ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এখন প্রস্তুতি নেয়ার শ্রেষ্ঠ সময়

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

এখন প্রস্তুতি নেয়ার শ্রেষ্ঠ সময়

শনিবার ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার ৪৬তম বিজয় দিবস উদ্যাপন করল বাংলাদেশ। রাষ্ট্রশক্তি থেকে শুরু করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবাই যার যার অবস্থান থেকে তার তার মতো করে। এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল জাতীয় নির্বাচন, যা আগামী বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার যে ব্যাপারটি গুরুত্বসহকারে সামনে এসেছে তাহলো সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান। বিজয়ের এত বছর পর যেখানে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মূলোৎপাটন হওয়ার কথা সেখানে দেখা যাচ্ছে তারা নতুন করে শেকড় ছড়াচ্ছে এবং কবি হেলাল হাফিজের সেই বিখ্যাত কবিতার লাইন নতুন করে আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে- ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়...’। বরং নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন লাইন যোগ করতে হয়েছে- ‘এখনি প্রস্তুতি নেবার শ্রেষ্ঠ সময়...’। এ প্রস্তুতি নির্বাচনের। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাষ্ট্রশক্তি ছিল সাম্প্রদায়িক অগণতান্ত্রিক পশ্চাৎপদ; কিন্তু জনগণ ছিল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক ও প্রগতিশীল। আর আজ রাষ্ট্রশক্তি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক ও প্রগতিশীল; কিন্তু জনগণের একটি বড় অংশ সাম্প্রদায়িক, পশ্চাৎপদ এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তির এজেন্ট তল্পিবাহী। সাম্প্রদায়িক শক্তির টার্গেট হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেভাবেই হোক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন অথবা বিপর্যয় দেখলে নির্বাচন বানচাল করে বর্তমান সরকার তথা বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বাধীন বর্তমান রাষ্ট্রশক্তির শরীরে ব্যর্থতার লেবেল লাগিয়ে বৈধতার প্রশ্ন তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করা। প্রয়োজনে তারা ২০১৩-২০১৪ -এর পুনরাবৃত্তি ঘটাবার চেষ্টা করবে। একটা ব্যাপার ভুলে গেলে চলবে না, ঐ অপশক্তির নেতৃত্বে রয়েছে খালেদা জিয়া, মিলিটারি জিয়ার সহধর্মিণী ও উত্তরাধিকারী, যিনি ২০১৩-২০১৪ সালে পেট্রোলবোমা মেরে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেড় শতাধিক মানুষ হত্যা করেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। সামান্য অনুশোচনা এই মহিলার মধ্যে নেই। তিনি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর নেতৃত্ব গ্রহণ করায় সেই গোষ্ঠীও হয়ে উঠেছে আরও সহিংস এবং বেপরোয়া। আমার মনে হয় এর মোকাবেলায় অর্থাৎ আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রশক্তি ভাতে-কাপড়ে, ধনে-জনে, মেধায়-শক্তিতে যে গতিতে এগিয়ে চলেছে ২০২০ এবং ২০২১ টার্গেট করে, ঠিক একই গতিতে এগোতে পারছে না বিজয়ের মানুষেরা। পারছে না রাষ্ট্রশক্তির দল নেতা-কর্মী-সমর্থকও। রাষ্ট্র সামনে হাঁটবে আর জনগণ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে যাবে তবেই না টার্গেটে পৌঁছা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রশক্তি যখন সৎ, মেধাবী, দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিবাদী হয় তখন দল ও সমর্থকগোষ্ঠী বুক চিতিয়ে তার সরকারের পক্ষে দাঁড়াতে পারে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এমন এক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছেন যা একটি জনগোষ্ঠী ও রাজনীতির জন্যে পুরোপুরি ইতিবাচক এবং নির্বাচনে যা খুব কাজে লাগে ও রেজাল্ট ঘরে আনতে সাহায্য করে। যদি ধরে নেয়া হয় ২০১৮-র শেষে