ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে সঙ্গীতাঙ্গনে শোক

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে সঙ্গীতাঙ্গনে শোক

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ উপমহাদেশীয় সঙ্গীত অঙ্গনে বিশেষ করে বাংলা গানে নানামুখী প্রতিভার কারণে বাঙালীর মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। তার ‘এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার’, ‘বঁধুয়া আমার চোখে, জল এনেছে হায়’, ‘আমি ফুলকে যেদিন ধরে বেঁধে আমার সাজি ভরেছি’-র মতো অজস্র বাংলা গান তাঁর কন্ঠে গীত হওয়ার পর জনপ্রিয় হয়েছিল। শিল্পী হিসেবে যতটা না বিখ্যাত ছিলেন তার চেয়েও বেশি আলোচিত ছিলেন সুর করা ও গান রচনার ক্ষেত্রে। প্রয়াত এই শিল্পীর সুরে গেয়েছেন অনেক জনপ্রিয় শিল্পী। তাদের মধ্যে রয়েছেন পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, বনশ্রী সেনগুপ্ত, পিন্টু ভট্টাচার্য, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে। ‘দামু’, ‘নটী বিনোদিনী’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত-সুরারোপের জন্য সেরা সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের চুচুড়ায় ১৯৩৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের জন্ম। তার সঙ্গীতগুরু ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। এ ছাড়াও কিংবদন্তি শিল্পী চিন্ময় লাহিড়ী এবং সুধীন দাশগুপ্তের কাছেও গানের তালিম নিয়েছেন। ১৯৬৩ সালে ‘একটি রঙিন ফুল’ গানটি রেকর্ড করেন। তবে ১৯৬৮ সালে ‘বঁধুয়া আমার চোখে, জল এনেছে হায়’ গানটি তাকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। আরেক জনপ্রিয় শিল্পী মনোময় ছিলেন জটিলেশ্বরের শীষ্য। গুরুকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান মনোময় বলেন গুরু হারালাম, পশ্চিমবঙ্গে জটিলদার মত কম্পোজার বিরল। তাঁর আরও অনেক কিছু পাওয়ার কথা ছিল। কিন্ত জীবদ্দশায় তার প্রতিভা এবং কাজের স্বীকৃতি ও সঠিক মুল্যায়ন হলো না। বাংলা গানের সোনার সময়ের অন্যতম সেরা প্রতিনিধির তকমা তাঁকে দেয়াই যায়। তবে তিনি ভাস্বর তাঁর ব্যতিক্রমী নিরীক্ষায়। বাংলা ভাষার ঐশ্বর্য, শব্দের কারুকাজ কীভাবে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করে তুলতে পারেন তা তিনি হাতে কলমে করে দেখিয়েছিলেন। ফলত কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস। কিন্তু তিনি জানতেন এ আসলে তাঁর সর্বনাশ। এই অভিব্যক্তি বাংলা গানের নিজস্ব ও নতুন সম্পদ। তিনিই জানালেন, তোমার সঙ্গে দেখা না হলে ভালবাসার দেশটি দেখা হত না। হারমোনিয়ামে জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের আঙুল খেলা করার অর্থ বাংলা গানের আর একটু সমৃদ্ধি। পরবর্তী সময় আপন করে নিয়েছে এই ভাষাকে, এই অভিব্যক্তিকে। এই সহজ সুরের বিন্যাসকে। বলা যায় এই মোকাম থেকেই বাংলা গানের নয়া যাত্রা শুরু। স্বর্ণযুগের গান আর জীবনমুখী গানের বলে যা প্রচার হল। তার মাঝে সেতু হয়ে থাকল জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গান। দীর্ঘ শিক্ষার সঙ্গে মিশিয়েছেন তাঁর নিজস্ব সঙ্গীতবোধ। ফলে বাংলা সঙ্গীতের দুনিয়ার অন্য ঘরানা জন্ম দিতে পরেছেন। তৈরি করে গিয়েছেন অংসখ্য ছাত্রছাত্রীকে। তাঁর সুরের ব্যাটন কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন তাঁরাই। বাংলাগান যতদিন থাকবে জটিলেশ্বরকে ভুলবে না কেউ।
×