ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ ছাত্রলীগের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা -মোঃ তরিকুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

অভিমত ॥ ছাত্রলীগের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা -মোঃ তরিকুল ইসলাম

জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে ছাত্রলীগ তার ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করে দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে কাজ করে চলেছে। বিশেষত, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শ দ্বারা পরিচালিত এই ছাত্র সংগঠনের দায়বদ্ধতাও বেড়েছে। এখনকার একজন ছাত্রলীগ কর্মী জানে এদেশের ইতিহাস। এ সংগঠনের প্রতিটি কর্মীই উদ্বুদ্ধ হয় শান্তি, শৃঙ্খলা ও প্রগতির বাণীতে। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাঙালী চেতনাকে শাণিত করার জন্য। ভাষা আন্দোলনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কারাগারে বন্দী থেকেও দাবি আদায়ে প্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর দফা আন্দোলন, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুথান, ’৭০-এর নির্বাচন, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। ১৯৭৫ পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত যখনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে তখনই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফেরার পর দীর্ঘ প্রায় সাড়ে সাত বছর স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশকে যেভাবে পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তার হাল টেনে ধরেন। সে সময় থেকে শেখ হাসিনা দেশকে আবার সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রাণান্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় দেশ যখন সামরিক সরকারের হাতে জিম্মি হয়ে যাচ্ছিল তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে এবং পরে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে এ দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল তার বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রুখে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সেবামূলক কর্মসূচী পরিচালনা করে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিয়মিত কাজের একটি হলো- স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী। ছাত্রলীগ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচী পালন করে। আর সেই রক্ত বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য দেয়া হয়। পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করে, যা দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে। যার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার দেখানো পথে হাঁটছে। এ জন্য নেত্রীর মানবতার আদর্শ অনুসরণ করে শীতকালে গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। ছাত্রলীগ বন্যাকবলিত এলাকায় টিম গঠন করে ত্রাণ ও সেবামূলক কর্মসূচী পালন করে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গরিব ছাত্রদের পাশে দাঁড়ায়। তাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে সহায়তা করে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সব সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করে। আবাসন সমস্যা, পরিবহন সমস্যা, ছাত্রাবাসসহ সেখানে খাবারের যথাযথ মান বজায় রাখতে চেষ্টা করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরির সমস্যা, সঠিক পুস্তকের ঘাটতি নিয়েও কথা বলে। ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে বিভিন্ন খেলাধুলা এবং শারীরিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে। সামাজিক সমস্যাকে মোকাবেলা করতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময় সতর্ক। এ ছাত্র সংগঠনটি তরুণ সমাজকে রক্ষার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন, সেইসঙ্গে ক্যাম্পাসগুলোকে মাদকমুক্ত রাখতে সর্বদা সজাগ থাকে। বিভিন্ন ক্যাম্পাসের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গরিব মানুষের জন্য কাজ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ মেরামত করাসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করে। মূলত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেবল লেখাপড়া ও রাজনীতি নয়, সমাজের অবহেলিত এবং অশিক্ষিত মানুষকে শিক্ষাদান থেকে শুরু করে যাবতীয় সামাজিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে। সমাজের কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা ও শিশু নির্যাতনের বিপক্ষে ছাত্রলীগের অবস্থান। কেন্দ্রীয় দলের ভেতর বিভিন্ন প্রকার দ্বন্দ্ব ও সংঘাত বন্ধেও ছাত্রলীগের অবদান আছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময় অনেক অসুস্থ ও গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য দান বাক্সে করে টাকা সংগ্রহ করে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে থাকে। মানুষ ও মানবতার জয়গান করা, জনগণের জন্য কাজ করাই ছাত্রলীগের অন্যতম দায়। লেখক : সভাপতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ
×