ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঠাকুরগাঁওয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

ঠাকুরগাঁওয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের বেহাল দশা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ যত্রতত্র গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলা, কোন প্রকার নোটিস ছাড়াই বাড়ি থেকে আদায় করা অর্থের অঙ্ক বাড়িয়ে দেয়া, চুক্তি মোতাবেক কার্যক্রম না চালানোসহ একাধিক অভিযোগে ‘টেকসই উন্নয়ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বেসরকারী সংস্থা ইএসডিও এবং পৌরসভা মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। টেকসই উন্নয়ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ঠাকুরগাঁওয়ের বেসরকারী সংস্থা ইএসডিও এবং পৌরসভার মধ্যে এক চুক্তির ফলে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ইএসডিও বাড়ি বাড়ি থেকে গৃহস্থালি বর্জ্য নির্দিষ্ট রিক্সাভ্যানে সংগ্রহ করার কাজ শুরু করে। সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ইএসডিও বর্জ্য সংগ্রহ করে পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যাবে। সেখানে পচনশীল বর্জ্য আলাদা করে গ্যাস ও সার উৎপাদন প্লান্টে নিয়ে সার-গ্যাস উৎপাদন করবে। সার এবং গ্যাস বিক্রি করার পরে প্রক্লপ থেকে লাভ হলে তার শতকরা ৫১ ভাগ ইএসডিও এবং শতকরা ৪৯ ভাগ পৌরসভা পাবে। বাস্তবে চুক্তি মোতাবেক ইএসডিও বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনে না ফেলে, গ্যাস, সার উৎপাদন না করে বাড়ি বাড়ি থেকে সংগৃহীত বর্জ্য শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল, স্টেডিয়ামের সামনে, মুন্সিপাড়া কবরস্থানের সামনে বর্জ্য ফেলতে শুরু করে। ফলে শহরের জনবহুল সড়কগুলোতে নোংরা দুর্গন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। চারদিকে পচা গন্ধে নাকে কাপড় দিয়ে পথচারীকে হাঁটতে হয়। এরই মধ্যে পৌর এলাকার ৪ হাজার বাড়ি থেকে যে টাকা আদায় করা হয় তার অঙ্ক বিনা নোটিসে ক’মাস আগেই বাড়িয়ে দেয়া হয়। আগে আর্থিক অবস্থাভেদে বাড়িপ্রতি মাসে ৩০টাকা ও ৫০ টাকা ছিল সেটা এখন করা হয়েছে ৫০ টাকা ও ৭০ টাকা। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক পৌরবাসী। এসব বিষয় নিয়ে টেকসই উন্নয়ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের ইএসডিওর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার গুপ্ত বুয়ার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, চুক্তি মোতাবেক পৌরসভা ডাম্পিং স্টেশন এবং গ্যাস, সার প্লান্ট তৈরি করে দেয়নি। এ কারণেই বর্জ্য বিভিন্নস্থানে ফেলতে হচ্ছে। হঠাৎ করে আদায় করা টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে দেয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলে প্রবীর কুমার বলেন, এর পরেও প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ডাম্পিং স্টেশন ও গ্যাস, সার প্লান্ট তৈরি না করে দেয়া সম্পর্কে ইএসডিওর অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল হোসেন ও সচিব রাসেদুর রহমান জানান, ডাম্পিং স্টেশন এবং গ্যাস, সার প্লান্ট তৈরি করে গ্যাস উৎপাদন করে দেখিয়ে ইএসডিওর কাছে তা হস্তান্তর করা হয়। এতদিন পরে এসে ইএসডিও ডাম্পিং স্টেশন ও গ্যাস প্লান্ট না থাকার বিষয়টি উত্থাপন করায় তারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। পৌরসভার ওই কর্মকর্তাদ্বয় দৃঢ়ভাবেই বলেন, ইএসডিও টেকসই উন্নয়ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেন, এ নিয়ে পৌরসভা ও ইএসডিও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েকটি সভা হয়েছে। সেখানে যে বাক্য বিনিময় হয়েছে তা সুখকর ছিল না। ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহঃ শহীদ উজ জামান জানান, পৌরসভার সঙ্গে লিখিত শর্ত ছিল যে তারা প্লান্ট ও গ্যাস, সার উৎপাদনের টেকনোলজি হস্তান্তর করবে। তারা স্থাপনা তৈরি করেছে। ইএসডিও স্থাপনা তৈরি করেনি ও স্থাপনা তৈরিতে ইএসডিওর কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু তারা এখন কোন কিছুই হস্তান্তর করছে না। তারা কাজটি শেষ করেনি। পৌরসভা যাদের দিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছে, তাদের আমরা চিনি না। এদিকে পৌরসভার মেয়র মির্জা ফয়সল আমিন ইএসডিওর যুক্তি খ-ন করে বলেন, ইএসডিও সঠিক কথা বলছে না। তাদের শান্তিনগরে প্লান্ট ও শহরের তিনটি স্থানে ডাম্পিং স্টেশন করে সব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আসলে তারা দেখেছে সার ও গ্যাস উৎপাদন করে লাভ করা অসম্ভব। গাস উৎপাদন করে তা পাইপলাইন দিয়ে বা সিলিন্ডারে ভরে বড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া এক কথায় অসম্ভব। হাইলি এক্সপেনসিভ। তাই তারা কিছুই করছেন া, শুধু বাড়ি থেকে বর্জ্য সরিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে।
×