ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শৌখিন সংগ্রাহকদের কয়েন ও নোটের প্রদর্শনী

মুদ্রার পিঠে দেশ-কাল,ইতিহাসের স্মারক মুগ্ধ চোখে দেখা

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

মুদ্রার পিঠে দেশ-কাল,ইতিহাসের স্মারক মুগ্ধ চোখে দেখা

মোরসালিন মিজান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুদ্রা। বহু কালের পুরনো নোট। যুগের অবসান হয়েছে। কালের গর্বে হারিয়েছে সময়। কিন্তু সেই কাল সেই যুগের স্মৃতি এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে সোনা রূপা পিতলের মুদ্রা। দুর্লভ মুদ্রা এখন ইতিহাসের অমূল্য স্মারক। শৌখিন সংগ্রাহকরা এসব মুদ্রা বা নোট খুঁজে নেন। আগলে রাখেন। কার কেমন সংগ্রহ সব সময় তা দেখা যায় না। শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত প্রদর্শনীটি তাই বেশ কৌতূহলের জন্ম দিয়েছিল। জাতীয় চিত্রশালা প্লাজার ভাস্কর্য গ্যালারিতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ নিউমিসম্যাটিক কালেক্টরস সোসাইটি। তিন দিনব্যাপী বৃহস্পতিবার শুরু হয়। শেষ হয়েছে শনিবার। চমৎকার আয়োজনের প্রতিদিনই ছিল জমজমাট। সবাই দারুণ উপভোগ করেছেন। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন ২১ জন সংগ্রাহক। এদের ৭ জন আবার কিশোর-কিশোরী। প্রত্যেকেরই বহুবিধ সংগ্রহ। তবে একেকজন একেক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কয়েন ও নোট সাজান। নানা আঙ্গিক থেকে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। সহস্রাধিক মুদ্রা ও নোটের গায়ে জ্বলজ্বল করে ইতিহাস। সমাপনী দিন গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, কৌতূহলী মানুষের সরব উপস্থিতি। রীতিমতো ভিড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। গ্যালারির চার পাশের দেয়াল ছুঁয়ে ছিল কয়েনের বাক্স। সুটকেসের মতো তালাবদ্ধ বাক্সের উপরিভাগে স্বচ্ছ কাঁচ। কাঁচের ওপর ঝুঁকে ছিলেন দর্শনার্থীরা। সংগ্রাহকরা নিজেদের কয়েনের ইতিহাস তুলে ধরছিলেন। প্রশ্নের উত্তরে দিচ্ছিলেন নানা তথ্য। এ কাজে তাদের যে আগ্রহ, সেটিও দেখার মতো ছিল। রবিউল ইসলাম নামের এক সংগ্রাহক ভীষণ তৃপ্তি নিয়ে নিজের সংগ্রহ দেখাচ্ছিলেন। চোখমুখে তার আনন্দের ঝিলিক। কারণও ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেকগুলো দুর্লভ নোট সংগ্রহ করেছেন তিনি। সাম্প্রতিক সংগ্রহ বলা চলে। তবে নোটগুলোর গায়ে যেসব নাম্বার লেখা রয়েছে, দেখলে চমকিত হতে হয়। কিছু নোট একেবারেই প্রথম সিরিয়ালের। এ ক্ষেত্রে নাম্বারটি হয় এরকম ০০০০০০১। প্রথম সিরিয়ালের বিভিন্ন মূল্যমানের নোটে একই নাম্বার। দেখে অবাক হতে হয়। সিরিয়ালের একেবারে শেষের দিকের নোটগুলোও সংগ্রহ করেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে নাম্বারটি হয় এরকম ১০০০০০০। কিছু নোটের গায়ে সলিড নাম্বার। ক্রমিক অনুযায়ী সাজানো। ৫০০ টাকার ৯টি নোট পাশাপাশি রাখা হয়েছিল। দেখা গেল প্রথমটির গায়ের নাম্বার ১১১১১১১। সমমূল্যমানের পরের নোটটির গায়ে লেখা রয়েছে ২২২২২২২। একই নিয়মে শেষ নোটটির নাম্বার ৯৯৯৯৯৯৯। জহির হাসানের শোকেসে ছিল একই মূল্যমানের একাধিক নোট। বিভিন্ন সময় ছাপা হওয়া নোট থেকে একটি করে সংগ্রহ করেন তিনি। সংগ্রাহক জানান, এই মূল্যমানের যে ক’টা নোট বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইস্যু হয়েছে সবগুলো তিনি সংগ্রহে রেখেছেন। কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫০০ টাকার যতগুলো নোট ছাড়া হয়েছে সবগুলো এখানে রাখা আছে। প্রদর্শনীর কিছু নোটে শুধুই পাখির ছবি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে এসব নোট সংগ্রহ করেছেন শামসুল আলম। পাশাপাশি সাজিয়ে রাখা নোটের গায়ে মোট কত প্রজাতির পাখি? না, গুনে শেষ করা যায় না। সুলতানী আমল ও মোগল আমলের মুদ্রা দেখাচ্ছিলেন হুসাইন আল বাকের। মোট ২৩টি রৌপ্য মুদ্রায় সেই সময়ের ইতিহাস। সুলতানী আমলের মুদ্রায় সংশ্লিষ্ট শাসকের নামের উল্লেখ রয়েছে। ভাষা আরবি। মোগলদের ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে পার্সিয়ান ভাষায়। মোগলদের মুদ্রা নিয়ে এসেছিলেন সাদ উর রহমানও। ২০০ বছরের পুরনো মুদ্রা থেকে মোগলদের আমল সম্পর্কে মজার অনেক তথ্য পাওয়া যায়। অমলেন্দ্র সাহার মুদ্রায় খুঁজে পাওয়া যায় ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। আব্বাসী খলিফাদের শাসনামল, স্পেনের ওমাইয়া খলিফাদের শাসন আমল, তিমুরীদ রাজবংশের শাসনামলের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আছে মুদ্রাগুলো। ইংরেজ শাসনামলে প্রচলিত ছিল এমন মুদ্রার বড় সংগ্রহ আছে বাংলাদেশে। অনেকেই সে সময়ের মুদ্রা নিয়ে প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মোহাম্মদ হাসান শাহরিয়ারের নোটে রাজা ষষ্ঠ জর্জের সময়ের কথা বলছিল। রাজার ছবি সম্বলিত কাগজি নোট বার্মা অঞ্চলে ব্যবহৃত হতো বলে জানা যায়। সাবেক সেনা কর্মকর্তা পঙ্কজ মল্লিক দেখাচ্ছিলেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ইউনিফর্ম কয়েন। প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছিল কয়েকজন খুদে সংগ্রাহকও। পরিবারের সহায়তায় কয়েন নোট সংগ্রহ করছে তারা। কিছু নিয়ে যোগ দিয়েছিল প্রদর্শনীতে। সব মিলিয়ে চমৎকার একটি আয়োজন। মুদ্রার পিঠে ফেলে আসা সময় ও বিগত দিনের ইতিহাস মুগ্ধ করেছে দর্শনার্থীদের। দেখার পাশাপাশি মুদ্রা নিয়ে গবেষণা হবে। বেরিয়ে আসবে নতুন নতুন ইতিহাস। সকলের তাই প্রত্যাশা।
×