সাধারণ নির্বাচন হয় তাহলেও পুরো পরিস্থিতি বঙ্গবন্ধুকন্যা ও তার দল এবং সরকারের পক্ষে। কাজেই ভোট কমানোর জন্য দেশের সবচেয়ে বড় দুটি পত্রিকার (বাংলা ও ইংরেজী) প্রতি নজর দিলেই ধরা পড়বে কি প্রাণান্তকর চেষ্টাই না করে চলেছে প্রতিষ্ঠান দুটি। কোথায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে চেয়ার ছোড়াছুড়ি হলো, কোথায় আওয়ামী লীগের নেতা এমপির ছেলে কোন মেয়ের সঙ্গে প্রেম করল বা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কিভাবে প্রেমিকাকে পাওয়ার জন্য সন্ত্রাসের পথ বেছে নিল এ সব ঘটনা যতটা গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হচ্ছে তার সিকি গুরুত্বও পাচ্ছে না জাতির কালজয়ী অর্জন এ জন্য যে, ক্ষমতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ। তারা জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেয়। সেই ঊনসত্তরের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের সময় জয় বাংলার কাউন্টার জয় জনতা স্লোগান দিয়েছিল, আজও সেই একই ডা-া ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই ভাইয়েরা ক্ষমতার ভাগসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নেবেন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আর সহযাত্রী হিসেবে বিএনপি সবচেয়ে বেশি পছন্দের। আবার বিএনপির পছন্দের হলো জামায়াত-শিবির-আলবদর। আরেকটি শ্রেণী আছে যারা এখন সবচেয়ে বড় আওয়ামী লীগার, অথচ তাদের পারিবারিক পরিচয় কি কেউ জানে না। তারপরও এই গোষ্ঠী সমাজে প্রভাবশালী সন্ধ্যার পর রঙ্গিন পানীয়ের আসরে। এই গোষ্ঠীও নিজের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে প্রথমোক্ত গোষ্ঠীর মতোই জামায়াত-শিবির-আলবদর-রাজাকার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বেশি পছন্দ করে। কারণ, সত্যিকার রাজনৈতিক শক্তিকে ঠেকাতে হলে ওদের দরকার। তারপর এটাও ঠিক, সঠিক পথে চলা রাজনৈতিক কর্মী তথা স্বাধীনতার মূলধারার শক্তির কাছে ওরা নস্যি। এখানেই মূলধারার রাজনৈতিক শক্তি সবচেয়ে সেরা, সবার চেয়ে শক্তিশালী। শুধু নিজেকে চিনতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও মূলধারার কাছে পাকিধারা অসহায়। কী নিয়ে তারা ভোট ভিক্ষা করতে মাঠে নামবে? যেখানে সর্বোচ্চ নেতা সপরিবারে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, সন্তান (তারেক), ভাইও একই দুর্নীতির পঙ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। আওয়ামী লীগের জন্যে ক্যাম্পেন তারাই সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু এই কিন্তুর মধ্যেও একটা কিন্তু আছে। যারা সরকারী ক্ষমতা ব্যবহার করেন তাদের দ্বারা কোন নাগরিক অর্থাৎ ভোটার জনগণ নিজেদের অপমানিত মনে করছেন কি-না বিষয়টি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় যথেষ্ট সিরিয়াস ইস্যু হিসেবে নেয়া উচিত। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভোটের জন্যে দৃশ্যমান উন্নয়ন যেমন দরকার, তেমনি উন্নয়নের অঙ্গীকার দরকার কেবল উন্নয়ন ঘরে ভোট এনে দেয় না, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গুড গভর্নেন্স বা সুশাসন জরুরী। যে মানুষ এমপি বা নেতা হওয়ার আগে রিকশায় চলতেন, বড় জোর ভাড়া মাইক্রোবাসে, সে মানুষ এমপি নেতা হওয়ার পর যদি দেখা যায় ১৫/২০ হাত লম্বা কালো জীপ নিয়ে এলাকায় ঢুকছেন, সুদিনে ধুলো, বর্ষায় কাদা পানি ছিটিয়ে যাচ্ছেন এই ব্যাপারটা ভোটার জনগণ সহজভাবে নেবেন না। এটাও ঠিক একজন এমপি জীপ কিনতে পারেন কম দামে, শুল্ক (ট্যাক্স) বিহীন। তবুও পড়হংঃরঃঁবহপু-র সব মানুষ তা বুঝবেন না, এটাই নিয়ম। একটা ব্যাপার খুব সোজা। বিগত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি, যে কারণে সন্ত্রাসী শক্তিও প্রকাশ্য ছিল না। তবুও তারা বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রেখে মানুষ হত্যা করেছে। ২০১৩-২০১৪ সালে তাদের পেট্রোলবোমার