ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সালমা নাসরীন

বিনিয়োগ ও উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

বিনিয়োগ ও উন্নয়ন

একজন সফল বিনিয়োগকারীকে ওয়েল ফোকাসড হতে হবে অর্থাৎ একটি লাইনে স্থির থাকতে হবে। এন্ড্রু কার্নেগি তাই যথার্থই বলেছেন যে, ‘দি মেন হু হ্যাভ সাকসিডেড আর মেন হু হ্যাভ চুজেন ওয়ান লাইন এ্যান্ড স্টাক টু ইট।’ যার বিনিয়োগের ক্ষেত্র তাকেই ফোকাস করতে হবে। তাকে সুবিধাজনকভাবে ট্রেন্ড ইউজ করতে হবে। এ ট্রেন্ড হচ্ছে পরিবর্তনের ¯্রােতধারা। কথায় বলে ‘দ্য স্পিড অব চেঞ্জ ইজ এ ট্রেন্ড।’ এ ট্রেন্ডকে কাজ লাগাতে হবে। অর্থাৎ মার্কেট ফ্ল্যাকচুয়েশনকে শত্রু না ভেবে বন্ধু ভাবতে হবে। এখানেও ওয়ারেন বাফেট বলেছেন যে, ‘ফলি থেকে প্রফিট করতে জানতে হবে। ফলি মানে হচ্ছে ল্যাক অব ওয়ান্্স জাজমেন্ট বা একটা স্টুপিড মিসটেক।’ অর্থাৎ যেখানে বিনিয়োগকারী তার বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়ে এমন একটি ভুল করে বসেছে যা তার করা উচিত হয়নি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে বিনিয়োগের ওপর। এ বিনিয়োগ কিভাবে বাড়ানো যায় এবং একজন সফল বিনিয়োগকারী হতে হলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা হলো। (১) বিনিয়োগকারী চিন্তা-চেতনাকে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে ক্রমান্বয়ে, এক লাফে নয়। কেউ বিনিয়োগের মাধ্যমে এক রাতে ধনী হতে পারে না। যদি কেউ হয়ে থাকে তাহলে অচিরেই তার ধন-সম্পদ সে হারাবে নিঃসন্দেহে। তার বিনিয়াগ কখনও এক মাসে দ্বিগুণ হবে না এটা ধরে নিয়েই এগুতে হবে। ছোট অঙ্কের বিনিয়োগ দিয়ে শুরু করে মূলধন হারালেও তেমন বেদনা থাকবে না। (২) যে সেক্টরটি সম্পর্কে বিনিয়োগকারী জানেন না সে সেক্টরে কখনও বিনিয়োগ করা ঠিক নয়। কারণ সেক্টর সম্পর্কিত স্বচ্ছ ধারণার অভাব থাকলে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কেও আগে থেকে সচেতন হওয়া সম্ভব নয়। বিনিয়োগ করার আগে সেক্টর স্টাডি করতে হবে। এর পরও যদি বোঝা না যায় তাহলে ওই বিনিয়োগ স্কিপ করে যেতে হবে। সব ডিম একটি বাস্কেটে রাখা ঠিন নয়। অর্থাৎ সমুদয় অর্থ একটি মাত্র ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা সমীচীন নয়। তাহলে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। (৩) প্রচলিত ধারার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার দরকার নেই। যে সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যায় সেটার পেছনে ছুটে কোন লাভ নেই। ওটা গ্যাম্বিলিং, ওটা বিনিয়োগ নয়। সেই স্টক কেনা ঠিক নয় যেটার দরপতন ঘটেছে। যেটার দাম উর্ধগামী সেটাই কিনতে হবে, সেখানেই বিনিয়োগ করতে হবে এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কিন্তু কিভাবে? এক্সিট স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল অবলম্বন করে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর কোন এক্সট পলিসি থাকে না। পক্ষান্তরে একজন সফল বিনিয়োগকারীর একাধিক এক্সিট কৌশল থাকে। অনেকেই স্টক কিনেন কিন্তু সঠিক সময়ে