ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গল্প ॥ মাতৃভূমি -জোহরা সালাম

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

গল্প ॥ মাতৃভূমি -জোহরা সালাম

গত রাতে প্রচন্ড- গরমে ঘুম ভেঙ্গে গেল নাজিয়া হাসানের। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রে সবুজ আলো আছে কিন্তু শীত নেই। দরদর করে ঘেমে নেয়ে গেছে। এপাশ-ওপাশ করে উঠে বসল। ‘নাহ, এসিটার মনে হয় গ্যাস ফুরিয়ে গেছে। এবার ঠিক না করলেই নয়। বারো বছরের ব্যাপার।’ বিড় বিড় করল নিজ মনে। শুধু যন্ত্র কেন? সময়ের সঙ্গে মানুষও নড়বড়ে হয়ে যায়। হারিয়ে যায় তার প্রাণ প্রাচুর্য, যৌবনের উন্মাদনা আর মিইয়ে আসে বেঁচে থাকার রঙিন খোয়াব। বাইরে মেঘ গুড়ুম গুড়ুম করছে। এসি বন্ধ করে দরজা-জানালা সব খুলে দিল নাজিয়া, শীতল বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। নির্ঘুম রাত্রি, বাতাসের দাপাদাপি, আকাশে কালো মেঘ, মাঝে মাঝে বিদ্যুত চমক। সে এক অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার। বারান্দায় একাকী নাজু আজকের নাজিয়া হাসান। প্রতি মুহূর্তে টাইম মেশিনে নাজিয়া হাসান হয়ে যায় নাজু। এলামেলো চুল, টানা টানা চোখের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। তৎকালীন উর্দু ছবির স্রোত। চান্দা, তালাশ, কুলি, চকোরী, ছোট সাহেব আরও কত কি? নাজুর জীবনের প্রথম প্রেমিক তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের এক অত্যন্ত পপুলার হিরো। তার হেয়ার স্টাইল, কথা বলার ধরন, তাকানো সব পাগল করে দিয়েছিল নাজুকে। অঙ্ক করার পর ফুরিয়ে যাওয়া খাতার সেই নায়কের ছবি চিত্রালী কেটে কেটে ভাত দিয়ে লাগিয়ে রেখেছে সব সময় দেখবে বলে। নাজুর জীবনে সিনেমার সেই হিরোই ছিল প্রথম প্রেমিক। সেই হিরোর ছবি কেটে লাগানোতে ওর বান্ধবীরাও কম ছিল না, শেফালী, রীমা, সীমা, পপি, সাহেলী এ কজনে তো নাজুর মতো এতটা না হলেও কম কিছু ছিল না। কলেজের ছেলেরা কিশোরী মেয়েদের স্কুলে যাবার পথে সুযোগ পেলেই পেছন পেছন এসে গুনগুন করে গাইতো, ‘একেলে না জানা, হামে ছোড়কার তুম, তোমহারি ...।’ ওরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করত সেই বিখ্যাত হিরোর হেয়ার স্টাইল করতে। চুল কাটার নাপিতরাও বুঝে গিয়েছিল কে কে সিনেমার সেই হিরোর হেয়ারকাট করবে। বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বাতাসের ঝাপটায় ভিজে যাচ্ছে সে। যাক ভিজে সে। সরে দাঁড়াল না। এই নিশুতি রাতে ঘন বরষায়, কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। বিদ্যুত সুযোগ পেলেই স্কুল পালানো দুষ্টু ছেলেদের মতো পালায়। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন তার কাঁধে হাত রাখল। ‘কে আর হবে হাসান ছাড়া?’ ওর অনুমানই ঠিক। হাসান রাগ করেই বলল, ‘ভিজে গিয়েছ দেখেছ? ঠা-া লাগবে না?।’ ‘— এসো দু’জনেই ভিজি কেউ দেখবে না।’ বলল নাজু। হাসান জোর করে ওর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে এলো। ‘যাও যাও চেন্জ করে এসো। আজ তোমার হয়েছে কি বলত?’ আসলেই নাজু জানে না আজ তার কি হয়েছে। কখন যে ভোর হয়ে গেছে তা নাজু টেরই পায়নি। হাসান উঠে যেয়ে নামাজ পড়ে বেডটি খাচ্ছে। কাজের বুয়া ডেকে যাচ্ছে একভাবে, ‘খালাম্মা, খালাম্মা চা। এখন কি নাস্তা বানামু?’ ‘—ডিম সিদ্ধ, পটলভাজি কর আর প্লেইন রুটি বানা।’ নাজু নির্দেশ দেয়। ‘সখিনা হেসে বলল, ভায়া তো পটল খায় না।’ ‘ও কোনদিন নাস্তা খেয়েছে? তাড়াহুড়ো করে টিফিনবক্স ব্যাগে ঢুকিয়ে চলে যায়। কোন কোন দিন তো ডিমও খায় না।’ নাজু বলতে থাকে। চা পান করতে করতে পেপার উল্টানো অভ্যাস ওর কোন দিনই নেই। এ অভ্যাস বরং ওর স্বামী হাসানের। সকাল ৮টার টিভি নিউজ দেখবে বলে সুইচ অন করল। শুধু বানভাসি মানুষের ছবি, খুন আর ধর্ষণের খবর। ভেসে যাচ্ছে বন্যায় বাড়িঘর, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল সব। একটি ছবিতে তার চোখ আটকে গেল। বৃদ্ধ বাবাকে মাথায় বসিয়ে গলাপানি পাড়ি দিচ্ছে তার ছেলে। মানুষের এই কান্না বাণের পানিকে দ্বিগুণ করে দিয়েছে। এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে সব ক’টি চ্যানেলে একই দৃশ্য। সাহায্য আর ত্রাণ আটকে আছে টিভি আর পেপারের পাতায়। সংবাদকর্মীরা যাকেই জিজ্ঞেস করছেন সবাই বলছে, ‘না বাবা কিছুই পাইনি। আজ সারাদিন উপবাসী।’ কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙ্গে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সংবাদে দেখেছে, দুদক পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েকজন প্রকৌশলীকে জিজ্ঞসাবাদ করবে। বাস আর কি। নাজু আবার তার নিজ ভুবনে ডুব দিল যেখানে ওর শুধুমাত্র একক বিচরণ। ‘ছোটবেলায় তো এমন বন্যা দেখেনি। গড়াই নদীর ধারে বাড়ি হওয়াতে ঝুপঝাপ পাড়ি ভাঙ্গা দেখেছে। কিন্তু নদীর পানি দুই কূল প্লাবিত করে জনপদ ভাসিয়ে নিয়ে যাইনি। এসব তো ফারাক্কার কল্যাণে হচ্ছে এখন। এসব ওর একার ভাবনা। কারও সঙ্গে শেয়ার করতে মন চায় না। কখনও নাস্তার টেবিলে বা চায়ের আসরে ঝড় উঠে এসব নিয়ে। সেদিন ওর স্বামীর বন্ধু আজমল এসেছিল সস্ত্রীক। ভদ্রলোক ঠিকই বলেছেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আশ্রয় দিয়েছে, খাইয়েছে, পরিয়েছে। তার বিনিময়ে বর্ষার মৌসুমে পানি ছেড়ে দিয়েছে- তোরা ডুবে মর। আর শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে নেয়, তোরা শুকিয়ে মর।’ সবাই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়েছে। ওর কিন্তু একটুও হাসি আসেনি। প্রতি বছর যৌথ নদী কমিশনের মিটিং হয়। পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে সরকারের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। তারপর? তার আর পর নেই। নেই কোন ঠিকানা। খবরে খবরে ভরে যায় টিভি চ্যানেল আর খবরের কাগজের পাতা। টিভি বন্ধ করে দিয়ে এবার রান্নাঘরের দিকে যেতে হবে নাজুর। রিটায়ার করেছে ওরা দুজনেই। তাই বেশ হিসেব করে চলতে হয়। তারপরেও ছেলেরাই বেশিরভাগ চালিয়ে নেয়। ভীষণ ছোট লাগে নিজের কাছে ছেলেদের টাকায় চলতে। আকাশজুড়ে আবার মেঘের ঘনঘটা। ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়।’ আজ এ বয়সে কাউকে বলা যায় না। নিজেকেই শুধু নিজে বলা যায়। চলে যাওয়া যায় অতীত স্মৃতি রোমন্থনে। নস্টালজিয়া শুধুই নস্টালজিয়া। সাহেলী ছিল ওর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী, স্কুল এবং পাড়ার। ওর মা বাঙালী আর বাবা পাকিস্তানী পাঠান। ও যখন খুব ছোট তখন বাবা মারা যাবার পর ওর মা একমাত্র সন্তান সাহেলীকে নিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। খালাম্মা এত আদর করতেন মনে হয় এখনও নাজু ঋণী হয়ে আছে। স্কুল থেকে বিশেষ করে মর্নিং শিফটে সাহেলী ওকে নিয়ে যেত প্রায়ই ছুটির পর। খালাম্মার হাতের তৈরি ঘি দিয়ে মাখানো চাপাতি, ডিমভাজি বা কখনও মাংস। কত ফল যে খেয়েছে ওদের বাসায় তা আর বলার নয়। