ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোয়েন্দাদের আশঙ্কা

বেগম জিয়ার রায়ের দিন বিএনপি রাজপথে লাশ ফেলতে পারে!

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

বেগম জিয়ার রায়ের দিন বিএনপি রাজপথে লাশ ফেলতে  পারে!

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আদালত থেকে ফেরার পথে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। শুধু তাই নয়, রায়ের দিন গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে লিপ্ত হয়ে নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে সহিংস সন্ত্রাস করে লাশ ফেলে সরকারের উপর দোষ চাপানোর ছক কষা হয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে এই ধরনের আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, আদালতের রায়কে সামনে রেখে লাশ বিএনপি যে সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর ষড়যন্ত্রের পাতা ফাঁদে কোনভাবেই পা না দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকালে হাইকোর্ট মাজারের মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বিনা উস্কানিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এদিন বকশিবাজারের অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ সময় তার গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের অনেকেই হাইকোর্ট মাজারের ভেতরে অবস্থান নেন। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে গাড়িবহর মাজার মোড় অতিক্রম করার সময় তারা বেরিয়ে এসে পুলিশের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যা পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করে গোয়েন্দা সংস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করার এক পর্যায়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে একযোগে এগিয়ে যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়েই পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া বের হওয়ার সময় হাইকোর্ট এলাকায় জড়ো হয়ে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। এ সময় তারা দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়েছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগের দিন বুধবার বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নিজের গাড়িবহর থামিয়ে হাইকোর্ট মাজারের ভেতরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে বেরিয়ে আসেন। আগের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চরম ধৈর্যের পরিচয় দেয়ার কারণে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে। শুধু তাই নয়, গত ৫ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে শতাধিক গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে সহিংস সন্ত্রাসের মাধ্যমে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অশান্ত করার অশুভ ইঙ্গিত বহন করছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ছক কষে এই সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। আদালতের রায়কে সামনে রেখে বিএনপি এই ধরনের সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়ে সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে দেশ-বিদেশের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করার মাধ্যমে সরকারের নার্ভ পরীক্ষা বা এসিড টেস্ট করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মঙ্গলবারের সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনায় পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, জানমালের ক্ষতিসাধন, হত্যার চেষ্টা ইত্যাদির অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাতে বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী সোহেল, নবী উল্লাহ, ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হকসহ ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও তিন শতাধিক জনের নামে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এই ধরনের সহিংস সন্ত্রাস ঘটিয়ে আদালতের রায়ের আগের মহড়া দিচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ ডিসেম্বর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই হঠাৎ করে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আদালত থেকে ফেরার পথে রাজপথে গাড়ি ভাংচুর, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সচিবালয়ের সামনের নবাব আব্দুল গনি সড়কে সরকারের মন্ত্রণালয়, অধিদফতর বা প্রকল্পের সারি সারি গাড়ি দেখেই রাজপথ দিয়ে আসা কয়েক‘শ বিএনপি নেতা-কর্মী বলতে থাকেন, ‘ভাঙ্গ গাড়ি, গাড়ি ভাঙ্গ’। হঠাৎ কয়েক শ’ লোক দৌড়ে যেতে থাকে ওই সড়ক দিয়ে পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটানো হয়, যা পূর্বপরিকল্পিত বলে পুলিশের তদন্তে বলা হয়েছে। সেদিনের ঘটনায় মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করা হয়েছে, ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে প্রকাশ, দৌড়ে পালানো লোকজন পাল্টা ইট-পাটকেল ছুড়ছে পুলিশের ওপর। এরইমধ্যে একদল মানুষ চিৎকার করে ওঠে, ‘ভাঙ গাড়ি, গাড়ি ভাঙ’। মুহূর্তের মধ্যেই সড়কে পার্কিং করে রাখা গাড়িগুলোর পেছনের গ্লাস ভাঙা শুরু হয়। এ সময় চালকদের তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার ছিল না। সচিবালয়ের সামনের এই রাস্তার মতো একই চিত্র ছিল বঙ্গবাজার মোড়, হাইকোর্ট এলাকায়ও। গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের তদন্তে প্রকাশ, রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা ৪টি মামলার এজাহারে ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা তিন শতাধিক জনের নামে দায়ের করা মামলায় পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সরকারী গাড়ি ভাংচুর, ক্ষয়ক্ষতি সাধন, হত্যার চেষ্টার অভিযোগগুলোর তদন্ত করা হচ্ছে। মামলায় বলা হয়, মঙ্গলবার সকালে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণের পর ওই রাস্তা দিয়ে যখন ফিরছিলেন তখন তাকে সমর্থন জানাতে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নেন তার ফেরার পথে। এ সময় নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে মিছিল করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তাদের সঙ্গে শুরু হয় পুলিশের সংঘর্ষ। এরই মধ্যে রাস্তার আইল্যান্ডের সঙ্গে রাখা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টরা পাশের মার্কেটে গিয়ে আশ্রয় নেন। এ সময় পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। ধাওয়া খেয়ে নেতাকর্মীদের একটি দল হাইকোর্ট মাজার এলাকার মোড় থেকে সচিবালয়ের দিকে, আরেক দল বঙ্গবাজারের দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অন্তত ৩৫ জনকে আটক করার পর ১২ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার আমিনুল হকও রয়েছেন। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণের নামে কক্সবাজার যাওয়ার উদেশে ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা যেভাবে ঘটানো হয়েছে, ঠিক একই কায়দায় মঙ্গলবার আদালত থেকে ফেরার পথে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ির পেছনে সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে দেশের বিভিন্নস্থানে যাতায়াতের পথে সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটাতে পারে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো এক দিকে সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করে রাজপথ উত্তপ্ত করা এবং অন্যদিকে এসব অপ্রীতিকর ঘটনার দায়ভার সরকারের কাঁধে চাপিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির যেসব নেতা-কর্মী গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ, পুলিশের উপর আক্রমণ, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদের ওপর গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি শুরু করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে প্রতীয়মান হচ্ছে, গত ৫ ডিসেম্বরে হঠাৎ এমন কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যে এতগুলো গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হবে ? পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ছক কষে এই ধরনের সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়ে আসলে সরকারের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নার্ভ পরীক্ষা করা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতের রায়কে সামনে রেখে আগামীতে আরও এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করা হতে পারে, যা কঠোর হস্তে দমন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার সুপারিশ করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×