ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুর নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

রংপুর নির্বাচন

শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচন হলো। নগরীর ১৯৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা নির্ভয়ে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটারদের মাঝে ছিল উচ্ছ্বাস। কোথাও কোন ধরনের বাধা ও বিব্রতকর, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। এবার নতুন নগর পিতা হলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। ফলাফল অনুযায়ী মুস্তাফিজার রহমান তার নিকটতম আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদায়ী মেয়র সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টুকে ৯৮ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত করেন। তৃতীয় স্থানে বিএনপি প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা। নির্বাচনে ৭৪ দশমিক ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। লাঙ্গল প্রতীকে মোস্তফা ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯, নৌকার প্রার্থী ঝন্টু ৬২ হাজার ৪০০, বিএনপির প্রার্থী বাবলা ধানের শীষে ৩৫ হাজার ১৩৬টি ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারের পুরো সময়টাই শান্তিপূর্ণ কেটেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরস্পরের প্রতি আচরণও সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বলা চলে রংপুরবাসীর বহুল আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ছিল এই নির্বাচন। তবে আওয়ামী লীগ ফল মেনে নিলেও বিএনপি ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপির এই অভিযোগের বাস্তবতার বিপরীতে মতামত দিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক, মিডিয়াসহ দেশের সকল গণমাধ্যমের দৃষ্টি ছিল এই নির্বাচনের দিকে। আর তাদের অনিয়মের অভিযোগ ছিল সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে, তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত। তাই এই দাবি যে নিছকই অভিযোগ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। গতানুগতিক অভিযোগের ধারা থেকে বেরিয়ে দায়িত্বশীল ও ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি প্রদর্শন করতে হবে সহযোগিতার মনোভাব। যে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনের ভূমিকা মুখ্য হলেও একমাত্র নয়, সেখানে প্রশাসনের নিয়মানুবর্তিতাও গুরুত্বপূর্ণÑ এটা রংপুরের প্রশাসন প্রমাণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে সর্বাত্মক ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। নির্বাচনে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৩৬ প্লাটুন বিজিবি, ৭ হাজার পুলিশ, ৬০০ র‌্যাব সদস্য, পৌনে ৩ হাজার আনসার, ৩৩টি ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে পুলিশ ও র‌্যাবের ৩৩টি মোবাইল কোর্ট এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে ১১টি মোবাইল কোর্ট ব্যবহার করেছে কমিশন। এই জন্য নির্বাচন কমিশন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে এমন অবাধ ও সুষ্ঠু একটা নির্বাচন উপহার দেয়া- আগামীতে চলার পথে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। স্থানীয় সরকার হলেও দেশে গত দু’বছর ধরে সরাসরি রাজনৈতিক মনোনয়ন ও প্রতীকে এমন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের পর এবার রংপুর। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় রংপুর নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে সে ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন অনেকেই। জাতীয় রাজনীতিতে দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় রংপুরের পরিস্থিতি অনেকটা ভিন্ন। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টিও যে যথেষ্ট প্রভাবশালী সেটারও প্রমাণ মিলল। এই নির্বাচনে ভোটাররা কুমিল্লার মতো নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নিতে পেরেছেন। সব ভাল যার শেষ ভাল তার এই প্রবাদটি আজ নির্বাচন কমিশনের জন্য উদাহরণ। রসিক নির্বাচন তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। তারা সফল হয়েছে। সহযোগিতা ছিল সরকার, প্রশাসন, মিডিয়া সর্বোপরি ভোটারদের। এ কথা সত্য যে, ভোটাররা আগের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীল। সামনে ঢাকা উত্তর সিটিসহ বেশ কয়েকটি সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে রংপুরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে আশা করা যায়। সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এটা কিন্তু অসম্ভব নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। আগামী বছরের শেষ দিকে সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। তারপর জাতীয় নির্বাচন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে কোনভাবেই বিতর্কিত না করে পূর্ণ সহযোগিতা ও সমর্থন জানানো জরুরী।
×