বিক্রি করতে পারেন না। একজন সফল বিনিয়োগকারী দুটো বিষয়ের ওপর সমান গুরুত্ব দেন, (১) এ স্মার্ট এ্যান্ট্রি (২) এ স্মার্ট এক্সিট। ২। মনে সন্দেহ থাকলে সে সেক্টরে বিনিয়োগ না করাই যুক্তিযুক্ত। বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই গবেষণা করতে হবে। একজন উচ্চতর সফল বিনিয়োগকারীকে নিম্নোক্তভাবে বিনিয়োগ করতে হবে : (ক) বিনিয়োগকারীকে মুনাফা এবং ক্ষতি উভয় দায়িত্বই নিজেকে বহন করতে হবে। বিনিয়োগকারীর ফিন্যান্সিয়াল ডেসটিনি বিনিয়োগকারীকেই ঠিক করতে হবে। এই বিষয়টি ঠিক করতে গিয়ে তার দক্ষতা বাড়বে এবং বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হবে। (খ) একজন সফল বিনিয়োগকারীর ইন-ডেপ্থ অবজেকটিভ থাকবে। তার পরিষ্কার ও সুনির্ধারিত লক্ষ্য থাকবে। ভাসা ভাসা কোন গোল নয়, তাকে জানতে হবে কেন তিনি বিনিয়োগ করছেন। তিনি যদি উদ্দেশ্য জানেন তবে রিটার্নও অনুমান করতে পারবেন, এমনকি রিস্ক কতটুকু তাও আন্দাজ করতে পারবেন। (গ) একজন সফল বিনিয়োগকারী কখনও ঝুঁকি নিতে ভয় পায় না। সে প্রস্তুত থাকে। তার এক্সিট পলিসি থাকে। সে জানে তার ঝুঁকি হচ্ছে তার চ্যালেঞ্জ। লস হচ্ছে একজন ইনভেস্টরের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। লসটাকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে তিনি সম্ভাবনাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। (ঘ) একজন সফল বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকতে হবে। চার্লস ডি. এলিস তার ‘এলিমেন্টস অব ইনভেস্টিং’ বইয়ে লাইফ লং ইনভেস্টমেন্ট নীতিগুলো আলোচনা করতে গিয়ে ‘সিঙ্গেল মাইন্ডেড গোলের’ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন একজন ইনভেস্টরের আসল শত্রু হচ্ছে ভয় এবং লোভ। এই ভয় এবং লোভ তাকে সফল হতে দেয় না। এই ভয় এবং লোভের উর্ধে উঠতে পারলেই বিনিয়োগে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। ৩। বিনিয়োগকারীকে মার্কেট টাইপ বা বাজারের ধরন যাচাই করতে হবে। বর্তমান বাজার কি রকম এবং বিনিয়োগকারী তার কৌশলের সঙ্গে কিভাবে এক্সিসটিং বাজারের সমন্বয় করবেন সেটার ওপর নির্ভর করবে তার বিনিয়োগের সাফল্য। আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে কোন আইডিয়া মাথায় এলেই হুট করে বিনিয়োগ করা যাবে না। বিনিয়োগকারীকে আইডিয়াল সিচুয়েশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তার এ্যান্ট্রি রাখতে হবে সিম্পেল। একজন সফল ইনভেস্টর এ্যান্ট্রি সিম্পেল রাখে আর একজন এ্যামেচার ইনভেস্টর এ্যান্ট্রিটাকে ওভার কমপ্লিকেটেড/বড্ড জটিল করে ফেলে। আবার কখনও কখনও তাকে মাল্টিপল এক্সিট রাখতে হবে। এক্সিটের কোন কোন প্রেক্ষিত বিদ্যমান ওই সবই তার নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে। এর একটাই কারণ, আর তা হচ্ছে মুনাফা সর্বোচ্চকরণ। ৪। কোন্টা রিস্ক আর কোন্টা রিওয়ার্ড সে সম্পর্কে একজন বিনিয়োগকারীর পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। একটি প্রবাদ আছে ‘দি মোর ইউ লস, দি মোর ইউ মেইক মানি’ অর্থাৎ যত লোকসান, তত লাভ। তাকে ইনভেস্টিং সিস্টেম বার বার রিভিউ করতে হবে এবং মনিটর করতে হবে। সেলফ ইনভলবমেন্ট বা নিজের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর জন্য সেলফ ওয়ার্ক করতে হবে। অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে চলবে না। