ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পৌষালি সন্ধ্যায় কত্থকের নান্দনিকতা, মুগ্ধ দর্শক

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

পৌষালি সন্ধ্যায় কত্থকের নান্দনিকতা, মুগ্ধ দর্শক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিকেল ডুবে নামে শীতের সন্ধ্যা। বেজে ওঠে নূপুরের নিক্কণ। নৃত্যশিল্পী উপস্থাপন করেন নানা শৈলী। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে কত্থক নাচের নান্দনিকতায় মুগ্ধ হয় দর্শক। শিল্পের সুন্দরতম প্রকাশে আলোড়িত হয় হৃদয়। এভাবেই হৃদয় রাঙানো আয়োজনে রবিবার থেকে শুরু হলো কত্থক নৃত্য উৎসব। ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে চলমান তিন দিনের এ উৎসবের আয়োজক কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। পৌষের সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। প্রদীপ-প্রজ্বলন ও পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। উদ্বোধনী আয়োজনে নৃত্য ব্যক্তিত্ব শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়কে প্রদান করা হয় ‘জীনাৎ জাহান স্মৃতি সম্মাননা পদক’। উৎসব উদ্বোধন করেন বরেণ্য নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ব্যালে ট্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আমানুল হক ও সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের পরিচালক আনিসুল ইসলাম হিরু। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছিল নৃত্য পরিবেশনা। পরিবেশিত হয় কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়ের ‘ভাবনায় সাত অবয়ব’ শীর্ষক প্রযোজনা। নূপুরের ঝংকারে অভিব্যক্তির সঙ্গে মুদ্রার মেলবন্ধনে উপস্থাপিত হয় বন্দনা, চতুরঙ্গ, পানঘাট, মেঘমল্লিকা, তারানাসহ কত্থক ঘরানার নানা আঙ্গিকের ১১টি নাচ। সাজু আহমেদ নির্দেশিত পরিবেশনায় অংশ নেন সুপর্ণা, নৃতাত্ত্বিকা, অর্পিতা, মালিহা, পূর্ণসহ ১২ জন নৃত্যশিল্পী। প্রযোজনার নেপথ্যে কণ্ঠসঙ্গীতে ছিলেন মোস্তাক আহমেদ, সরোদে ইউসুফ খান ও তবলায় জাকির হোসেন। আজ সোমবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন সকালে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা অঞ্চলের টেরাকোটায় প্রাপ্ত নৃত্যবৈচিত্র্য’ শীর্ষক সেমিনার। এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নৃত্য গবেষক ও সাংবাদিক শেখ মেহেদী হাসান। মুখ্য আলোচক হিসেবে থাকবেন নৃত্যব্যক্তিত্ব লায়লা হাসান। আলোচনায় অংশ নেবেন নৃত্যজন নিগার চৌধুরী, মুনমুন আহমেদ, এম আর ওয়াসেক। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে পরিবেশনা পর্ব। উপস্থাপিত হবে ১৪টি নৃত্য সংগঠনের পরিবেশনা। পরিবেশনা উপস্থাপনকারী সংগঠনগুলো হলো বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, আঙ্গিকাম, নূপুর নিক্কণ, অগ্নিলা নৃত্য নিকেতন, গন্তব্য, বগুড়ার আমরা কজন শিল্পীগোষ্ঠী, কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়, নৃত্যাশ্রম, পুষ্পাঞ্জলি, রিনিঝিনি ললিতকলা একাডেমি, রেওয়াজ পারফর্ম আর্টস, বেনুকা ও অনন্যা। এদিন সন্ধ্যায় অতিথি থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মীনু হক। উৎসব শেষ হবে মঙ্গলবার। এদিন পরিবেশনা উপস্থাপন করবেন নৃত্যাঞ্চল, নৃত্যশৈলী, পুষ্পাঞ্জলি, খুলনা, নৃত্যাশ্রম, কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়, অগ্নিলা নৃত্য নিকেতন, নৃত্যালয়, আকৃতি, আঙ্গিকাম ও রেওয়াজ পারফর্ম আর্টস। তিন দিনের পৌষমেলার সমাপ্তি ॥ যান্ত্রিক নগরে তিন দিন ধরে পিঠাপুলির স্বাদ নেয়ার সুযোগ পেলেন শহরবাসী। পিঠা খাওয়ার আনন্দের উপভোগ্য হয়ে ধরা দেয় লোকজ সংস্কৃতির ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এভাবেই আবহমান বাংলা সংস্কৃতিকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে শেষ হলো তিন দিনের পৌষ মেলা। পৌষমেলা উদ্্যাপন পরিষদের আয়োজনে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ মেলার শেষ দিন ছিল রবিবার। সমাপনী দিনে দুই পর্বে বিভক্ত মেলার কার্যক্রম শুরু হয় সকালে। বিকেলে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গানের দল পঞ্চভাস্বরের দলীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে একাডেমির নজরুল মঞ্চে শুরু হয় সমাপনী দিনের সাংস্কৃতিক পর্ব। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে লোকগীতি পরিবেশন করে মরমী লোকগীতি শিল্পীগোষ্ঠী। এতে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন রহিমা খাতুন, আঁখি বৈদ্য, শাহানা আক্তার পাপিয়া, দোয়েল রাজ, ফকির সিরাজ, রাজিয়া মুন্নী, রাকিবা খান লুবা, বাবুল সরকার, মঞ্জিলা বাউল, আনিসা বিনতে আব্দুল্লাহ, মীরা মন্ডল, উত্তম কুমার, বাউল দেলোয়ার, সোনিয়া বাউল প্রমুখ। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন ফয়জুল আলম পাপ্্পু, আহসান উল্লাহ তমাল, মাসুম আজিজুল বাশার প্রমুখ। ময়মনসিংহের শিল্পীদের যাত্রাপাল ‘রূপবান’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ দিনের আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে। দেশীয় প্রায় ৫০টি পিঠা-পুলির স্টল দিয়ে সাজানো ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। এসব স্টলে দেখা মেলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাটিসাপটা, তালবড়া, বিবিখানা, মেন্ডা, মোরা, ঝিনুক, দুধ চিতই, জামাই পিঠা, বউ পিঠা, ভাপা পিঠা, সিদ্ধপুলি, পাকন, খেজুর পিঠা, মালপোয়াসহ নানা স্বাদের পিঠা। ছিল পায়েস ও ফিরনিও। পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ও বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় গত শুক্রবার সকালে আইলা জ্বালিয়ে তিন দিনের এই মেলার উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। এবারের মেলাটি ছিলো পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের ১৯তম আসর।
×