ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দূষণ রোধে

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

দূষণ রোধে

উড়ছে ধুলো, উড়ছে বালি, উড়ছে নানা রোগ জীবাণু। পুড়ছে জ্বালানি, বাড়ছে ধোঁয়া, নিসৃত হচ্ছে গ্যাস, নিধন হচ্ছে বৃক্ষরাজি। আর পাল্টে যাচ্ছে জলবায়ু। হচ্ছে তাতে নানা পরিবর্তন। এমনভাবে দূষিত হচ্ছে সব। বিশুদ্ধ বাতাস ক্রমশ হয়ে যাচ্ছে উধাও। ক্ষতিগ্রস্তের শিকার তাই পরিবেশ এবং প্রাণী। উদ্ধারের পথ জানা থাকলেও সে পথ কেউ মাড়ায় না। নির্বিকারের ভেতর যেন সবার বসবাস। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো বেশ কিছু কারণে শহরের বায়ু ও পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। কেবল বায়ু দূষণের কারণেই প্রতিবছর দেশ এক শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছে। বাংলাদেশে জিডিপির আকার বর্তমানে প্রায় আড়াই শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ হিসেবে বায়ু দূষণের কারণে ক্ষতির পরিমাণ গড়ে আড়াই বিলিয়ন বা ২৫০ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। এই হিসাবটা বিশ্বব্যাংকের। তারা বাংলাদেশের পরিবেশের অবস্থা মূল্যায়ন করে যে খসড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বায়ু দূষণকে সামনে এনেছে। এটা বাস্তব যে, পরিবেশদূষণ ও জালবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের জিডিপির চার শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ বৈকি। অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে সৃষ্ট দূষণ পরিস্থিতি বড় এবং ছোট শহরের বাসিন্দাদের ঝুঁকির মুখে ফেলছে। খোদ রাজধানী ঢাকার আশপাশের ছয় লাখ বাসিন্দা বিশেষ করে শিশুরা তীব্র দূষণের শিকার, যা তাদের দৃষ্টিশক্তি এবং স্নায়ুবিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে শহরগুলো জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছে। পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে জলাভূমির অকার্যকারিতা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে বেশিরভাগ শহর বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পুকুর ও খাল খননে কোন সমন্বিত উদ্যোগ যেমন নেই, তেমনি এসব খনন না করেই ‘পুকুর চুরি’ চলছে, গায়েব হচ্ছে অর্থকড়ি। পরিবেশ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পুকুর খনন করে। এদের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। যে যার মতো খননের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেই খনন হয়েছে কিনা, সেসব তদারকি করা হয় না। এখাতে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ থাকলেও কাজের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা জেঁকে বসেছে। তাই পঞ্চাশ ভাগ পুকুর আর সত্তর ভাগ খাল খনন হয় না। কাগজে কলমে খনন দেখানো হলেও বাস্তবে পুকুর আর খাল মেলে না। যদি হতো, তবে জলাবদ্ধতা কমত, বাতাসে হ্রাস পেত দূষণের মাত্রা। দেশে দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্প শহরগুলোর বাতাসের পাশাপাশি ভূ-উপরিস্থ এবং ভূ-গর্ভস্থ পানি দূষিত করছে। ‘ডায়িং ও ফিনিশিং’ কারখানাগুলোর বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এসব কারখানার পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত প্রতি টন ফেব্রিকের জন্য দুই শ’ টন বিষাক্ত পানীয় বর্জ্য উৎপন্ন করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন উপায় উদ্ভাবন করার পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। অথচ শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিতভাবে পরিবেশ সুরক্ষা জরুরী। কারণ পরিবেশ সুরক্ষা ছাড়া উন্নয়ন টেকসই হয় না। দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশের নগরায়ণ এবং শিল্পায়ন প্রক্রিয়া পরিবেশগতভাবে টেকসই হওয়া প্রয়োজন। এটা তো জানা যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শিল্পদূষণ আরও বাড়বে। কৃষির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে। বাড়বে অপুষ্টি এবং হ্রাস পাবে অনেক স্থানে পানি সরবরাহ সুতরাং এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরী। সরকারকে অবশ্যই পরিবেশ নীতি বাস্তবায়ন করতে এ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়া সবুজ ও পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য শিল্প-কারখানাগুলোকে প্রণোদনা প্রদানের নীতি এবং দূষণকারীর কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগের বিকল্প নেই। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কাজটি দ্রুত করাই সঙ্গত।
×