ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই লাখ টাকা জরিমানাতেই সমস্যার সমাধান

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

দুই লাখ টাকা জরিমানাতেই সমস্যার সমাধান

আজাদ সুলায়মান ॥ বার বার তাগিদ দেয়া হচ্ছিল ট্রানজিট যাত্রীদের লাগেজ ডেলিভারি স্বাভাবিক করার। কিন্তু সেটা আমলে নেয়নি মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স। শেষ পর্যন্ত আঙ্গুল বাঁকা করলেন বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ। এক যাত্রীর লাগেজ না আসায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন এয়ারলাইন্সকে। তাতেই কাজ হয়েছে। এখন লাগেজ ডেলিভারি স্বাভাবিক হয়েছে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের। গত ৫ দিনে লাগেজ না আসার কোন অভিযোগ কেউ করেনি। অথচ গত ছয় মাস ধরেই লাগেজ না আসাটাই ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে অস্ট্র্রেলিয়া থেকে এক দম্পতি মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে ঢাকায় আসেন। যথারীতি তারা ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে কনভয় বেল্টের কাছে লাগেজের জন্য অপেক্ষা করেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পরও তিনি লাগেজ পাননি। এ সময় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে লাগেজ না আসার কারণ জানতে চান এয়ারলাইন্সের কাছে। জানতে পারেন এটা নিত্যদিনের ঘটনা। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকে ট্রানজিট যাত্রীরা সময়মতো ঢাকায় আসতে পারলেও অধিকাংশ সময়েই যাত্রীদের লাগেজ আসেনা। যাত্রী আসার দু’তিন দিন পর অন্য ফ্লাইটে লাগেজ আসে। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। জানা যায়, এ ধরনের অভিযোগ জানতে পেরে ওই দম্পতি বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করে লাগেজ ফেলে রেখেই বাসার উদ্দেশে শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এ বিষয়টি তাৎক্ষণিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নজরে আসে। তিনি তাৎক্ষণিক মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুর আজিজকে তলব করেন। জানতে চান বার বার তাগিদ দেয়ার পরও কেন ট্রানজিট যাত্রীদের লাগেজ লেফট বিহাইন্ড হচ্ছে (যাত্রীর সঙ্গে লাগেজ না আসা)। এ অভিযোগ কোন যুক্তি দিয়ে খ-াতে ব্যর্থ হন আব্দুুর আজিজ। এতে বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ তাৎক্ষণিক দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন ওই এয়ারলাইন্সকে। এ সময় সেখানে উপস্থিত থাকা এ প্রতিনিধি জানতে পারেন, গত ৫-৬ মাস ধরে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের যেসব যাত্রী অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কুয়ালালামপুরে ট্রানজিট হয়ে বাংলাদেশে আসছেন তাদের লাগেজ সেখানেই থেকে যাচ্ছে। যাত্রী আসার দুতিন দিন পর সেই লাগেজ আসে। এ লাগেজ সংগ্রহ করতে গিয়ে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। বিশেষ করে অস্ট্র্রেলিয়া ও জাপান থেকে আগত অধিকাংশ যাত্রীকে এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়। তাদের ফ্লাইট কুয়ালালামপুরে বদল হবার সময় লাগেজ সেখানেই ফেলে রাখা হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরে আসা প্রতিটি ফ্লাইটেই লাগেজ না আসার অভিযোগ পাওয়া যেত। এ জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বার বার মালয়েশিয়া এয়ারের কর্মকর্তাকে তলব করে বিষয়টি তদারকি করে লাগেজ নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি ঘটেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ জনকণ্ঠকে বলেন, মূলত ট্রানজিট যাত্রীদের বেলায় লেফট বিহাইন্ড লাগেজ নিয়ে সমস্যা হতো। আবার কুয়ালালামপুর থেকে সরাসরি ঢাকায় আসার কোন ফ্লাইটে লাগেজ না আসার ঘটনা ঘটছেনা। তাতে প্রমাণ হয় এটা কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ যারা করছে তাদের গাফিলতি। এ গাফিলতির জন্য লাগেজ না আসায় যাত্রীকে তাৎক্ষণিক একটা জরিমানা দিতে হয় যাতে লাগেজে থাকা ব্যবহারিক বস্তু কিনে প্রয়োজন মেটানো যায়। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত না করায় শেষ পর্যন্ত একজন যাত্রীর লাগেজ না আসায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি জানান, এ জরিমানার পর পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। জরিমানা আদায়ের পর ট্রানজিট যাত্রীদের লাগেজ এখন একসঙ্গেই ঠিকমতো আসছে। গত ক’দিনে এ নিয়ে আর কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এদিকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি সূত্র জানায়, ঢাকায় লাগেজ ডেলিভারি ঠিক মতো করতে না পারায় দুই লাখ টাকা জরিমানার বিষয়টি কুয়ালালামপুরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এ খবরে সেখানকার গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এরপর থেকে আর কোন ট্রানজিট যাত্রীর লাগেজ লেফট বিহাইন্ড হয়নি। সবার লাগেজই এখন ঠিকমতো আসছে।
×