ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পর্যবেক্ষণ

দেশের ইতিহাসে রসিক নির্বাচন সেরা স্থানীয় নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

দেশের ইতিহাসে রসিক নির্বাচন সেরা স্থানীয় নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দেশের ইতিহাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মধ্যে সেরা বলে মনে করছে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ-ইডব্লিউজি। তাদের মতে, সামগ্রিকভাবে এই নির্বাচন যেমন শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য, তেমনি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও প্রশংসার। নির্বাচনী প্রশাসনকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে যথাযথ দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে। ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। এছাড়া তারা জানান, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৯৩.৬, বিএনপির ৯৫.১ এবং জাতীয় পার্টির ৯২.৯ ভাগ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন। কোন ভোট কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করতে হয়নি। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার মধ্যে ইডব্লিউজি অন্যতম। নির্বাচনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে শনিবার তারা জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই অভিমত তুলে ধরেন। সংগঠনটির পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কোন ধরনের সহিংসতা ও নির্বাচনী অনিয়ম ছাড়াই উৎসব-আমেজে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচন ছিল সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য। ভোটাররাও ভয়ভীতির উর্ধে থেকে সুশৃঙ্খলভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সিটি কর্পোরেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো রংপুরে ভোট গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও এবারই প্রথম দলীয় ভিত্তিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ৯৮ হাজার ৮৯ ভোটের ব্যবধানে সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। ভোট গ্রহণের শুরু থেকেই বিএনপি কারচুপির অভিযোগ করে আসছে। তবে পর্যবেক্ষণ সংস্থার এই পর্যবেক্ষণ বিএনপির অভিযোগকে একেবারে ভুলপ্রমাণ করে দিয়েছে। বিএনপি অভিযোগ করেছে ভোট কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। অথচ ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষণ বলছে মোট ১৯৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২৬টি ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণে ৯৩ দশমিক ৬ ভাগ ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট, ৯৫ দশমিক ১ ভাগ কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ও ৯২ দশমিক ৯ ভাগ কেন্দ্রে জাতীয় পার্টি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিলেন। ভোট গণনা চলাকালে কোন প্রকার সহিংসতা দেখা যায়নি। কোন ভোট কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়নি। কোন পোলিং এজেন্টের পক্ষ থেকে কোন প্রকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার শতকরা ৭০ ভাগ। কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় ৮১ শতাংশ ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সকালের দিকে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। আব্দুল আলীম বলেন, ২০১৩ সালে আমরা বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহীর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। এরপর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। কুমিল্লায়ও আমরা ১২টির মতো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছি। কিন্তু, রংপুরে আমরা তেমন কিছুই পাইনি। তাই এই নির্বাচনকে আমরা সেরা স্থানীয় নির্বাচন বলতে পারি। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল আলাদা প্রতিষ্ঠান। দলগুলো তাদের দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে পারে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করবে জনগণ। তিনি বলেন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার পূর্বে জনগণকে ইভিএম সম্পর্কে আরও জানাতে হবে। আমি দেখেছি রংপুর সরকারী বেগম রোকেয়া কলেজে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে কোন প্রকার গাফিলতি ছিল না। দুই বার সমস্যা দেখা দিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তার সমাধান করা হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১৩ মিনিটের মধ্যে ফল পাওয়া গেছে। তবে এই যন্ত্রের সঙ্গে ভোটারদের আরও পরিচিত করে তোলার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি। আব্দুল আলীম বলেন, একটি মাত্র ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল, স্বল্প সময়ের জন্য যন্ত্র ‘হ্যাং’ হওয়া ছাড়া বড় কোন বিচ্যুতি চোখে পড়েনি। তবে ভোটারদের কাছে ইভিএম এখনও আস্থার জায়গায় পৌঁছেনি। তাই পরামর্শ হবে ভোটারদের সচেতন করে এই প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণে আস্থা অর্জন করে নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে ইডব্লিউজির সদস্য আব্দুল আউয়াল ও হারুন-অর-রশীদ এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া উপস্থিত ছিলেন।
×