ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য, আমৃত্যু সংগ্রামী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রবীণ জননেতা আব্দুর রাজ্জাকের আজ ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ষাটের দশকের দুরন্ত ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ সংগঠক ও পঁচাত্তর-উত্তর আওয়ামী রাজনীতির মধ্যমণি বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি বর্ষীয়ান রাজনীতিক আব্দুর রাজ্জাক প্রায় তিন মাস জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ২০১১ সালের এই দিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহছায়ায় যে ক’জন কীর্তিমান পুরুষ স্বাধীকার, স্বাধীনতা আর সুমহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনের কাতারে থেকে আমৃত্যু নেতৃত্ব দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন তাদের অন্যতম। নির্লোভ, নিরহঙ্কারী ও সাদামাটা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত আব্দুর রাজ্জাক ৭০ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান অনন্তলোকে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আব্দুর রাজ্জাক তার নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে যে রাজনীতির পাঠ নিয়েছিলেন, তা আমৃত্যু পালন করে গেছেন। রাজনীতির মাঠ কাঁপানো, সারাদেশ চষে বেড়ানো সুঠাম দেহী আব্দুর রাজ্জাকের দেহে মরণব্যাধি লিভার সিরোসিস ধরা পড়েছিল অনেক আগেই। ভরাট কণ্ঠের তেজও তেমন ছিল না। মরণব্যাধিও তাকে দমাতে পারেনি শেষদিন পর্যন্ত। ষাটের দশকের মাঠ মাতানো ছাত্রনেতা, ছাত্রলীগের দু’বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও এদেশের প্রথম সারির প্রবীণ রাজনীতিবিদ ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। তার জন্ম ১৯৪২ সালের ১ আগস্ট শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। তার পিতার নাম ইমাম উদ্দিন এবং মাতার নাম বেগম আকফাতুন্নেছা। তিনি ১৯৫৮ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৬৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং পরে মাস্টার্স পাস করেন। ১৯৬৭ সালে এলএলবি পাস করার পর ১৯৭৩ সালে আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিলের নিবন্ধিত হন। সাবেক পানিসম্পদ এই মন্ত্রীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের শুরু পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি ১৯৬০-৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৬৩-৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৫-৬৭ সাল পর্যন্ত আব্দুর রাজ্জাক পরপর দুইবার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২-৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রছাত্রী সংসদের নির্বাচনে বিনা প্রতি™^›ি™^তায় সহ-সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন। ১৯৬৯-৭২ সাল পর্যন্ত আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের প্রধান ছিলেন। ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫-৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি বাকশালের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৮-৮১ সাল পর্যন্ত পরপর দুইবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে বাকশাল গঠন করে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাকশালের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে ১৯৯১ সালে বাকশাল বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। ১৯৯১-২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে তাকে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠক বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রয়েছে তার। ওই সময় গঠিত মুজিব বাহিনীর একজন সংগঠক ও রূপকারও ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের মেঘালয়ে মুজিব বাহিনীর সেক্টর কমান্ডারের (মুজিব বাহিনীর চার সেক্টর কমান্ডারের একজন) দায়িত্ব পালন করেছেন। দেরাদুনে ভারতের সেনাবাহিনীর জেনারেল উবানের কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া এই বীরযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা প্রশিক্ষকও ছিলেন। স্বাধীনতার পর সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের পুরো ভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও যাবতীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন তিনি। নব্বই দশকের শুরুতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নির্বাচনী এলাকা শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা-গোসাইরহাট)। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আব্দুর রাজ্জাক ওই সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার মন্ত্রী থাকাকালেই ১৯৯৭ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রয়াত জননেতা আব্দুর রাজ্জাকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন নিয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচী। আওয়ামী লীগ আজ সকাল সাড়ে ৯টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিন্দ্রায় শায়িত আব্দুর রাজ্জাকের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মিলাল মাহফিলের আয়োজন করেছে। এছাড়া আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন এবং আব্দুর রাজ্জাক স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
×