ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্ন ফাঁস আতঙ্কের মধ্যেই শুক্রবার ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রশ্ন ফাঁস আতঙ্কের মধ্যেই শুক্রবার ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি

বিভাষ বাড়ৈ ॥ চাকরির পরীক্ষা থেকে ভর্তি পরীক্ষা। সব ক্ষেত্রেই প্রশ্ন ফাঁসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় এবার কঠোর পদক্ষেপের মধ্যে নেয়া হবে আসন্ন ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য এ পরীক্ষা সামনে রেখে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি)। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চলছে নির্বিঘে পরীক্ষা নেয়ার সর্বশেষ প্রস্তুতি। পরীক্ষায় মোবাইলফোনসহ সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসি জানিয়েছে, বিজ্ঞাপনের শর্ত অনুসারে শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, বই-পুস্তক, ক্যালকুলেটর এবং হাতব্যাগ নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবেন না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সঙ্গে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় হাতঘড়ি, পকেট ঘড়ি, ইলেক্ট্রনিক ঘড়িও ব্যবহার করতে পারবেন না। সময় জানার জন্য পরীক্ষার হলে ঘড়ি সরবরাহ করবে কমিশন। পরীক্ষার হলে কোন প্রার্থীর কাছে পিএসসি কর্তৃক নিষিদ্ধ কিছু পাওয়া গেলে কমিশন ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলসহ ভবিষ্যতে কমিশনের নেয়া সব নিয়োগ পরীক্ষায় তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। জানা গেছে, কেবল মোবাইল বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ করাই নয়; পরীক্ষা নির্বিঘœ করতে নেয়া হয়েছে আরও কিছু পদক্ষেপ। কমিশনের পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বাড়তি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলছেন, সারাদেশে এখন বড় আতঙ্ক প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে। এই আতঙ্ক আছে সবস্তরের পরীক্ষা নিয়েই। প্রশ্ন ফাঁস না হলেও ছড়ানো হচ্ছে গুজব। ফলে আতঙ্ক আরও বাড়ছে। বর্তমানে প্রথম শ্রেণী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, সরকারী বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সর্বশেষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে সারাদেশে। এতে সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। পিএসসি এসব বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমনই এক অবস্থায় সকলের আতঙ্ক কাটানো ছাড়াও প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে পদক্ষেপ জরুরী বলে মনে করে কর্মকমিশন। এবারের পরীক্ষায় রেকর্ডসংখ্যক তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫৩২ প্রার্থী আবেদন করেছেন। পিএসসি চাইছে এই পরীক্ষায় যাতে কোনভাবেই প্রশ্ন ফাঁস না হয়, সে লক্ষ্যে তাদের নানা প্রস্তুতি চলছে। ২৯ ডিসেম্বর হতে যাওয়া প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সার্বিক কার্যক্রম কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধে কয়েক সেট প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে গোয়েন্দা, পুলিশ ও র‌্যাবের তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। কোথাও কোন অনিয়ম ধরা পড়লেই ঘটনাস্থলে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অপরাধীকে শাস্তি দেয়া হবে। এছাড়া দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে পিএসসি নিজস্ব টাকায় দুটি করে মেটাল ডিটেক্টর সরবরাহ করছে। প্রতিটি পরীক্ষার হলে একটি করে ঘড়ি কিনে দেয়া হচ্ছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, সব অনিয়ম এড়াতে আমরা সতর্ক। ৩৮তম বিসিএসে সর্বোচ্চ আবেদনকারী হওয়ায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এরই মধ্যে পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিটি কমিটি সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেছি কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেয়া যায় এবং পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস যেন না হয়। তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে আমরা কয়েক দফায় তিনস্তরের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সভা-সেমিনার করেছি। পরীক্ষার দিন নিরাপত্তায় পুলিশ-র‌্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। সুষ্ঠুভাবে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনে পিএসসির মেম্বারসহ সকল কর্মকর্তা পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন কাজে নিয়োজিত থাকবেন। আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে এসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান। ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫৩২ প্রার্থী আবেদন করেছেন। এর আগে ৩৭তম বিসিএসে অংশ নেন দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬। ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেশের প্রায় চার শ’ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। বিসিএসের এবারের লিখিত পরীক্ষার প্রথমবারের মতো প্রতিটি খাতা দুজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন। তাদের নম্বরের ব্যবধান ২০ শতাংশের বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠানো হবে। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের মেধা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হবে বলে মনে করছে পিএসসি। এই বিসিএস থেকে বাংলাদেশ বিষয়াবলীর ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় আলাদা করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন রাখা হবে। সাত বিভাগের পাশাপাশি এবার নতুন বিভাগ ময়মনসিংহেও পরীক্ষা নেয়া হবে।
×