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ কেক ও কুকিজের ব্যবস্থা করেছে সোনারগাঁও হোটেল। র‌্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেনের লবিতে স্থাপন করা হয়েছে বিশাল আকৃতির ক্রিসমাস ট্রি। হোটেলের চারটি রেস্তরাঁয় আয়োজন করা হয়েছে ক্রিসমাস স্পেশাল পুডিং, কেকসহ নানা মুখরোচক খাবার। সঙ্গে থাকবে সান্তাক্লজ ও ফ্লেইকস। বড়দিন উপলক্ষে ওয়েস্টিন ঢাকা হোটেলকে আকর্ষণীয় রূপে সাজানো হয়েছে। শিশুদের জন্য তারা বিশেষ কিডস্ পার্টিসহ নানা ধরনের প্রতিযোগিতা ও খেলার আয়োজন করেছে। দেশবাসীকে বড়দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া।
×