ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফার্নেস অয়েল আমদানির অনুমতি চায় বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তারা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

ফার্নেস অয়েল আমদানির অনুমতি চায় বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী বিদ্যুত উৎপাদনকারীদের মতো হেভি ফার্নেস অয়েল (এইচএফও) সরাসরি আমদানি করতে চায় বস্ত্রশিল্প উদ্যোক্তারা। আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় দেশীয় বাজারে ফার্নেস তেলের দাম বেশি হওয়ায় সম্প্রতি সরকারের কাছে এক আবেদনে এমন দাবি জাননো হয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) বাইরে কেবলমাত্র বিদ্যুত উৎপাদনকারীরা জ্বালানি তেল আমদানি করে। বস্ত্রশিল্প মালিকরা বলছেন, গ্যাসের ঘাটতির কারণে ক্যাপটিভ বিদ্যুত উৎপাদনে ফার্নেস অয়েলের ব্যবহার বাড়ছে। ফার্নেস অয়েল বিপিসির কাছ থেকে কিনতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। যা রফতানিমুখী শিল্পে সঙ্কট তৈরি করছে। বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সরকারের কাছে দেয়া আবেদনে বলছে টেক্সটাইল মিলগুলো বিপিসির কাছ থেকে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল ৪২ টাকায় কিনছে। এতে তাদের ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় পড়ছে ১১ টাকা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস অয়েলের দাম অনেক কম। সরাসরি ফার্নেস অয়েল আমদানি করে বিদ্যুত উৎপাদন করলে প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে সাড়ে ছয় টাকা। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি। এর বাইরে বর্তমানে প্রায় দেড় ডজন বেসরকারী বিদ্যুতকেন্দ্রের উদ্যোক্তা সরকারের অনুমোদন নিয়ে নিজেরাই প্রয়োজনীয় ফার্নেস অয়েল আমদানি করছেন। ফলে সরকারী কেন্দ্রের তুলনায় আইপিপি ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কম হচ্ছে। ১২ নবেম্বরের এ পত্রে বিটিএমএ সভাপতি তপন চৌধুরী জানিয়েছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে ঘাটতির কারণে বস্ত্র কারখানাগুলোতে নিজস্ব জেনারেটর বসানো হয়েছিল। এসব জেনারেটরে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহৃত হয়। প্রথমে সাশ্রয়ী হলেও দুবছরে কয়েক দফায় প্রায় ২২২ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ায় টেক্সটাইল মিলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস সঙ্কট। ফলে অনেক কারখানা গ্যাসের পরিবর্তে ফার্নেস অয়েলে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা বিপিসি করে থাকে। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষ বিপিসি বেসরকারী বিদ্যুত উৎপাদনকারীদের তেল আনার অনুমতি দিয়েছে। বস্ত্র কারখানার মালিকরাও বিপিসির কাছে আবেদন করতে পারেন। বিপিসি খতিয়ে দেখবে বস্ত্রখাতে ফার্নেস অয়েল আমদানির অনুমোদন দেয়া যৌক্তিক হবে কি না। বর্তমানে দেশে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে। এদের অধিকাংশই তিতাস গ্যাসের গ্রাহক। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ৭০ শতাংশ গ্যাস ঢাকা, গাজীপুর, টঙ্গী, সাভারের অবস্থিত বস্ত্র কারখানাগুলোতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলের কারখানাগুলো ভয়াবহ গ্যাস সঙ্কটে পতিত হয়েছে। সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এখানে ২৮০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে তারা প্রতিদিন ১৬৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছেন। ঘাটতির কারণে সাভার-গাজীপুরের শিল্প কারখানাগুলোতে মানসম্মত গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। আগামী বছর এলএনজির আমদানি শুরু হলে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। গত ১৬ নবেম্বর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী নিজের সুপারিশসহ পত্রটি বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, শতভাগ রফতানিমুখী শিল্পকে কাঁচামাল আমদানির জন্য কোন ট্যাক্স দিতে হয় না। জ্বালানিও একটি কাঁচামাল এ যুক্তিতে বিটিএমএর আবেদনটি বিবেচনা করার জন্য সরকারের উর্ধতন মহলে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
×