ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বাগেরহাটের স্মৃতিস্তম্ভগুলো

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বাগেরহাটের স্মৃতিস্তম্ভগুলো

বাগেরহাটে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হিসেবে চিহ্নিত বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলোর অধিকাংশই সারা বছর অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে যা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক ও শিক্ষার্থীরা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কোন দিবস এলেই শুধু ওই বধ্যভূমি, স্মৃতিস্তম্ভগুলো ধুয়ে-মুছে তাতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বধ্যভূমি ও শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভগুলো যথাযথ মর্যাদায় সারা বছর সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। ৭১ সালে পাক হানাদারদের দোসর রজ্জব আলী ফকিরের রাজাকার বাহিনী সবচেয়ে বড় গণহত্যাটি চালায় রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামে। ১৯৭১ সালের ২১ মে পুরো ডাকরা গ্রামকে রাজাকাররা বধ্যভূমি করে তুলেছিল। গুলি ও জবাই করে তারা সেদিন দুই শতাধিক সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। এছাড়া কচুয়া উপজেলার শাঁখারীকাঠি, বাগেরহাট শহরের ডাকবাংলো ঘাট ও সদর উপজেলার কান্দাপাড়ায় নিরস্ত্র বাঙালীদের গুলি ও জবাই করে হত্যা করে রাজাকাররা। স্বাধীনতার পর এসব স্থান চিহ্নিত করে স্থানীয় প্রশাসন বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। এরমধ্যে ১৯৯৭ সালে বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদের তীরের ডাকবাংলো বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত করে একটি ফলক উন্মোচন করা হয়। কিন্তু ওই ফলক উন্মোচনের ২০ বছর পার হলেও সেই জায়গাটি উন্মুক্ত পড়ে আছে। যা আজও সংরক্ষণ করা হয়নি। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। আর অন্য যেগুলো রয়েছে তা সারা বছরই পড়ে থাকে অযতœ ও অবহেলায়। ময়লা আবর্জনার স্তূপ হয়ে পড়ে থাকে। কোথাও কোথাও আগাছা গজিয়ে উঠেছে। কোন দিবস আসলেই সেগুলো ধুঁয়ে-মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তাতে ফুল দিয়ে শহীদদের স্মরণ করা হয়। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা মানিক লাল মজুমদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাক হানাদারদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাসহ বাগেরহাটের অসংখ্য মানুষ রাজাকারদের হাতে খুন হন। তাদের আত্মত্যাগের জন্য আজ আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সরকার বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করে সেখানে স্তম্ভ নির্মাণ করে তা সংরক্ষণ করেছে। কিন্তু সেইসব স্থানগুলো বলতে গেলে সারা বছরই পড়ে থাকে অযত্ন অবহেলায়। যাদের আত্মত্যাগে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তাদের স্মৃতিস্তম্ভগুলো সারা বছর যাতে যতে্ন রাখা যায় তার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান ওই মুক্তিযোদ্ধা। বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজের ছাত্র আলী রেজা আহম্মেদ বলেন, বাগেরহাটের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইতে পড়েছি। ওই সময়ে রাজাকাররা যেসব স্থানে নরহত্যা চালিয়েছিল সেসব জায়গা ঘুরে দেখতে গিয়ে দেখি তা অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে। অধিকাংশ স্থানে সীমানা প্রাচীর নেই, খোলা পড়ে আছে। আর যেগুলোতে সীমানা প্রাচীর আছে তার উপরে ময়লা আবর্জনার স্তূপ হয়ে আছে। এগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব প্রশাসনসহ আমাদের সকলের। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদের তীরের ডাকবাংলোর বধ্যভূমিটি অন্যতম কসাইখানা হিসেবে পরিচিত। রাজাকাররা এখানে অসংখ্য মানুষকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে তার মরদেহ ভৈরব নদে ভাসিয়ে দেয়। ১৯৯৭ সালে স্থানীয় প্রশাসন এখানে একটি ভিত্তিফলক উন্মোচন করে। কিন্তু ওই ফলক উন্মোচনের ২০ বছর পার হলেও সেই জায়গাটি এখনও উন্মুক্ত পড়ে আছে। যা আজও সংরক্ষণ করা হয়নি। আগামী প্রজন্মের তরুণদের জন্য এই স্থানে অবিলম্বে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার দাবি জানান ওই নেতা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বাগেরহাট জেলা কমান্ডার শাহীনুল আলম ছানা বলেন, ১৯৭১ সালে রাজাকাররা বাগেরহাটে অন্তত সাতশ’ মানুষকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ^াস বলেন, বাগেরহাটে শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো সরকারী বরাদ্দে সংস্কার ও উন্নয়ন করা হচ্ছে। বাগেরহাটের কেন্দ্রীয় বধ্যভূমি ডাকবাংলোকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে খুব শিগগির কাজ শুরু করা হবে। -বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে
×