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যেই আসতো, আর কিছু না হলেও সঙ্গে ফলের ঝুড়ি থাকতই। একবার ওর এক সেকেন্ড কাজিন এসেছিল। এত সুন্দর দেখতে! বেশ লম্বা গোলাপী আর অদ্ভুত মায়াময়। অনেক গল্প করেছিল তার সঙ্গে। মনে হয়েছিল আর একবার প্রেমে পড়বে নাজু। কিন্তু সব আশার গুড়েবালি দিয়ে জানালেন তিনি বিবাহিত। গল্প করতে করতেই তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার সেই সিনেমার হিরো, তিনি তো বিবাহিত।’ ‘বিবাহিত?’ ‘কেন হতে পারে না?’ ‘আমরা তো তা জানি না।’ ‘আপনাদের জানিয়ে বিয়ে করবে নাকি?’- আমানত জানালো। সাহেলীদের বাড়িতে ওর কথা শুনে হাসির অট্টরোল। সেদিন এক রকম মুখে ওড়না চাপা দিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিল। বহুদিন যায়নি। পরে একদিন সাহেলীর মা এসে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। ‘এই পাগলী চলতো।’ ‘আমানত ভাইজান আছেন?’ ‘থাকল তো কি হলো?’ আর তাছাড়া আমানত কাল চলে গেছে।’ আজও এসব হৃদয়ের আয়নাতে পরিষ্কার দেখা যায়। নাজিয়া হাসানের মন আজ সত্যিই মেঘের সঙ্গী। তাই উড়ে চলে গেছে ১৯৬৮ সালে। মেঘেরাই পারে বুঝি এমনিভাবে উড়িয়ে নিয়ে যেতে যুগ যুগ ধরে, সোনালি-রূপালি দিনে। আবার মেঘ বালিকা নেমে এসে বলল, এবার তুমি তোমার নিজের জগতে যাও। আমার পাখা থেকে নেমে পড় ঝটপট। আরে পানি আর পানি। পানির অপর নাম কে রেখেছিল জীবন ! আর যখন তা রেখেছেনই জুড়ে দিলেন না কেন আর এক নাম মরণও বটে! ফেসবুক, ঞঠ, প্রিন্ট মিডিয়া- সব জায়গাতেই পানি। তরুণ-তরুণীরা আবার ঢাকা শহরের বিভিন্ন পানিবন্দী এলাকার ভিডিও, ছবি ইত্যাদি ধারণ করে কমেন্ট করেছে,’ কক্সবাজার সিবীচে যেতে চাইলে নটরডাম কলেজের সামনে চলে আসেন।’ মাননীয় মেয়ররা এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এসব ছবি দেখে কি ভাবেন সাধারণ আম-জনতার তা জানার কথা নয়। কারণ, জনগণ কারও নয়। তারা তাদের নিজেদের। তারা কখনও ভুল করে না। ভুল করে রাজনীতিবিদরা, ভুল করে আমাদের নেতারা- যারা পরিচালনায় থাকেন। জনগণ কখনও কখনও ভুল পথে পরিচালিত হয় না। জনগণ নিজেদের দ্বারাই বেশি পরিচালিত হয়। যেমন করে এদেশের জনগণ একদিন পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, ছিনিয়ে এনেছে আমাদের মহান স্বাধীনতা। জনগণ এ জন্য স্বাধীনতা আনে নাই যে, রানা প্লাজার নিচে অকাতরে প্রাণ দিতে হবে খেটে খাওয়া মানুষের। তারা এজন্য স্বাধীনতা আনে নাই যে, নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জড়িত থাকবে। জনতা এ জন্য স্বাধীনতা আনে নাই যে, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিজগৃহে প্রাণ দেবে গৃহবধূ। জনতা এজন্য যুদ্ধ করে নাই যে নিজ বাড়ির শয়নকক্ষে খুন হবেন সাংবাদিক দম্পতি আর তার বিচার হবে না গত পাঁচ বছরেও। জনগণ এজন্য জীবন দেয়নি যে স্বাধীন দেশে লুন্ঠিত হবে নারীর সমভ্রম। যে জনতা জীবন বাজি রেখেছিল মাতৃ ভূমির জন্য, তার জন্মভূমির জন্য, তাদেরই তো থাকার কথা ছিল সুস্থ, সুন্দর সুখী। লুটেরা, ঋণখেলাপী, কালোবাজারি, দুর্নীতিবাজ, জুয়াচোর তারাই তো আজ সুখী। সম্পদ, বিত্ত-বৈভব সব কেড়ে নিয়ে সমাজের শীর্ষস্থানে তো আজ তারাই। এ সমাজ জনতার নয়, আমার আপনার আমাদের নয়। এ সমাজ ওদের নিজেদের ইচ্ছেমতো, সুবিধামতো গড়ে নেয়া। ‘দূর কি ভাবছি এসব। ছোটমুখে বড় কথা।’ মায়ের বেডরুমের দিকে আসতে আসতে কথাগুলো শুনতে পায় প্রবাল। ‘কার ছোট মুখে বড় কথা আম্মু ? বল না প্লিজ। মহাবিপদ তো। এখন কি উত্তর দেবেন প্রবালকে। ‘ওইতো বাবা আমি ভাবছিলাম যে আমি যদি সমাজটাকে পাল্টে দিতে পারতাম!’ হাসতে হাসতে প্রবাল বলল, ‘পাগলের প্রলাপ। আজ তোমাকে এক জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাব। রিটায়ার করার পর তোমার মাথাটা গেছে।’ নাজিয়া হাসান এবার ছেলের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন। ‘ঊনসত্তুরের গণআন্দোলন, গণজোয়ার তুমি দেখো নাই বাবা।’ ‘দেখি নাই বলে আমরা কি সে ইতিহাস জানি না? আমরা তোমাদের চেয়েও বেশি জানি। উই আর প্রাউড যে আমরা বীরের জাতি।’ ‘এককালে ছিলাম বাবা।’ ‘এককালে ছিলাম এখনও নয় কেন? ’ ‘এ প্রশ্নের উত্তর তোমরাই খুঁজে নেবে।’ ‘আম্মু আমরা আজও বীরের জাতি। আমরা কখনই অসত্য, অন্যায়ের পথে যাব না, কথা দিলাম।’ গর্বে ভরে উঠল নাজিয়া হাসানের বুক। ঢাকা শহরের কোথাও তার ১ কাঠা জমি নাই, কোন সম্পদও নাই, নাই কোন মাথা গোঁজার ঠাঁই। কিন্তু তাতে কি? আল্লাহর অসীম রহমতে আমি আমার সন্তানদের মানুষ করতে পেরেছি তাই আর চাই না ওইসব সম্পদ। এর চাইতে বড় সম্পদ আর কি হতে পারে! চিরদিন ছেলেরা যেন এমন ভাল থাকে এটাই আমার চাওয়া।’ হঠাৎ মোবাইলের শব্দ। হ্যালো, ‘কিরে কোন খোঁজ-খবর নেই আজ ক’দিন, ব্যাপার কি?’ নাজিয়া কোন উত্তর দিল না। আজ মনটা সত্যিই বিক্ষিপ্ত। পপি এবার রশিয়ে রশিয়ে বলল, ‘কাকে নিয়ে মেতে আছিস। তোর জীবনের হিরো না পর্দার হিরো?’ ‘যদি বলি আমার সেই রূপালি জগতের হিরোকে নিয়ে।’ ‘ওপাশ থেকে হাসিতে ফেটে পড়ে পপি।’ আরে সেতো ৪৫ বছর বয়সেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।’ ‘হাঁ, আমার হৃদয় ছেড়ে তো যাইনি।’ ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাতো জানিই। ক্লাস নাইনের ছাত্রী হয়ে রোদের মধ্যে স্কুল মাঠে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা।’ এবার বেশ রেগে গেল নাজু। ‘এই সেখানে কি আমি একাই দাঁড়িয়েছিলাম, তুই ছিলি, সাহেলী ছিল, শেফালী, রীমা সবাই তো ছিল? তোমরা সবাই ধোয়া তুলসী পাতা আর আমি হলাম গন্ধ ভাদাল না?’ ‘নারে না, স্কুল ফাঁকি দিয়ে ম্যাটিনি শোতে আমাদের সেই স্বপ্নের নায়কের ছবি দেখা। সে সব সোনালি দিন রূপালি আলোয় আজও মনের পর্দায় ভেসে ওঠে।’ এবার দুষ্টামি শুরু করল নাজু। ‘তাই নাকি? কো কো করি না, কো কো করি না।’ পাকিস্তানের প্রথম পপসঙ্গীত। এসব আজ অনেক বছর আগের কথা। তখন ১টি মাত্র টিভি চ্যানেল ছিল তাও সরকারী। আর বিত্তবান ছাড়া কারও ঘরে টিভি ছিল না। আজ যেমন বস্তির কাজের বুয়াদের ঘরে টিভি আছে। উন্নতি হয়েছে। উন্নতি হয়েছে বিশ্বের, উন্নতি হয়েছে দেশের। স্যাটেলাইটের বদৌলতে হাজারটা টিভি চ্যানেল ঘরে বসে স্বদেশ-বিদেশ ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, ইউরোপ সব নখদর্পণে। ইউটিউব, ফেসবুক আরও কত কি? সিনেমা হলে এখন মানুষ খুব কম যায়। অনেক সিনেমা হলো বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরে বসে টিভি, ইউটিউব আরও কত কি আছে, একটু স্পর্শে নয়নের সামনে তুলে ধরে কাক্সিক্ষত বিনোদনের ছবি। আর তখন তো তা ছিল না। (চলবে)
×