কথা এত তাড়াতাড়ি ভোলার কথা নয়। কাজেই কেবল উন্নয়নের কথা বলে ভোট পাওয়া যাবে কি-না সেটি এখনই ভাববার বিষয়। তারপরও ভোটের বাজারে আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত ৯ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, আজ তা বিশ্বের বিস্ময়। রোল মডেল। মাত্র প্রায় এক দশকে একটি দরিদ্র দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয় এটি তথাকথিত বাঙালী অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীও বিশ্বাস করেননি, ভাবেনওনি। কারণ তারা জনতার পেছনে হাঁটেন। কিন্তু তা ঘটেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা ফাঁসির কাষ্ঠে উঠবে এটিও ছিল অনেকের ধারণার বাইরে। শেষ প্রান্তে তাও ঘটেছে। এখনই সামনের নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগে যেমন শেখ হাসিনার মতো মেধায় সততায় নেতৃত্বে বিশ্বসেরা রাষ্ট্রনেতা রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের লক্ষ কোটি জনতা। বিএনপির সে সুযোগ নেই। জিয়ার নাম যতই নিক মিলিটারি স্বৈরাচারকে কেউ বিশ্বাস করে না, রেসপেক্টও করে না। অন্যদিকে উল্লেখ করার মতো একটি অর্জনও তারা দেখাতে পারবে না। তাদের ম্যাডামকে তুলে ধরাও ঝুঁকিপূর্ণ হবে ভোটের বাজারে। এমনও হতে পারে নির্বাচনের আগে খালেদা-তারেকের দুর্নীতি মামলার রায় হয়ে যাবে এবং তাও তাদের পক্ষ নাও যেতে পারে। আইনের হাত যত দূরেই থাকুক নাগাল পেতে কষ্ট হবে না। এতে ওদের মধ্যে হিংস্রতার জন্ম নিতে পারে। হিংস্রতা যে ওদের বড় পুঁজি। এখানেই আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারবে কি-না অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপির সামনে আরেকটি বিপদ হলো জামায়াত-শিবির। এদের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের রায় আছে, নেতাদের ফাঁসি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও তাদের গ্রহণ করছে না, একলা চলারও কোন সুযোগ নেই। বরং বিএনপি নামক গাছের পরগাছা হওয়াটাই লাভজনক। ২০১৩ সাল এবং ২০১৪ সালের ৯২ দিন এই সন্ত্রাসী দলটি বিএনপির পরগাছা হয়ে যেভাবে রাজধানী ঢাকায় পেট্রোলবোমা মেরেছে, রাজধানীর বাইরে গাছ কেটে সাবাড় করেছে, রাস্তা কেটে চলাচলে বাধার সৃষ্টি করেছে, কিংবা ৫ জানুয়ারির ইলেকশনের আগে থেকে যেভাবে ভোট কেন্দ্র পোড়াতে গিয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পুড়িয়ে, কিংবা দুর্বল ভেবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে তাদের বস্তুচ্যুত করেছে, তারপরও তারা ব্যর্থ হয়েছে, সে সব আওয়ামী লীগ কর্মীরা মনে না রাখলেও তারা মনে রেখেছে। তবে তাদের মাইনাস পয়েন্ট হলো এসব করেও সেদিন ডিভিডেন্ট ঘরে তুলতে পারেনি। এবার তো মোটেও পারবে না। সেদিন যেভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবার আরও শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হবে। কেউ কেউ মনে করেন বিএনপি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবিতে অথবা খালেদা-তারেকের মুক্তির দাবিতে অথবা মামলায় সাজা হলে সাজা মওকুফের দাবিতে নির্বাচনে অংশ নাও নিতে পারে। আমি মনে করি এ ধরনের চিন্তা অমূলক। বরং ২০১৪-র ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যেমনটি জামায়াত-শিবিরের পরামর্শে বর্জন করেছিল এবার তাদেরই পরামর্শে নির্বাচনে অংশ নেবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে জামায়াত-শিবির পরামর্শ দিয়েছিল নির্বাচনে গেলে পরাজয় অবধারিত, বরং জামায়াত-শিবির কর্মীরা (সন্ত্রাসীরা) পথে পথে পিটিয়ে, পেট্রোলবোমা মেরে যানবাহন পুড়িয়ে এবং রাস্তার গাছ কেটে গোটা দেশ অচল করে দেবে। বিএনপি কর্মীদের তেমন কিছু করতে হবে না, কেবল পেছন থেকে সন্ত্রাসের জোগান দিলেই চলবে। সেবার তারা হেরে গেছে। এবার কি তারা সফল হবে? বিএনপি মনে করে তারা এবার ২০০১-এর মতো নির্বাচনে কারচুপি করবে, ভুয়া ভোট ব্যবহার করে তাদের প্রার্থী