ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কবি ও আবৃত্তিশিল্পী আলম আরা জুঁই

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

কবি ও আবৃত্তিশিল্পী আলম আরা জুঁই

কুষ্টিয়ার সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সুপরিচিত এক নাম বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী কবি আলম আরা জুঁই। আবৃত্তি শিল্পী এবং একজন সফল সংগঠকও। কুষ্টিয়া আবৃত্তি পরিষদের বর্তমান সভাপতি এবং বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদেরও নির্বাহী সদস্য। একুশ শতকের এই সময়ে এখনই অধিকাংশ নারী পশ্চাদপদ পরিবার, সমাজ, সংসার এমনকি রাষ্ট্রেও। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ও পারিবারিক পরিম-ল কখনই নারীবান্ধব প্রতিবেশের অনুকূলে ছিল না। সুকুমারবৃত্তির সৌকর্য বিকাশে নারীদের অবস্থা আরও বেশি সঙ্গীন। তিনি যখন জন্মগ্রহণ করেন এই সবুজ-শ্যামলিমা সোনার বাংলায় তখন নারীরা বেশ বিপণ্ন অবস্থায় ছিল শিক্ষা গ্রহণে এগিয়ে এলেও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাদের অনুপস্থিতি ঢের বেশি লক্ষণীয় ছিল। বেগম রোকেয়া, নীলিমা ইব্রাহিম, নূরজাহান বেগম, সুফিয়া কামালদের সরণি বেয়ে সকল প্রতিকূলতাকে লঙ্ঘন করে সাহসিকতা এই নারী তৃণমূল থেকে উঠে এসে কুষ্টিয়া তথা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মুখ উজ্জ্বল করে চলেছেন নিরবছিন্নভাবে। বগুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম শিববাটিতে আসাদুর রহমান ও সৈয়দা আল্লামা আকতার বানুর গর্ভে মুখ উজ্জ্বল করে জন্মেছিলেন এই নারীÑ বাংলার আকাশ-জমিন ছিল তখনও নারী শিক্ষা সংস্কৃতির বিপরীত। ছোটবেলা থেকে লেখাপাড়ার পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে গেছেন এবং লেখাজোখার প্রতি প্রবল আগ্রহ তাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। জাতীয় পত্রপত্রিকায়, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে কবিতা, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। অংশ নিয়েছেন দেশ ও দেশের বাইরে নানা সভা-সম্মেলনে। এখন পর্যন্ত তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ চারটি : তুমি রবে নীরবে ১৯৯৮, জলভরা মেঘের কাছে ২০০৫, আলোক পাখির গান ২০০৬, প্রিয়তম স্বদেশ ২০০৭। প্রকৃতিপ্রেমী এই কবির চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘প্রিয়তম স্বদেশ’ পাঠ করে জানা যায় কবি তাঁর অন্তর্গত আনন্দ-বেদনা-বিরহ, দেশপ্রেম, ধর্মান্ধতা, কূপম-ূকতা, অনাচার কখনও সরাসরি সংযোগে, কখনও প্রতীকে, ইঙ্গিতে তার ভাব ও ভাবনা ছন্দের মুক্তবন্ধনের সঙ্গে উপমানন্দনে এগিয়ে গেছে সেই সঙ্গে উপলব্ধি জগতের দুরাগত ধ্বনিও বাক্সময় হয়েছে বলে কবি নিরহঙ্কারে আবাদ করেছেন তার কাব্যসৌন্দর্যের মাঠ। যেমন : ‘আকাশ কাঁদছে কোন শোকে আজ এমন অঝোর ধারায় সব ধয়ে যাক ইফফাত আরা তুমি আর গেয়ো না আর গেয়ো না আমার বুক ভেসে যায় বুক ভেসে যায় জল থই থই বিলে মতো।’ -সাদা মেঘ, প্রিয়তম স্বদেশ। সহজচিত্রকল্পে আমরা দেখতে পাই সমকালে প্রতিচ্ছবি। বেদনা ও বিষাদ নৈঃশব্দে ঘিরে ফেলেছে মানবমর্ম আর সমাজসচেতনতাকে। কবির এমন সরল বুনন, নিপুণ তাল-চালে অন্য এক মাত্রা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘সাদা মেঘ’ কবিতায়। এমনি করে কবি তার অধিকাংশ কবিতায় তুলে এনেছেন স্বদেশ, সংসার, আনন্দ-বেদনা ও সুখ-দুঃখকে। এখনও আবৃত্তি চর্চা ও সামাজিক-সাংস্কৃৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কুষ্টিয়াসহ সারাদেশের নানা এলাকায় সাংস্কৃতিক কর্মকা- এবং সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন মানসিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং কিছুকাল একটি কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কুষ্টিয়া জেলার জোন প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বরত। স্বামী, লালন-মশাররফ গবেষক ম. মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কুষ্টিয়া জেলা শাখার নির্বাহী প্রধান ছিলেন। বর্তমানে এক পুত্র আরীক ও কন্যা ঈশিতাকে নিয়ে সুখে আছেন এই সাংস্কৃতিক কর্মবীর কবি আলম আরা জুঁই। বিবিধ কর্মযজ্ঞের স্বীকৃতিস্বরূপ সর্বক্ষেত্রে সফল এই নারী নানা সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ‘সাহিত্যগোষ্ঠী’ থেকে ‘সংলাপ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’ পদক পেয়েছেন জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি কবি আলম আরা জুঁই।
×