ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাবি হলে খাবারের দাম বাড়লেও মান বাড়েনি

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

ঢাবি হলে খাবারের দাম বাড়লেও মান বাড়েনি

সোহেল তানভীর ॥ দেশের বাজার ছেয়ে গেছে শীতকালীন সবজিতে। সবচেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের পাতেও এখন জুটছে টাটকা-তরতাজা সবজি। কিন্তু এক্ষেত্রে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীরা। হলের প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী পাচ্ছে না শীতকালীন মৌসুমী শাক-সবজি। কারণ ক্যান্টিন মালিকরা হলগুলোতে সরবরাহ করছে না ভাল কোন শাক-সবজি। কিছু কিছু সরবরাহ করলেও তা আবার পচা, অচল এবং কমদামী। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় খাবারের তিন ভাগের এক ভাগও পাচ্ছে না। হলের শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যান্টিন মলিকরা একচেটিয়া ব্যবসা করায় খাবারের দাম বেড়েছে কিন্তু মান বাড়েনি। প্রতিযোগিতা করে খাবার বিক্রির ব্যবস্থা থাকলে খাবারের মান অনেক উন্নত হতো। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তাই প্রতিটি হলে খাবার বিক্রি করা সবার জন্য শতভাগ উন্মুক্ত করা দরকার। তবে হলের প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, ক্যান্টিনের বাইরের দোকানগুলোকে খাবার বিক্রি করতে অনুমতি দিলে তারা পরিবেশ অনেক নোংরা করে ফেলে এবং সেখানে অনেক বেশি আড্ডা হয়। তাই হলের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কেবল ক্যান্টিন মালিকদের খাবার বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং বাকিদের শুকনো খাবার বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া হলে হলে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার। ক্যান্টিন ও ম্যাচের এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীদের শরীরে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি দেখা দিচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় আগ্রহ কমার পাশাপশি সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, ক্লাস-পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু সে অনুযায়ী খাদ্য ও সেবা দেয়া হয় না শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ নিয়ে তেমন কোন কার্যকরী উদ্যোগ নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত ভর্তুকি দিয়ে খাবারের মান উন্নত করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাকে আরও গতিশীল করা। খাবারের উচ্চ দাম, নিম্নমান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশসহ আবাসিক হলগুলোর খাবারের দাম ও মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অনেক পুরনো। সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সময়ে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও কোন উদ্যোগই সফল হয়নি। উদ্যেগ নেয়ার পর প্রথমে কয়েকদিন কিছুটা ভালভাবে চলে। পরে কয়েকদিনের মধ্যেই খেই হারায় সেসব উদ্যেগ। খাবারের সময় হলের শিক্ষার্থীদের চিন্তা করতে হয় কোথায় খাব? কোথায় গেলে একটু ভাল খাবার পাব? কিন্তু বিশ^বিদ্যালয়ে মানসম্মত খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। যদিও কিছু কিছু জায়গায় একটু ভাল ভাল খাবার পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে খাবারের দাম আকাশ ছোয়া। এখানকার বেশিরভাগই শিক্ষার্থীই গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। অনেকেই টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে চালান। সেই টাকা দিয়ে বেশি দামে খাবার কিনে খাওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। সম্প্রতি এই সমস্যা আবারও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশ^বিদ্যালয়ের হলগুলোতে একচেটিয়া ব্যবসার কারণে খাবারের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে অভিযোগ হলে অবস্থানরত আবাসিক শিক্ষার্থীদের। কবি জসীমউদ্দীন হল, হাজী মুহম্মদ মহসিন হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ অনেক হলের ক্যান্টিন মালিক একচেটিয়াভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ফলে অন্য কোথাও খাবার না পেয়ে বাধ্য হয়েই হলের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা এবং নানাবিধ রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এদিকে, ক্যান্টিন মালিকরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক পরিচয়ে হলে বাকি ও ফাও খায়। তাই আমরা চাইলেও ভাল খাবার দিতে পারি না। বাকি ও ফাও খাওয়া বন্ধ হলে আমরা মানসম্মত খাবার সরবরাহ করতে পারি। হলের দোকান মালিকরা বলেছেন, ক্যান্টিনের বাহিরের দোকানগুলোতে ভাত, খিচুড়ি বিক্রি করলে খাবারের জন্য ভিড় জমান শিক্ষার্থীরা। কারণ আমরা ভাল খাবার সরবরাহ করি। কিন্তু হল প্রশাসন আমাদের কলা-রুটি-চা ছাড়া অন্যান্য খাবার বিক্রি করতে নিষেধ করেছে। জানতে চাইলে কবি জসীমউদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বলেন, ক্যান্টিনের বাইরের দোকানগুলো আগে ভাত-খিচুড়ি বিক্রি করতে পারত। কিন্তু তখন পরিবেশ অনেক নোংরা হতো। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, খাবারের মান ও দাম সমন্বয় করে হল প্রভোস্টদের বিয়ষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার। আগামী প্রভোস্ট কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে হলের প্রভোস্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
×