ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পর্যটন আকর্ষণে ওমানে তৈরি হচ্ছে হরিণের অভয়ারণ্য

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

পর্যটন আকর্ষণে ওমানে তৈরি হচ্ছে হরিণের অভয়ারণ্য

উপসাগরীয় দেশ ওমানে মরুভূমির সবচেয়ে উপকথাখ্যাত প্রাণীগুলোর অন্যতম এ্যারাবিয়ান অরিক্সয়ের (এক ধরনের হরিণ) জন্য দেশে একটি অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ দেশটিকে পর্যটকদের জন্য প্রাণী ও বৃক্ষ পরিবেশের দিক থেকে এক নতুন বিশেষ স্থানে রূপ দেবে। খবর এএফপির। প্রাণী জগতে এক সময়ে বিলুপ্ত এ বিশেষ প্রজাতির বিরল হরিণের মার্জিত চমৎকার সিংয়ের জন্য খ্যাত। প্রাণীটি আত্মরক্ষার্থে কয়েক দশক ধরে বাস করছিল এক সংরক্ষিত ঢালু এলাকায়। যে পরিবেশের পরিবর্তন ঘটেছে গত মাসে। কর্তৃপক্ষ এই প্রথম দর্শকদের জন্য অভয়ারণ্যটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়। দেশটিতে তেলের শুল্ক হ্রাস পাওয়ায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নেয়। বনবিভাগের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ওমানের মধ্যঞ্চলীয় প্রদেশ হাইমায় ঐ সংরক্ষিত এলাকার বালুময় সমতলে এসইউভিয়ে করে টহলে যান। তারা সেখানে দেখতে পান বেশ কিছু অরিক্স ও অন্যান্য আদি প্রজাতির প্রাণী ঘাস যাচ্ছে। অভয়ারণ্যের মুখপাত্র হামেদ বিন মাহমুদ আল হারসৌসি বলেন, কয়েক বছর ধরে একটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে অরিক্সগুলোকে যাতে বংশ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায় তা নিশ্চিত করা। প্রায় দু’দশক আগে অরিক্সের সংখ্যা ছিল মাত্র ১শটি। যে সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭শ’ ৭৫টিতে। কর্তৃপক্ষ এগুলো সংরক্ষণের জন্য আরও একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। হারসৌসি এএফপিকে বলেন, এর অনন্যতা ও বিরল বৈশিষ্ট্যের সুযোগ নিয়ে এর পর্যটন বিষয়ক সম্ভাবনার প্রতি আরও মনোযোগ দেয়া হয়েছে। এ্যারাবিয়ান অরিক্সের অস্তিত্ব টিকে থাকার বিষয়টি এক অত্যন্ত বিস্ময়কর ঘটনা। শিকারে পড়ে প্রচুর সংখ্যক অরিক্স মারা পড়েছে। ওমানে এ প্রজাতির হরিণের সর্বশেষ মারা পড়ে ১৯৭২ সালে সন্দেহভাজন অবৈধ শিকারীদের হাতে। ওমানি অভয়ারণ্যটি সৃষ্টি করা হয়েছে ২ হাজার ৮শ’ ২৪ বর্গকিলোমিটার (১ হাজার ১শ’ বর্গমাইল) এলাকাজুড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের ভূমিতে। এখানে সমতল যেমন রয়েছে, রয়েছে পাথুরে ঢালু জায়গা ও বালিয়াড়ি। এ অভয়ারণ্য ২০০৭ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় এবং এটাই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ থেকে প্রথম প্রত্যাহার। ওমান সরকার তেল আহরণের জন্য এর বেশিরভাগ স্থান নিয়ে নেয়। ওমানে গত কয়েক বছর ধরে তেলের মূল্য পড়ে যাওয়ায় আর বাড়ানোর জন্য সরকার আবারও বন্যপ্রাণীর দিকটায় অগ্রাধিকার বাড়িয়েছে। হারসৌসি বলেছেন, অভয়ারণ্যটিতে এ্যারাবিয়ান অরিক্সের সংখ্যা এখন ৭শ’ ৪২টি। তিনি বলেন, এখানে কিছু সংখ্যক অন্য প্রজাতির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, গত তিন বছরে স্যান্ড গজলা হরিণ নামে পরিচিত এ্যারাবিয়ান গজলার সংখ্যাও আমরা বাড়াতে পেরেছি। এ হরিণের সংখ্যা ৩শ’ থেকে এখন প্রায় ৮শ’ ৫০টিতে পৌঁছেছে। প্রাণী ছাড়াও এখানে ১২ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে। গাছগুলো বিভিন্ন ধরনের পাখির জন্য প্রতিবেশ যোগান দিচ্ছে। ওমান কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি ব্যাপক পর্যটন পরিকল্পনা ঘোষণা করা হবে। যারা অভয়ারণ্যে কাজ করছেন তাদের প্রত্যাশা এটি দেশে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে। কিন্তু একটা আশঙ্কা থাকছেই তা হচ্ছে, অভয়ারণ্যটি বেশ খোলামেলা রাখা হলে তা পুরনো শত্রু-শিকারিদের খপ্পরে না পড়ে যায়। এ সংরক্ষণ স্থানের এক প্রহরী বলেন, যে কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। শিকারিদের অনুপ্রবেশ রোধ করতে এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজ করছেন ৩০ গার্ড ও টহল পুলিশ।
×