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন ‘টাকার চেয়ে জ্ঞানের ওপর বিনিয়োগ কর, অনেক বেশি লাভ পাওয়া যাবে।’ একজন সফল ইনভেস্টর জানেন তাকে কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে। এমনকি কখন তাকে সুইচ অফ করতে হবে অথবা আনপ্লাগ করতে হবে সেটা জানা তার জন্য সব থেকে জরুরী। ৫। বিনিয়োগকারীকে সব সময় প্রো-এ্যাকটিভ লার্নার হতে হবে, স্টাডি করতে হবে এবং মনটাকে উন্মুক্ত রাখতে হবে, যাতে সব ধরনের সিচুয়েশন/অবস্থা ও পারিপার্শ্বিকতা থেকে তিনি শিখতে পারেন। ওয়ারেন বাফেটের একটি কথা আছে ‘দি রিচ ইনভেস্ট ইন টাইম, দি পুওর ইনভেস্ট ইন মানি’ অর্থাৎ বড় বিনিয়োগ হচ্ছে সময় এবং ছোট বিনিয়োগ হচ্ছে টাকা বা অর্থ। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত এক্সিট কৌশল অবশ্যই তাকে রাখতে হবে, যা আগেই বলা হয়েছে। কারণ ভবিষ্যত তার অজানা সুতরাং তিনি প্রথমে তার এক্সিট প্ল্যান করবেন, এরপর তিনি বিনিয়োগে ঢুকবেন। তাকে সহনশীল ও ধৈর্যশীল হতে হবে এবং ধৈর্যের সঙ্গে প্রতিটি বিষয়ে হিসাব কষতে হবে। একজন সফল ইনভেস্টরের যেমন ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান থাকে ঠিক তেমনি ব্যাকআপ প্ল্যানও থাকে। তার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সব কিছুর আগে। লাভ-ক্ষতি নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া বা রিএ্যাকশন প্রকাশ করা থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে। তাকে দুটো ইমোশনাল ফ্যাক্টর-ফিয়ার এ্যান্ড গ্রিড- এ দুটোকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। ৬। একজন সফল বিনিয়োগকারী ‘ওয়েল ডিফাইন্ড ইনভেস্টমেন্ট স্টাডিজ’ থাকতে হবে। ‘রিস ড্যড’ বইয়ে যথার্থই বলা হয়েছে যে ‘এ উইনিং স্ট্র্যাটেজি মাস্ট ইনক্লুড লুজিং।’ প্রত্যেকের আলাদা কৌশল থাকবে এবং প্রত্যেকেই সেটার সঙ্গে লেগে থাকবে। ওয়ারেন বাফেট বলেছেন, পোর্টফলিও ডাইভারসিফিকেশন স্ট্র্যাটেজির কথা। তিনি বলেছেন, ‘ডাইভারসিফিকেশন ইজ এ প্রোটেকশন এ্যাগেইনস্ট ইগনোরেন্স, ইট মেইকস ভেরি লিটল সেন্স টু দোজ হু নো হোয়াট দে আর ডুয়িং।’ অর্থাৎ তিনি বিনিয়োগ বহুমুখী কৌশলের কথা বলেছেন। পরিবর্তন বা কৌশল বদল হচ্ছে অজ্ঞতাকে প্রতিরোধ করা। তাই তিনি পোর্টফলিও ফোকাস কৌশলের কথা বার বার বলেছেন। বিনিয়োগ করার পূর্বে বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত জরুরী। ৭। একজন সফল বিনিয়োগকারীকে ওয়েল ফোকাসড হতে হবে অর্থাৎ একটি লাইনে স্থির থাকতে হবে। এন্ড্রু কার্নেগি তাই যথার্থই বলেছেন যে, ‘দি মেন হু হ্যাভ সাকসিডেড আর মেন হু হ্যাভ চুজেন ওয়ান লাইন এ্যান্ড স্টাক টু ইট।’ যার বিনিয়োগের ক্ষেত্র তাকেই ফোকাস করতে হবে। তাকে সুবিধাজনকভাবে ট্রেন্ড ইউজ করতে হবে। এ ট্রেন্ড হচ্ছে পরিবর্তনের ¯্রােতধারা। কথায় বলে ‘দ্য স্পিড অব চেঞ্জ ইজ এ ট্রেন্ড।’ এ ট্রেন্ডকে কাজ লাগাতে হবে। অর্থাৎ মার্কেট ফ্ল্যাকচুয়েশনকে শত্রু না ভেবে বন্ধু ভাবতে হবে। এখানেও ওয়ারেন বাফেট বলেছেন যে, ‘ফলি থেকে প্রফিট করতে জানতে হবে। ফলি মানে হচ্ছে ল্যাক অব ওয়ান্্স জাজমেন্ট বা একটা স্টুপিড মিসটেক।’ অর্থাৎ যেখানে বিনিয়োগকারী তার বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়ে এমন একটি ভুল করে বসেছে যা তার করা উচিত হয়নি। ৮। বিনিয়োগকারীকে পারসিসটেন্ট বা অধ্যবসায়ী হতে হবে। হেনরি ফোর্ড বলেছেন, ‘হোয়েন এভরিথিং সিমস টু বি গোয়িং এগেইনস্ট ইউ, রিমেম্বার দ্যাট এয়ারপ্লেন টেইকস্্ অব এগেইনস্ট দি উইন্ড, নট উইথ ইট।’ অর্থাৎ যখন মনে হবে যে সব কিছু তার প্রতিকূলে যাচ্ছে, তখন মনে রাখতে হবে যে বিমান বাতাসের উল্টো দিকে যাচ্ছে, বাতাসের দিকে নয়। আর এভাবেই লেগে থাকতে হবে, অন্যথায় অধ্যবসায়ী হওয়া যাবে না। এমন অনেকেই আছেন যাদের সাফল্য দরজায় কড়া নাড়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে অস্থির হয়ে ধৈর্য হারিয়ে বিনিয়োগের পটপরিবর্তন করে ফেলেন কিংবা বিনিয়োগ বন্ধ করে দেন। ৯। বিনিয়োগকারীকে রিস্ক নিতে জানতে হবে। রিস্ক আসলে কি? শুধুই ঝুঁকি? ওয়ারেন বাফেটের মতে ‘রিস্ক কামস ফরম নট নোইং হোয়াট ইউ আর ডুয়িং।’ অর্থাৎ যেটা বিনিয়োগকারী জানে না বা জানতে পারে না সেটাই বিনিয়োগের রিস্ক বা ঝুঁকি। এ জন্য বাফেট বিনিয়োগে স্ট্রং রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের কথা বলেছেন। বিনিয়োগকারীকে লিভারেজ ইউজ করতে জানতে হবে। ওয়ারেন বাফেটও গতানুগতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পার্থক্য এখানেই যে ওয়ারেন বাফেট জানেন হাউ টু মেইক মানি উইথ আদার পিপলস মানি, কিন্তু গতানুগতিক বিনিয়োগকারীরা শুধু নিজের টাকাই ইনভেস্ট করে। তাই সেকেন্ড মোস্ট ইমপরট্যান্ট ইনভেস্টিং এ্যালিমেন্ট হলো লিভারেজ অর্থাৎ লিভারেজই হচ্ছে বিনিয়োগকারীর নিকট সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের দ্বিতীয় প্রধান উপাদান। বলে দেবে না কি করতে হবে, কিভাবে করতে হবে। এক্ষেত্রে নো টিচার, নো বস। অর্থাৎ তার কোন শিক্ষক নেই। লং টার্ম গেইনের জন্য তার শর্ট টাম পেইন সহ্য করতে হবে। তা না হলে তিনি ইনভেস্টর হতে পারবেন না। মোদ্দা কথা তার একজন সফল ইনভেস্টর হওয়ার জন্য তার মধ্যে অনেক বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে লালন করতে হবে। পিটার লাইন্স, যাকে লেজেন্ডারি মানি ম্যানেজার বলা হয় তিনি বলেছেন বিনিয়োগ করতে গিয়ে স্টককে লটারির টিকেট মনে করলে চলবে না। প্রত্যেকটি স্টকের পেছনে রয়েছে এক একটি কোম্পানি। তিনি তার বই ‘বিটিং দি স্ট্রিট’-এ লিখেছেন কিভাবে কোম্পানি এক্সপার্ট হওয়া যায় এবং কিভাবে একজন বিনিয়োগকারী লাভজনক পোর্টফলিও তৈরি করতে পারেন এবং সেটা করতে হবে তার অভিজ্ঞতা, দূরদৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টি কাজে লাগিয়ে। বিনিয়োগের জন্য শুধু বুদ্ধি থাকলে চলবে না, বুদ্ধির সঙ্গে প্রজ্ঞার দরকার। প্রজ্ঞা হচ্ছে অন্তর্দৃষ্টি+দূরদৃষ্টি। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখি যে, ওয়ারেন বাফেট ছিলেন একজন পেপার বিক্রেতা। আজ তিনি ৮৫ বছর বয়স্ক একজন সফল ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী। শৈশবে গলফের মাঠ থেকে হারিয়ে যাওয়া বল কুড়িয়ে বিক্রি করতেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি বোনের সঙ্গে স্টক মার্কেটে বিচরণ করতে থাকেন। তিনি গ্রাজুয়েশন করার সঙ্গে সঙ্গে ৪০ একর জমি কিনে ফেললেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি অর্থনীতিবিদ বেঞ্জামিন গ্রাহামের থিওরির খুব ভক্ত ছিলেন। তার বিখ্যাত বই ‘দি ইন্টেলিজেন্ট ইনভেস্টর’ এক মিলিয়ন কপি বাজারের বিক্রি হয়েছে। ফিলিপ ফিশার যিনি একজন লেখক ও ইনভেস্টর তিনি ওয়ারেন বাফেটের পেছনে থেকে সব সময় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। একজন বিনিয়োগকারীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেপথ্যে উৎসাহদানকারী চালিকাশক্তি হিসেবে একজনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। না থাকলেও ক্ষতি নেই যদি বিনিয়োগ সম্পর্কে নিজস্ব প্রজ্ঞা কাজে লাগানো যায়। একজন ইনভেস্টর একজন খ্যাতিমান এ্যাথলেটের মতো। তাকে ভিজুয়ালাইজ করতে হবে ইনভেস্ট করার আগেই। মেডিটেশন করে মনকে শান্ত রাখতে হবে। আত্মনিমগ্ন হতে হবে ইমোশনকে কন্ট্রোল করার জন্য এবং নির্ভরযোগ্য বিশ্বাসী কারোর সঙ্গে বিনিয়োগের বিষয়টি আলোচনা করতে হবে। ইন্টারনালাইজ করা যাবে না। নেতিবাচক হওয়া যাবে না। নেতিবাচকতা থেকে বেরিয়ে এসে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সব কিছু বিবেচনা করতে হবে। তার শরীর এবং মনকে একীভূত করতে হবে। এটা হচ্ছে একটি ‘ডিপ কানেকশন বিটুইন দ্য পারফরমেন্স অব দ্য মাইন্ড এ্যান্ড দ্য হেলথ অব দি বডি।’ শরীর রিলাক্স বা শিথিল হলে মনও রিলাক্স বা শিথিল হবে। তখন তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত অপহিরার্য। সবশেষে বলা যায় যে ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া হচ্ছে অপরিহার্য যেটাকে ইতোপূর্বে ‘ফলি’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আসলে কেবলমাত্র যারা ঘুমিয়ে থাকে মরা নদীর মতো অচল হয়ে অথবা বদ্ধ জলাশয়ের মতো স্থবির হয়ে, তারাই কোন ভুল করে না। অর্থাৎ তাদের কোন ভুল হয় না। কারণ তারা তো জীবিত থেকেও মৃত ও স্থবির। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি ভুল হচ্ছে একজন বিনিয়োগকারীর জন্য সবচেয়ে বেশি শিক্ষণীয় এবং বিবেচ্য বিষয়। লেখক : এনডিসি, অতিরিক্ত সচিব ও প্রাক্তন নির্বাহী সদস্য, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ---------- কৈফিয়ত ---------- গত ১৯ নবেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠের অর্থনীতি পাতায় প্রকাশিত ‘অনিশ্চিত বাজারে বিনিয়োগের ফর্মুলা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে শিরোনাম এবং প্রতিবেদনের শুরুর চারটি লাইন লেখক সালমা নাসরীনের (অতিরিক্ত সচিব) নয়। লেখকের মতে শিরোনামের পরিবর্তন এবং প্রথম চারটি লাইনের কারণে লেখাটি মূল ভাবধারা থেকে সরে গেছে। তাই মূল লেখাটি ছাপা হলো। অনাকাক্সিক্ষত এ ভুলের জন্য আন্তরিক দুঃখিত।বি.স
×