ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যশোর পৌরসভার ১২০ কোটি টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

যশোর পৌরসভার ১২০ কোটি টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর শহরের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে পৌরসভা। পৌরসভার ড্রেন ও রাস্তার জায়গা দখল করে রেখেছে শহরের রাঘব-বোয়ালরা। দখলকারীরা ডিসেম্বরের মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে না নিলে পরদিনই অভিযানে নামবে পৌরসভা। কারণ, এদের উচ্ছেদ করে জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে না পারলে ১২০ কোটি টাকা ফেরত যাবে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। শতাব্দী প্রাচীন পৌর শহরের নাম যশোর। ১৮৮৫ সাল থেকে পৌর এলাকায় নানা প্রকার উন্নয়ন কাজ হয়ে আসছে। বিশেষ করে শিক্ষা, রাস্তা-ঘাট, আলো, জনস্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ প্রভৃতি নগর জীবনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো পরিচালনার সমগ্র কাজ করে আসছে পৌরসভা। প্রভাবশালী মহলের দৌরাত্ম্যে অনেকে উন্নয়ন কাজে ব্যর্থও হয়েছেন। তবে বর্তমান মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু ব্যর্থ হতে চাচ্ছেন না। তিনি এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছেন অনেক আগেই। ইতোমধ্যে ৩২টি ড্রেন ও ৩৭টি রাস্তাসহ নানা উন্নয়ন কাজ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌর কর্তৃপক্ষের মতে, গোটা শহরের ৩২টি সড়কের প্রায় ৪ শ’৮০টি স্থানে জায়গা বেদখল রয়েছে। যা অপসারণে কয়েক দফা নোটিস জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে খালদার রোড ও আর এন রোড এলাকার প্রভাবশালী দুই ব্যক্তিত্বসহ একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। খালদার রোডে প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়ির প্রায় ৫ ফিট জায়গা পৌরসভার। যা তিনি একাধিক নোটিসেও কর্ণপাত করেননি। তার মতো একাধিক ব্যক্তি নোটিসের কোন তোয়াক্কা বা কর্ণপাত না করে বহাল তবিয়তে জায়গা দখলে রেখেছেন। ফলে রাস্তা ও ড্রেনের নক্সা, অর্থ ও উপকরণ প্রস্তুত থাকলেও সময়মতো কাজে হাত দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। আবার অনেক জায়গায় কিছু কাজ করলেও কিছু দূর গিয়ে তা আটকে আছে। যা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে আগামী চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে স্থাপনা সরানোর তাগিদ দিয়ে ৪ শ’৮০টি স্থাপনার বেশি মালিকের কাছে নোটিস দেয়া হয়েছে। যদি নোটিস অনুযায়ী তাদের স্থাপনা সরিয়ে না ফেলেন তাহলে অভিযান চালিয়ে তা অপসারণ করবে কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) কামাল আহমেদ বলেন, খালদার রোড, কদমতলা, বারান্দিপাড়া, হাজী মুহম্মদ মহসীন রোডের শেষ মাথা কাঠের পুল, কাপুড়িয়াপট্টি, সোনাপট্টি, চৌরাস্তা এবং ঝালাইপট্টি হাটখোলা রোডে যত্রতত্র রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন ছোটখাটো দোকান গড়ে উঠেছে। এমনকি বড় বড় দোকানের মালামাল স্থানীয়ভাবে রেখে দেয়। ঝালাইপট্টি, হাটখোলা রোডের ওপর মালামালের স্তূপ জমিয়েছেন দোকানিরা। ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘœ ঘটছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। এই কারণে পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শহরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। তবে এর আগেও বিভিন্ন স্থানের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে পৌরসভা। তিনি জানান, পালবাড়ি এলাকার গাজীরঘাট রোডে একটি ৪ তলা বাড়ির প্রায় ৪ ফুটের বেশি জায়গা পৌরসভার জমির ভেতরে চলে এসেছে। তাকে বার বার নোটিস দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। খুব তাড়াতাড়িই ওইসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে পৌরসভা। তাছাড়া সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করে রেখেছে খালদার রোড, বারান্দীপাড়া, কদমতলা, ঢাকা রোড, আরএন রোড, এইচএমএম রোড, এমকে রোড, চাঁচড়া ডালমিল হতে নিউ রামকৃষ্ণ রোড, পূর্ব বারান্দিপাড়া, ঘোপ নওয়াপাড়া, মুজিব সড়ক, এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, যশোর-নড়াইল রোড, যশোর-খুলনা রোড, হযরত বোরহানশাহ রোড, ঘোপ পিলুখান, ঘোপ-নওয়াপাড়া, যশোর-ঝিনাইদহ রোডের পালবাড়ি-ঘোষপাড়া, আবু তালেব-ডায়মন্ড প্রেস মোড় রোড, বারান্দিপাড়া-সাহাপাড়া রোড, আজিমাবাদ কলোনি-পিয়ারী মোহন রোড, টিবি ক্লিনিক-পিয়ারী মোহন রোড, বামনপাড়া-কারবালা ওয়াপদা গ্যারেজ রোড, কারবালা-বামনপাড়া রোড, মওলানা শাহ আব্দুল করিম-মুজিব সড়ক, রামকৃষ্ণ আশ্রম-যশোর বেনাপোল রোড, ইসহাক সড়ক থেকে রামকৃষ্ণ আশ্রম রোডসহ প্রায় ৩৭টি সড়কের বিভিন্ন স্থানে পৌরসভার জায়গা দখল করে রেখেছে স্থানীয়রা। এই ৩৭টি রোডের প্রায় ৪৮০টি স্থানের কিছু জায়গা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে সিংহভাগ জায়গা স্থানীয়দের দখলে রয়েছে। পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ বলছে নক্সা, উপকরণ, টেন্ডারসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করলেও ধাপে ধাপে জায়গা দখলের কারণে কাজ আটকে যাচ্ছে। কিছু কিছু জায়গা উচ্ছেদ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, তাকে জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন পৌরবাসীর রাস্তা, অবকাঠামো, ড্রেন, শিক্ষা, খেলাধুলাসহ নানা উন্নয়নের আশায়। কিন্তু দখলকারীদের জন্য যদি সে কাজ বাধাগস্ত হয় তা কি সচেতন মহল মেনে নেবেন। দায়ী হয়ে থাকতে হবে জনগণের কাছে। এ জন্য তিনি সকল উন্নয়ন কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে চান। এ জন্য জনগণের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। তিনি বলেন, শহরে সড়ক, ড্রেনসহ যেসব উন্নয়ন ও সংস্কারের কাজ চলছে তা যদি জুনের মধ্যে শেষ না হয় তাহলে প্রায় ১২০ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত দিতে হবে। ফলে পৌরসভা অনেকটা বিপাকে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
×