ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্প্যানিশ লা লিগা ॥ রিয়াল মাদ্রিদ ০-৩ বার্সিলোনা

রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে বার্সিলোনার উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে বার্সিলোনার উৎসব

জিএম. মোস্তফা ॥ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে উৎসব করেছে বার্সিলোনা। মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোয় দুর্দান্ত খেলে কাতালান জায়ান্টরা ৩-০ গোলে রীতিমতো উড়িয়েই দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদকে। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে টানা তিনটি এ্যাওয়ে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়লো মেসি-ইনিয়েস্তারা। শুধু তাই নয়, এই জয়ে স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা পুনরুদ্ধারেও অনেকদূর এগিয়ে গেল আর্নেস্তো ভালভার্দের দল। মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো। আর ২০১৭ সালের শেষ ম্যাচ। তাও আবার বড়দিনের ঠিক দুইদিন আগে। যে কারণেই এল ক্লাসিকো নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের মাত্রাটা ছিল একটু বেশি। এশিয়ার সমর্থকদের টানতে স্থানীয় সময় মধ্য দুপুরে এল ক্লাসিকোর আয়োজন করে লা লিগার কর্তৃপক্ষ। তবে স্বাগতিক সমর্থকদের অনুপ্রেরণায় ম্যাচের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকে জিনেদিন জিদানের দল। প্রথমার্ধের তিন মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আসে রিয়ালের। অফসাইডের কারণে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর গোল বাতিল করে দেন রেফারি। ৯ মিনিটে আবারও সুযোগ পায় স্বাগিতকরা। সেই সুযোগ অবশ্য কাজে লাগাতে পারেননি সি আর সেভেন। তবে লড়াই চালিয়ে যায় বার্সিলোনাও। স্বাগতিক দলের হয়ে লুকা মদ্রিচ, করিম বেনজেমা আর রোনাল্ডো একের পর এক আক্রমণে নাজেহাল করে ফেলেন সফরকারীদের। অন্যদিকে ছাড় দেয়নি বার্সাও। সফরকারীদের হয়ে প্রথমার্ধেই আলো ছড়ান লুইস সুয়ারেজ ও পলিনহো। সেই তুলনায় প্রথমার্ধে দেখা যায়নি মেসির ঝলক। বরং ৪৩ মিনিটে করিম বেনজেমার দুর্দান্ত শট পোস্টে না লাগলে প্রথমার্ধেই এগিয়ে যেতে পারত রিয়াল। বেনজেমা মিস করায় গোলশূন্য ড্রয়েই প্রথমার্ধ শেষ হয়। বল দখলের লড়াইয়ে প্রথমার্ধে সমানে সমান ছিল দুই দল। রিয়াল মাদ্রিদ ৫২ ভাগ আর বার্সিলোনা ৪৮। কিন্তু ৯টি শট নেয় রোনাল্ডো-বেনজেমারা। অন্যদিকে সফরকারীরা শট নেয় মাত্র চারটি। প্রথমার্ধে কিছুটা নিষ্প্রভ থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই জ্বলে ওঠে বার্সিলোনা। ৫৪ মিনিটে দারুণ এক গোলে সফরকারী সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসান লুইস সুয়ারেজ। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে সুয়ারেজের এটা পঞ্চম গোল। লা লিগার ইতিহাসে তার অভিষেকের পর থেকে অন্য যে কোন খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড গড়েন এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। সফরকারীদের বিপক্ষে গোল হজম করেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন জিদানের শিষ্যরা। ৬৩ মিনিটে দানি কারভাজাল হাতে বল ধরে নিশ্চিত গোলের হাত থেকে রক্ষা করেন রিয়ালকে। তবে রেফারির চোখ এড়াতে পারেননি তিনি। যে কারণেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান ম্যাচ রেফারি। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে মোটেও ভুল করেননি লিওনেল মেসি। সেই সঙ্গে লা লিগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৭ গোলের রেকর্ড গড়েন বার্সিলোনার এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। শুধু তাই নয়, লা লিগার ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১০ মৌসুমে ১৫ কিংবা তারও বেশি গোলের রেকর্ড গড়েন এলএম টেন। তবে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েননি জিনেদিন জিদান। দশজনের দল নিয়েও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন রিয়ালের এই ফরাসী কোচ। যে কারণেই কাসেমিরো এবং মাতেও কোভাসিচের বদলে গ্যারেথ বেল এবং মার্কো এসেনসিওকে মাঠে নামিয়ে আক্রমণভাগকে আরও ধারালো করেন জিদান। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। বেল-রোনাল্ডোরা কিছু আক্রমণ করলেও সেগুলোকে দারুণভাবে রুখে দেন কাতালানদের জার্মান গোলরক্ষক মার্কো আন্দ্রে টার স্টেগান। ম্যাচের বয়স যখন ৯৩ মিনিট তখন বদলি হিসেবে মাঠে নেমে মেসির ২০০তম এ্যাসিস্টের সৌজন্যে রিয়ালের জালে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন এ্যালেক্সিস ভিদাল। এর ফলে ৩-০ গোলের একপেশে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়লো আর্নেস্তো ভালভার্দের দল। শুধু তাই নয়, লীগের শিরোপা পুনরুদ্ধারেও অনেকদূর এগিয়ে গেল তারা। কেননা ইতোমধ্যেই যে রিয়ালের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট এগিয়ে গেছে মেসি-ইনিয়েস্তারা। মৌসুমের প্রথম ১৭ ম্যাচ থেকে বার্সিলোনার সংগ্রহে ৪৫ পয়েন্ট। অবস্থান যথারীতি শীর্ষে। আর রিয়াল মাদ্রিদের দখলে মাত্র ৩১। অবস্থান চারে। যদিওবা কাতালানদের চেয়ে একটি ম্যাচ কম খেলেছে জিনেদিন জিদানের দল। অথচ গত মৌসুমটা স্বপ্নে মোড়ানো ছিল রিয়াল মাদ্রিদের। স্প্যানিশ লা লিগা পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের যুগে প্রথম দল হিসেবে টানা দুইবার ইউরোপ সেরার মুকুট পরে জিদানের শিষ্যরা। সম্প্রতি ক্লাব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে একই বর্ষপঞ্জিকায় পাঁচ শিরোপা জয়েরও রেকর্ড গড়ে রিয়াল।
×