ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোথাও মেয়াদোত্তীর্ণ, কোথাও নিম্নমানের নির্মাণ, কোথাওবা ভারি যানের চাপ সইতে না পেরে ধসে পড়ছে ষ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ মেরামতের উদ্যোগ কম, নেই নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা ষ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব

কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যে যোগাযোগ বন্ধ॥ ভাঙছে বেইলিব্রিজ

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যে যোগাযোগ বন্ধ॥ ভাঙছে বেইলিব্রিজ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মেয়াদ শেষ হওয়া, নিম্নমানের নির্মাণ ও ইচ্ছেমতো পণ্য পরিবহন করায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক বেইলিব্রিজ ভেঙ্গে পড়ছে। বিচ্ছিন্ন হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ। প্রকৌশলীসহ স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এসব সমস্যার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু নিয়মিত তদারকি না করায় দুর্ঘটনা ঘটছে। ফলে পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে যাতায়াতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু দ্রুত পুনর্নির্মাণসহ মেরামতের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। আবার কোন কোন এলাকায় সেতুর মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা পাস হচ্ছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর পুনর্নির্মাণ শুরু সম্ভব হচ্ছে না। ফলে যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে চলমান সেতু দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন যেন চলাচল করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ প্রকৌশলীরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেতু কর্তৃপক্ষের ঔদাসিন্যে বেশিরভাগ বেইলিব্রিজ ভেঙ্গে পড়ছে। অনেক সেতুর দু’পাশে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দায় সারছে সেতু বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান। দিনাজপুরে ভাঙল বেইলিব্রিজ ॥ স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরে ট্রাকসহ বেইলিব্রিজ ভেঙ্গে ৩ জন আহত হয়েছেন। দিনাজপুর-পার্বতীপুর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ভেঙ্গে যাওয়া ব্রিজের মেরামত সম্পন্ন করে যান চলাচল স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। সড়ক বিভাগ ট্রাক মালিকের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল মঙ্গলবার দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কাঁকড়া নদীর ওপর বেইলিব্রিজটি মাত্রাতিরিক্ত সার বোঝাই ট্রাকসহ ভেঙ্গে যায়। ১৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রিজের ৩২ মিটার অংশ ভেঙ্গে যায়। ৩৫ টন বোঝাই ৭০০ বস্তা সারসহ ট্রাকটি নদীতে পড়ে যায়। প্রত্যক্ষদশী গোলাপ রায় জানান, সেতুর পাশে বালুর চরে ম্যারাথন দৌড়ের চর্চা করছিলাম, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে এগিয়ে আসি, ট্রাকটি সেতুর মাঝখানে পৌঁছামাত্র ট্রাকসহ সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী নাজমুল হাসান জানান, সার বোঝাই ট্রাকটি সেতুতে ওঠামাত্র বিকট শব্দে ভেঙ্গে পড়ে। এলাকাবাসী ট্রাকচালক ও হেলপারকে উদ্ধার করে মঙ্গলবার দুপুরে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ট্রাকের হেলপার বাদশা মিয়া জানান, চুয়াডাঙ্গা-ট ১১-০২৫৪ নম্বর ট্রাকটি ৩৫ টনের ৭০০ বস্তা সার নিয়ে যশোর নওয়াপাড়া থেকে পার্বতীপুর উপজেলায় যাচ্ছিল। সকালে অতিরিক্ত কুয়াশা থাকায় সেতুতে ওঠার পূর্বে ঝুঁকিপূর্ণ বোঝা যায়নি। এসব সার কারেন্টহাট বাজারের রফিকুল ইসলান ও আজম শাহ নামক দুই ব্যবসায়ীর। দিনাজপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম সারওয়ার জানান, কাঁকড়া নদীর বেইলিব্রিজটিতে সর্বোচ্চ ২০ টন মাল পারাপারের জন্য সাইনবোর্ড দেয়া আছে। কিন্তু ৭০০ বস্তা সারসহ ৪৩ টন ওজনের ট্রাকটি বেইলিব্রিজ পার হওয়ার সময় ভেঙ্গে পড়ে। মাত্রাতিরিক্ত ওজনের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ ট্রাক মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ওই ট্রাকের মালিকের নাম-ঠিকানা সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে দিনাজপুর বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে ট্রাকের নম্বর দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, জরুরী ভিত্তিতে ব্রিজটি মেরামতের জন্য লালমনিরহাট জেলা থেকে বেইলিব্রিজের ৩২ মিটার সরঞ্জাম আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলিব্রিজ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, দীর্ঘদিন আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত শহরের উত্তর পাশে ৩০ বছর বয়সী সেনুয়া বেইলিব্রিজটি অবশেষে মালবাহী একটি ট্রাকসহ ভেঙ্গে পড়েছে। এতে ট্রাকের চালক ও হেলপারসহ তিন জন আহত হয়েছে। ব্রিজটি হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ায় জেলা শহরের সঙ্গে ১০ ইউনিয়নের পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শুক্রবার রাতে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসীয় রাম বাবুর ভাঁটির জন্য প্রায় ৪০ টন কয়লা নিয়ে ১০ চাকার একটি ট্রাক ঝুঁকিপূর্ণ সেনুয়া বেইলিব্রিজটি পার হতে গিয়ে ব্রিজের উত্তরের অংশটি ভেঙ্গে ট্রাকসহ নদীর চরে পড়ে যায়। এসময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয়রা আহত এক পথচারীকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে আহত অবস্থাতেই ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় শনিবার স্থানীয় প্রশাসন মানুষের চলাচলের জন্য বাঁশ-কাঠ দিয়ে ছোট একটি সেতু বানিয়ে দেয়। এতে শত শত লোক অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। এলাকার কিছু সুবিধাবাদী ব্রিজ পারাপারে পথচারীর কাছে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে সেনুয়া নদীর ওপর সড়ক ও জনপথ (সওজ) লোহার বেইলিব্রিজটি নির্মাণ করে। ওই সময় বলা হয়, শীঘ্রই ব্রিজটি বড় আকারে ঢালাই ব্রিজ করা হবে কিন্তু এলাকাবাসীর অনেক আবেদন -নিবেদনের পরও ৩০ বছরের মধ্যে ব্রিজটি আর নির্মাণ করা হয়নি। ব্রিজ দিয়ে ইটভাঁটির ভারি যানবাহনসহ মালবোঝাই যান চলাচলের কারণে কিছুদিনের মধ্যে ব্রিজের পাটাতনের লোহার পাতগুলো বেঁকে ও খুঁটিগুলো নড়বড়ে হয়ে যায়। ২০১১ সালে ব্রিজটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে একই বছরের জুলাই মাসে এলজিইডি সেতুর ভাঙ্গা অংশে লোহার নতুন পাটাতন বসিয়ে দেয়। ব্রিজের দুই পাশে লিখে দেয়া হয় সাবধান বাণী! কিন্তু ওই সাবধান বাণী কোন কাজেই আসছিল না। প্রতিনিয়ত ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করছিল মালবোঝাই ভারি যানবাহন। কিন্তু বিকল্প পথ না থাকায় ভারি যানবাহনও ব্রিজের ওপর দিয়েই চলতে থাকে। মেরামত করা পাটাতনগুলো আলগা হয়ে যায়। ব্রিজের অনেক জায়গায় তৈরি হয় গর্ত। ভারি যানবাহনই শুধু নয়, হালকা যানবাহন উঠলেই ব্রিজটি কেঁপে উঠত। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ জানার পরও চালকরা বাধ্য হয়েই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করত। ঠাকুরগাঁও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহানুর বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটির কথা কর্তৃপক্ষকে পূর্বেই অনেকবার জানানো হয়েছিল। এছাড়াও সেখানে একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে অসংখ্যবার পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে। তবে ভেঙ্গে যাওয়া ব্রিজটি কবে মেরামত করা হবে এ বিষয়ে তিনি কোন সম্ভাবনার কথা জানাতে পারেননি। নীলফামারীতে বেইলিব্রিজের পাটাতন ভেঙ্গে পড়েছে ॥ স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী থেকে জানান, চাড়ালকাটা নদীর ওপর নির্মিত নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সড়কের বেইলিব্রিজের পাটাতন ভেঙ্গে পড়েছে। এতে গত তিনদিন হতে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতেকরে ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বুধবার বিকেলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে জানায়, বেইলিব্রিজটির শুধু পাটাতন নয় পুরো ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। এলাকাবাসী আরও জানায়, সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড চাড়ালকাটা নদীর চর ড্রেজিং করে করে নদীর বালু উত্তোলন করে ক্যানেলের দুই পাশে ভরাট করে রাখে। ওইসব বালু একটি চক্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে ১০ চাকার ট্রাকে করে রাতভর বেইলিব্রিজের ওপর দিয়ে বালু পরিবহন করার কারণে ব্রিজের পাটাতন ভেঙ্গে যায়। উপজেলার দক্ষিণ বাহাগিলি ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, ব্রিজটির পাটাতন গত রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) ভেঙ্গে যায়। তিনদিন হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকাবাসীর যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া মালামাল পরিবহনে কোন ট্রাক বা পিকআপ চলাচল করতে পারছে না। অটোচালক একরামুল হক বলেন, ব্রিজটির পাটাতন ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক কষ্ট করে অটো নিয়ে চলাচল করছি। বাহাগিলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহ দুলু জানান, আমি ব্রিজটি খুব দ্রুত মেরামতের জন্য নীলফামারী সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্রিজটি ভাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে। ফলে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন আমরা ভেঙ্গে পড়া পাটাতন মেরামতের কাজ হাতে নিয়েছি। আমাদের জনবল কম থাকায় বিলম্ব হচ্ছে। তবে দ্রুত সেটি মেরামত করে চলাচল স্বাভাবিক করা হবে। নান্দাইলে বেইলি সেতু ধসে ট্রাক নদীতে ॥ সংবাদদাতা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ থেকে জানান, উপজেলার কানারামপুর-মধুপুর সড়কের বেইলিব্রিজটি অতিরিক্ত কয়লা বোঝাই একটি ট্রাকসহ ধসেপড়ে চালকসহ ৫ জন আহত হয়। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলও সেতুর নিচে নদীতে পড়ে যায়। গত সোমবার রাতে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে শাহগঞ্জ থেকে মধুপুরবাজারগামী কয়লা বোঝাই ট্রাকটি বেইলি সেতু অতিক্রম করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সড়ক ও জনপথের এই সেতুটি দীর্ঘ দিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নান্দাইল, ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ ও গফরগাঁও এই চারটি উপজেলার বিপুল পরিমাণ লোকজন সেতু দিয়ে চলাচল করত। সেতু ধসের কারণে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ওই সড়কের দুইদিক থেকে আসা শতশত যানবাহন আটকে গিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে যাত্রীসহ সাধারণ পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। ঈশ^রগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের টিমলিডার আব্দুল কাদের বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে উদ্ধার অভিযান চালায়। পাঁচশবিঘা খালের শানুর বাজার ব্রিজটি মরণ ফাঁদ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, বরগুনার তালতলী উপজেলার পাঁচশবিঘা খালের ওপর নির্মিত শানুর বাজার ব্রিজটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই এলাকার ২০ হাজার মানুষ। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। জানা গেছে, উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ২০১০ সালে পাঁচশবিঘা খালের ওপর শানুর বাজার সংলগ্ন আয়রন ব্রিজ নির্মাণ করে। কাজ নিম্নমানের হওয়ায় নির্মাণের চার বছরের মাথায় ব্রিজের পাটাতনের ঢালাই উঠে রড বের হয়ে গেছে। ব্রিজের লোহার বিম ও রেলিং ভেঙ্গে খসে পড়ছে। স্থানীয় লোকজন ব্রিজের ওপরে কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল করছে। এ ব্রিজ পাড় হয়ে ওই এলাকার বেহেলা, হরিণবাড়িয়া, গে-ামারা, পাঁচশবিঘা, নিউপাড়া, নাথকান্দা, ঝাড়াখালী, আলীরবন্দর ও শানুর বাজারের ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে। এ ছাড়া বেহালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেহালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ বেহেলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কড়াইবাড়িয়া দারুসুন্নাত দাখিল মাদ্রাসা ও গে-ামারা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ওই ব্রিজ পাড় হয়ে যেতে হয়। দীর্ঘদিন ব্রিজটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজ দিয়ে মানুষ ও গাড়ি পাড়াপাড় হতে সমস্যা হচ্ছে। ওই এলাকার মাসুম বিল্লাহ, মিজান ও খোকন হাওলাদার জানান, একটি ব্রিজের কারণে এ এলাকার ২০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানাই। শানুর বাজারের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ শানু হাওলাদার জানান, একটি ব্রিজের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বাজারটি। গাড়িতে বহন করে কৃষকরা ওই ব্রিজ পাড় হয়ে বাজারে কৃষি পণ্য নিয়ে আসতে সমস্যা হয়। ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণ করে বাজারটি রক্ষা ও এলাকার ২০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের দাবি জানাই। তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী এসএম তৈয়বুর রহমান জানান জনগুরুত্বপূর্ণ এ ব্রিজটি দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। এ ব্রিজটি আইআরআইডিপি প্রজেক্টের অধীনে প্রকল্প দেয়া হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, এছাড়া কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার চান্দপুর মানিকখালী গাছপাড়া খালের ওপর নির্মিত সেতুটি পাঁচ বছরেই ধসে পড়েছে। এতে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ নির্মাণ ত্রুটির কারণে অল্প সময়ের মধ্যে সেতুটি ভেঙ্গে পড়েছে। স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান-নিমতলা সড়কের রশুনীয়া নামক স্থানে পাথর বোঝাই ট্রাক নিয়ে বেইলিব্রিজটি ভেঙ্গে পড়েছে। মঙ্গলবার ভোরে ৫৫ টন পাথর বোঝাই ট্রাকটি সিলেট থেকে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি যাওয়ার পথে উপজেলার রশুনীয় ইউনিয়নের সেতুটি অতিক্রমকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এস বি সৈয়দ আলম জানান, এই ব্রিজটি হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ধারণ ক্ষমতার বেশি পণ্য পরিবহনের কারণে ব্রিজটি ভেঙ্গে যায়। দ্রুত ট্রাক উদ্ধার করে ব্রিজটি যান চলাচলের উপযোগী করার কথা জানান তিনি। নিজস্ব সংবাদদাতা পিরোজপুর থেকে জানান, সরুপকাঠির ইদিলকাঠি বাজার সংলগ্ন খালের ওপর ৪০ মিটার দীর্ঘ লোহার ব্রিজটি একাংশ ভেঙ্গে পড়েছে। দুই বছর আগে সেতুটি মেরামত করা হলেও হঠাৎ আবারও ভেঙ্গে পড়ে। প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, খালের ভাঙ্গন ও তলদেশের মাটি সরে যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। নিজস্ব সংবাদদাতা বাঁশখালী থেকে জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প রুট বাঁশখালীর চাম্বল এলাকার প্রধান সড়কে ব্রিজ ভেঙ্গে পাথর বোঝাই ট্রাক খাদে আটকা পড়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
×