জেতাবে। নির্বাচনের দিন অঢেল অর্থ ঢেলে টার্গেট অর্জনে সক্ষম হবে। তাছাড়া এতদিন বিএনপি জামায়াত এবং পাকিস্তানের অর্থে নির্বাচন করেছে। এবারও সে সোর্স তো আছেই, পরন্তু সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগকৃত ১২ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার (টাকার অঙ্কে ৯৬ হাজার কোটি টাকা) তা সুদে-আসলে আরও অনেক ফুলেছে। অতএব খালেদা জিয়ার নির্বাচন করতে অসুবিধা হবে না। অর্থাৎ অসদুপায় অবলম্বনে অর্থাভাব হবে না। তবে ভেতরে ভেতরে এখনই সন্ত্রাসী ভাড়া করা বা ট্রেনিং দেয়া শুরু করেছে কি-না, দেখার বিষয়। বিএনপি ও জামায়াত এবং ছাত্রদল ও শিবিরকে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া যেসব জঙ্গী সংগঠন এ পর্যন্ত প্রকাশ্যে এসেছে, যেমন হেজবুল মুজাহিদীন, হেজবুত তাহরির, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এমনই মুসলিম (ঘড়ঃ ওংষধসরংঃ) মৌলবাদী সংগঠন প্রকাশ্যে এসেছে বা প্রায়শ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা খেয়েছে। তাদের সবারই অরিজিন হলো জামায়াত-শিবির। ইদানীং হেফাজতের একটি অংশের নামও শোনা যায়। কাজেই নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। বিএনপির সংলাপের প্রস্তাব সবই বাত কে বাত। বস্তুত ২০১৪ সালে নির্বাচনে ভোটে অংশ না নিয়ে বরং পেট্রোলবোমা তথা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে যেভাবে গর্তে পড়েছে, প্রকাশ্যে হাঁটতে পারে না, তাই নর্দমার পথে হাঁটছে এবং আড়চোখে পরিস্থিতি দেখছে, তাদের জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ শ্রেফ জাতে ওঠার প্রচেষ্টা মাত্র। একবার যদি আওয়ামী লীগের মুখোমুখি বসতে পারে তাহলেই ২০১৩-১৪-র কালিমা মুছে যাবে। যে দু’শ নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছিল সেদিন তাদের শেষ নিশ্বাসের তাপ থেকে বাঁচতে পারবে কি বিএনপি-জামায়াত-শিবির? না, সে দায় খালেদা-তারেককে চিরকাল বয়ে বেড়াতে হবে। যার সন্তান গেছে, যার বাবা-মা-ভাই-বোন গেছে সে কি ক্ষমা করবে? কোনদিন করবে না। এসব কারণে বিএনপির হাতে একটি প্লাস পয়েন্টও নেই যা দিয়ে ভোটারদের মন জয় করা যাবে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের হাতে অসংখ্য প্লাস পয়েন্ট। নির্বাচনে প্রচারে কর্মীরা বুক চিতিয়ে বলতে পারবেন- আমরা জাতির পিতার আদর্শের গর্বিত সন্তান, Mother of humanity দেশরত্ন শেখ হাসিনার সৎ ও যোগ্য কর্মী। শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে একটি উন্নত দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে জীবনমান উন্নত করা, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে দাঁড়াবার ক্ষমতা অর্জন করা, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ঘাঁটি ধ্বংস করা, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে জঙ্গী ও জঙ্গীবাদ সমূলে উৎপাটন, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দেয়া, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে পদ্মা ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্রেন ও গাড়ি চালানো, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটির সমতাভিত্তিক উন্নয়ন, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মনে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে নারীর ক্ষমতায়ন, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে উন্নয়নের মহাসড়কে অবিরাম পথচলা, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে স্বাধীনতার মূলধারায় পথচলা, শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া মানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো- এমনই শত প্লাস পয়েন্ট রয়েছে। অতএব, এখনই প্রস্তুতি নেয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। ঢাকা ॥ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×