ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে॥ নিবন্ধিত ৯ লাখ, আরও আসছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে॥ নিবন্ধিত ৯ লাখ, আরও আসছে

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ৯ লাখের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। এখনও চলছে নিবন্ধন কার্যক্রম। তাহলে কতসংখ্যক রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে ? অনুপ্রবেশ বন্ধ না হওয়ায় প্রশ্ন- আরও কত রোহিঙ্গা আসবে টেকনাফ-উখিয়ায়। নির্যাতন বন্ধের পাশাপাশি প্রত্যাবাসনে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরও কেন এমন রোহিঙ্গা ? কেনই বা এখনও অবারিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত, এমন অনেক প্রশ্ন স্থানীয় অধিবাসীদের। প্রত্যাবাসনে বোঝাপড়া যেটুকু হয়েছে তাতে করে মিয়ানমারের পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাস থেকেই শুরু হবে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া। প্রাথমিক ধাপ হিসেবে রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনও এখনও বন্ধ। ওখানকার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্র বলছে, বর্তমানে যারা রয়েছে তাদের বরং ধরে রাখতে চায় মিয়ানমার সরকার। কিন্তু রোহিঙ্গারা এতটাই বাংলাদেশমুখী যে, তাদের থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এদিকে, অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় কক্সবাজারের দুটি উপজেলা এখন হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। এর ফলে মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিকরা। অস্থায়ী আবাসনে অনেক জায়গা বেদখল হয়ে যাওয়ায় এ বছর শীত মৌসুমের ফসল চাষাবাদ করতে পারেননি অনেক চাষী। তাদের ওপর পড়েছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিজনিত বাড়তি চাপও। এদিকে, শীত আসায় এখন ভরা পর্যটন মৌসুম। বাংলাদেশের পর্যটকদের প্রধান গন্তব্যস্থল কক্সবাজার। সেখানে প্রতিবছরের মতো এবারও হাজার হাজার মানুষ যাচ্ছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেল মোটেল এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে অস্বস্তিতে। কেননা, শহরে ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ের শঙ্কা। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে নারীদের অসামাজিক কর্মকা-ে জড়িত করার চেষ্টাও রয়েছে একটি চক্রের। স্থানীয়দের আতঙ্কের বিষয় হলো, আরও কত রোহিঙ্গা আসবে বাংলাদেশে। কেননা, বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের ফেরাতে আলোচনা এবং প্রক্রিয়ার মধ্যে আরও রোহিঙ্গা ঢুকতে দেয়া হবে কেনÑ সে প্রশ্ন এলাকাবাসীর। অনুপ্রবেশ এখন কিছুটা কম হলেও এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, ওপারে রোহিঙ্গা কমে যাওয়া। কেননা, ইতোমধ্যেই অধিকাংশই বাংলাদেশে পাড়ি দিয়েছে। একসপ্তাহে এসেছে আরও দেড় হাজার ॥ মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছে সে দেশের সরকার। নেই অগ্নিসংযোগ, হত্যা-ধর্ষণ ও কোন ধরনের সহিংসতা। কিন্তু তারপরও রোহিঙ্গারা আসছেই। রাখাইন রাজ্যে থেকে গত পাঁচ দিনে টেকনাফে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৪০৫ পরিবারের ১ হাজার ৫শ’ রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষ সাবরাং হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে আসে। এদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারাও স্বীকার করে যে, মিয়ানমারে আপাতত কোন ধরনের নিপীড়ন নেই। তবে আছে ভয়-ভীতি। কখন কী ঘটে বলা মুশকিল। তাই তারা বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ ও বিভিন্ন রকমের উন্নতমানের খাবার দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে, রাখাইনে কষ্টকর জীবন। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, ‘গত ৭ দিনে প্রায় দেড় হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে করেছে। অনুপ্রবেশকারী প্রতিটি পরিবারকে চাল, ডাল, সুজি, চিনি, তেল, লবণ ভর্তি একটি করে বস্তা দিয়ে গাড়িযোগে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হয়েছে। এখনও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। ৯ লাখ রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন ॥ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আট লাখ ৯০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিবন্ধনের কাজে থাকা রাষ্ট্রীয় এই সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মাসুদ রেজওয়ান বলেন, আট লাখ ৯০ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গার মধ্যে বেশিরভাগই এসেছে গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর। নিবন্ধিত ওই রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা দুই লাখের বেশি। তবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কর্মসূচীতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে, রাখাইন রাজ্য থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ৫৫ হাজার। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে ইন্দোনেশিয়ার স্পীকার ॥ উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ইন্দোনেশিয়ার ভারপ্রাপ্ত স্পীকার ফারদিন জন। স্পীকার ফারদিন জন বৃহস্পতিবার বিকেলে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চান, কেন তারা এদেশে এসেছে এবং তাদের ওপর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কেমন নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা নির্যাতনের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন। স্বজন হারানো এসব রোহিঙ্গাদের কান্নায় সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে ইন্দোনেশিয়ার ভারপ্রাপ্ত স্পীকার ফারদিন জন নির্মমতার শিকার রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টান্তমূলক মানবতাবোধের প্রশংসা করেন এবং তিনি এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানান। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে ইন্দোনেশিয়ার ভারপ্রাপ্ত স্পীকার ফারদিন জনের সঙ্গে ছিলেন ওই দেশের দুই পার্লামেন্ট সদস্য ও কক্সবাজার সদর রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। ইন্দোনেশিয়ার স্পীকার ফারদিন জন ও সাংসদ কমল কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৩টি ব্লকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় স্পীকার ফারদিন রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
×