ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মেজর জিয়া সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করেছে ঢাকা ও কলকাতা পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

মেজর জিয়া সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করেছে ঢাকা ও কলকাতা পুলিশ

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের ব্লগার খুনের সঙ্গে জড়িত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এবং বর্তমানে জঙ্গী সংগঠনটির সামরিক কমান্ডের নেতৃত্বে আছেন সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া তার তৎপরতা সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করেছে কলকাতা ও ঢাকার গোয়েন্দারা। জঙ্গী নেতা মেজর জিয়ার নির্দেশেই জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা বর্তমানে ব্লগার হত্যাকা- বন্ধ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং সীমান্ত অতিক্রম করে কলকাতায় গিয়ে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, কলকাতার পুলিশ (এসটিএফ) জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সম্পর্কে যেসব তথ্য পেয়েছে সেই সম্পর্কে ঢাকার কাছে তথ্য দিয়ে জঙ্গী তৎপরতার বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে। কলকাতা পুলিশ (এসটিএফ) গত ২১ নবেম্বর কলকাতা স্টেশন থেকে সামশাদ মিয়াঁ ওরফে তনবির ও রিয়াজুল ইসলাম ওরফে সুমন নামে দুই বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশের দুর্ধর্র্ষ জঙ্গী তামিম ওরফে মুন ওরফে স্বপন ও নয়ন গাজী ওরফে সাইফুল গাজী ও মাহির নাম পাওয়া গেছে। কলকাতা পুলিশের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে এসব জঙ্গীরা বাংলাদেশের ব্লগার খুনের সঙ্গে জড়িত এবং তারা জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগদানের আগে তারা জঙ্গী সংগঠন জেএমবি বা নব্য জেএমবিতেও সক্রিয় ছিল। কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া এবং মোস্ট ওয়ান্টেড আনসারুল্লা বাংলা টিমের জঙ্গীদের বিষয়ে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবারও আলোচনার পাদপ্রদীপের সামনে চলে এসেছে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, কলকাতার স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) গত ২১ নবেম্বর কলকাতা স্টেশন থেকে সামশাদ মিয়াঁ ওরফে তনবির ও রিয়াজুল ইসলাম ওরফে সুমন নামে দুই বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়েছে। গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শিয়ালদহ থেকে গ্রেফতার করা হয় শাহাদাত হোসেন নামে ভারতীয় আরও একজনকে। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জিয়ারুল ওরফে মনোতোষ দে ওরফে শ্যামল দে নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ী। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশের জঙ্গী মাহি, তামিম ও নয়নগাজী সম্পর্কে তথ্য পায় কলকাতার পুলিশ। তবে ঢাকার পুলিশের কাছে কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গী সামশাদ মিয়াঁ ওরফে তনবির ও রিয়াজুল ইসলাম এবং গ্রেফতারের বাইরে মাহি, তামিম ও নয়ন গাজী সম্পর্কে তেমন বিশদ কোন তথ্য নেই বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যে তথ্য বিনিময় হয়েছে তাতে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মধ্যে দুই ধরনের জঙ্গীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। হত্যাকা-ের টার্গেট অনুসরণকারীকে বলা হয় ইন্টেল গ্রুপ এবং হত্যাকা-ে যে সব জঙ্গী অংশ নিবে তাদেরকে বলা হয় আশকারি সদস্য। এবিটির জঙ্গী সংগঠনের এই দুই গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন অপর গ্রুপ যারা সুরা সদস্য। বর্তমানে জঙ্গী সংগঠনটির সামরিক কমান্ডের নেতৃত্বে আছেন সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে ব্লগার খুনের ঘটনা সংগঠিত হয়। ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেয়া এবিটির জঙ্গী পুরস্কার ঘোষিত আরাফাতকে গ্রেফতারেরা পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ধরনের তথ্য পেয়েছে ঢাকার পুলিশও। ঢাকার পুলিশ যে সব তথ্য পেয়েছে তা কলকাতার পুলিশের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করেছে বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) এর যেসব সদস্য গ্রেফতার হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জঙ্গী সংগঠনটির সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পেয়েছেন তদন্তকারী গোয়েন্দারা। জঙ্গী সংগঠনটির বড় ভাই মেজর জিয়ার নির্দেশে ব্লগার হত্যাকান্ডে অংশ নিয়েছিল। হত্যাকান্ডে পর সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার পর গ্রেফতার অভিযান চলছে।
×