ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একাত্তরের বীর কিশোর সুনীল চন্দ্র সাহা -মোস্তফা হোসেইন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

একাত্তরের বীর কিশোর সুনীল চন্দ্র সাহা  -মোস্তফা হোসেইন

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই। আমাদের কিশোররাও বসে থাকেনি। অমিতত্যাজে লড়াই করে তাক লাগিয়ে দেয় বিশ্বকে। এমনই এক বীর কিশোর সুনীল চন্দ্র সাহা। চলো বন্ধুরা, সুনীল কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীনে ভূমিকা রেখেছিলেন তা জেনে নিই সুনীলের বাবার নাম যতীন্দ্র সাহা। মা- আশালতা চন্দ্র সাহা। একাত্তরে ঠিকানা ছিল পশ্চিমহাটি, নেত্রকোনা। বর্তমান ঠিকানা গুয়াতলা, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ। একাত্তর সালে সুনীল দশম শ্রেণীতে পড়তেন তেলিঘাতি হাই স্কুলে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরও থেকে গেলেন দেশে। পালিয়ে বেড়ান এখানে ওখানে। সুযোগ পেলেই বাড়ি আসেন। বাড়িতে ঠাকুরমা ছিলেন একা। এদিকে রাজাকাররা ধাওয়া করে সুনীলকে ধরার জন্য। একসময় বলা হলো, মসজিদে নিয়ে তাকে মুসলমান বানানো হবে। এমন অবস্থায় তার পক্ষে আর দেশে থাকা সম্ভব হলো না। ৮ টাকা মণ ধরে ৩ মণ ধান বিক্রি করে কিছু টাকাসহ বাগমারা চলে যান। ওখানে মুক্তিবাহিনীতে লোক নিয়োগ করা হতো। কিন্তু তাকে নিয়োগ করতে চাইলো না বয়স কম হওয়ার কারণে। সেখানে কাটালেন ১৭-১৮দিন। তারপর তুরার উদ্দেশে রওনা হলেন। ওখানেও লোক নিয়োগ করা হয়। তুরার কাছাকাছি একটা জায়গায় গিয়ে রাত কাটাতে থামতে হয় তাকে। প্রচ- বৃষ্টি তখন। রাতে পাহাড়ের ঢালে শুয়ে পড়েন। একসময় ঘুমিয়ে পড়েন। পাহাড়ের উপর থেকে পানি গড়িয়ে আসছে নিচে। ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। বসে আছেন অন্ধকারে। এমন সময় মনে হলো গায়ে যেন মানুষের স্পর্শ। পানির সাথে ভেসে এসেছে একটা বাচ্চা। তাড়াতাড়ি ধরে ফেলেন বাচ্চাটা। কিন্তু বাচ্চাটা মৃত। পরদিন সকালে রিক্রুটিং সেন্টারে গিয়ে লাইন ধরেন। এবার ভাগ্যক্রমে তিনি তালিকাভুক্ত হয়ে যান। এক দিন বিশ্রামের পর তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তবে প্রাকৃতিক কাজ করতে হয় ঝর্ণায়। খুব ভোরে জাগতে হয়। প্রশিক্ষক ছিলেন ভারতীয় সৈনিকরা। নাম মনে নেই তাদের। ওখানে নিবুল ও মোজাম্মেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। তবে তারা সুনীলের সেকশনে ছিলেন না। সামাদ ছিলেন সুনীলের এলাকার ছেলে। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। ওখান থেকে নেয়া হয় আসামের একটি এলাকায়। সেখানে গুলি ছাড়া রাইফেল দেয়া হয়। বলা হয় রিহার্সাল হবে। সেখানে তিন দিন চলে যুদ্ধের মহড়া। একদল পাকিস্তানী সাজে আরেক দল মুক্তিবাহিনী। এরপর দুর্গাপুরের কাছে পাঞ্জা এলাকা দিয়ে দেশের ভেতরের উদ্দেশে রওনা হন। কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন আটপাড়া থানার সামাদ। ওই প্লাটুনে আটপাড়ার মানুষই বেশি ছিলো। উদ্দেশ্য ছিল বিরিসিরি আক্রমণ করা। তখন ধানকাটার সময় হয়ে গেছে। (আউশধান সাধারণত আগস্ট মাসে কাটা হয়)। কিন্তু বাধা পড়লো। মনে আছে পাকিস্তানীরা আলোক বোমা বর্ষণ করে, মুক্তিবাহিনীও স্মোকিং বোম্ব মারে। কিন্তু সেই যুদ্ধে সুবিধা করতে পারেনি মুক্তিবাহিনী। সেখান থেকে যান নেউলাগিরি ক্যাম্পে। ১৭-১৮দিন ছিলেন ওখানে। কিন্তু পাকিস্তানিরা নেউলাগিরি পৌঁছে যায়। খাবার ফেলে সুনিলরা পালিয়ে যান। কোম্পানি কমান্ডার বললেন, মরতে হলে দেশেই মরব। তখন আবার চলে আসেন বিরিসিরি। প্রচ- যুদ্ধ হয় সেখানে। বিরিসিরিতে পাকিস্তানীদের পরাজয় হয়। সেখান থেকে যান শ্যামগঞ্জ এলাকায়। ওখানে বেশ কয়েকটি লড়াই হয়। এখানেও পাকিস্তানিদের পরাজয় হয়। তারপর চলে যান শম্ভুগঞ্জ। পাকিস্তানীরা নদী পাড়ি দিয়ে ময়মনসিংহ চলে গেছে। মুক্তিবাহিনীও ওদের পিছু নেয়। কিন্তু ময়মনসিংহেও পাকিস্তানীরা টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। সুনীল সাহারাও ঢুকে যান শহরে। তখন ওই এলাকা স্বাধীন হয়ে যায়।
×