ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সভা

রংপুরে বড় হারের কারণ খোঁজার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৮:০১, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

রংপুরে বড় হারের কারণ খোঁজার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিপুল ভোটের ব্যবধানে রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর কোন ক্ষমতাসীন প্রার্থী নয়, দলের স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য নেতারাই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পবেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন বছরের শুরুতেই দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরে নামবে দলটি। সাংগঠনিক সফরে গত আট বছরে সরকারের বিপুল উন্নয়ন ও অগ্রগতির পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নাশকতা, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও মানুষ পুুড়িয়ে হত্যার প্রামাণিক দলিল দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে ক্ষমতাসীন দলটি। শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারী বাসভবন গণভবনে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লীর সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য নেতারাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। আর দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জানা গেছে, বৈঠকে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সর্বশেষ জরিপেও বলা হয়েছিল, অন্তর্কলহের নিরসন করা না গেলে রসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ভাল করবে। তবে এত বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন হারল, সেটা খুঁজে বের করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা-ের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল নাশকতা, দুর্নীতি, দুঃশাসন, আগুন সন্ত্রাস, খালেদা জিয়াসহ জিয়া পরিবারের বিদেশে অর্থ পাচার ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার প্রকৃত চিত্রও ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে হবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর কোন সময় অপচয় করা যাবে না। নির্বাচনী এলাকায় জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের মন জয় করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সূত্র জানায়, রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বড় ব্যবধানে পরাজয়কে অপ্রত্যাশিত বলেই মনে করেন দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা। এ পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বৈঠকে রসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হারলেও সন্তোষ প্রকাশ করেন সভাপতিম-লীর সদস্যরা। তারা বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারলেও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘রসিকে এত বড় ব্যবধানে কেন দলের প্রার্থী হারলেন, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে প্রার্থী নির্বাচনে ভুল ছিল কিনা, কারা দলীয় প্রার্থীকে অসহযোগিতা করেছেন, এসব বিষয়েও প্রতিবেদন দিতে বলেছেন তিনি। সরকার প্রধান এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের ওভার কনফিডেন্ট (অতি আত্মবিশ্বাস) হতে নিষেধ করেছেন বলেও জানান সভাপতিম-লীর বৈঠকে উপস্থিত নেতারা। তারা বলেন, ওভার কনফিডেন্ট ক্ষতির কারণ হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী নিয়েও এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান দু’জন সভাপতিম-লীর সদস্য। তারা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেয়া হবে। আমাদের কাছে অনেক প্রার্থীর নাম এসেছে। কিন্তু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরই আমরা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করব। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার মতো প্রার্থী দেয়া হবে বলেও বৈঠকে আশ্বস্ত করা হয়। জানুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক জেলা সফরে বের হবে উল্লেখ করে বৈঠকে উপস্থিত দলের একাধিক নেতা জানান, এই জেলা সফর আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ। ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষাদিবস পালন করা হবে। এছাড়া ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসেরও অনুষ্ঠান থাকবে দলের। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র ফোকাস পয়েন্টে থাকবে। এখন থেকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র বার বার জনগণের সামনে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সভায়। এদিকে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী প্রচারে নামবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিম। সভাপতিম-লীর সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে একাধিক টিম গঠন করা হবে। এসব টিম জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সফর করে অবস্থা বুঝে জনসভা, গণসংযোগ চালাবে। জনগণের কাছে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও করবে উল্লিখিত টিম। শীঘ্রই এ টিম চূড়ান্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিম-লীর সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান ও দাফতরিক কাজের জন্য দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
×