স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার লিগ্যাল নোটিস প্রেরণ প্রসঙ্গে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, লিগ্যাল নোটিস হচ্ছে একটি আইনী প্রক্রিয়া তাই আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এর জবাব দেয়া হবে। মন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স আয়োজিত ‘চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন-২০১৭’ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
‘শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে চাইল্ড পার্লামেন্টের ১৫তম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, শিশুদের সমতা এবং বৈষম্যহীন পরিবেশে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ওপর নির্ভর করছে আমাদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যত। তাই শিশু অধিকার আইন বাস্তবায়নে ও শিশু অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার তার সবই করবে। শিশু নির্যাতন করে কেউ পার পাবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক শিশু ও তরুণ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম, বাল্যবিবাহ, উন্নতমানের স¦াস্থ্যসেবার অভাব, অপুষ্টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার, সহিংসতা ও নির্যাতন ইত্যাদি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যা সরকারের নজরে আছে। তাদের এসব অবস্থার উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা সর্বদা আন্তরিক ও টেকসই।
তিনি বলেন, শিশু অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত দুটি চুক্তি যথা শিশু অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশন (টঘঈজঈ) এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ক কনভেনশন (ঈজচউ)-এর অনুস্বাক্ষরকারী প্রথম কয়েকটি দেশের অন্যতম হলো বাংলাদেশ। টঘঈজঈ এবং ঈজচউ এর অনুস্বাক্ষরকারী হিসেবে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক দায়িত্ব মূলত রাষ্ট্রের ওপর। এ দায়িত্ব পালনের জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ, পরিকল্পনা ও কর্মসূচী নেয়া প্রয়োজন তা নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন, বিধি ও নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে এবং শিশুর প্রতি সহিংসতা দমন বিষয়ক আইনকে আরও বেশি কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ।
জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর ও শক্তিশালী করার জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন মনে করে তিনি বলেন, সরকারের অঙ্গীকারের ধারাবাহিকতায় বিগত দুই বছরের মতো ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও শিশু বাজেট ও শিশুকেন্দ্রিক বাজেট বিশ্লেষণ প্রতিবেদন: ‘বিকশিত শিশু সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ’ প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ১৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে ৫৬ হাজার কোটি টাকার শিশু কেন্দ্রিক বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা বিগত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের চেয়ে ১৪.৮ শতাংশ বেশি। শিশু হত্যা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুতবিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, আগামীতে এ ধারা অব্যাহত রাখা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিদ্যমান ৫৪ টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৯.৭ শতাংশই শিশু। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং আমাদের রূপকল্প ও কৌশলগত পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এদের আমাদের কর্মকা-ের কেন্দ্রে রাখতে হবে। সে লক্ষ্যে সরকার সব শিশুর জন্য নিরাপদ আবাস, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোথায় এবং কিভাবে শিশুরা দারিদ্র্য, দীর্ঘস্থায়ী ও স্বল্পকালীন পুষ্টিহীনতা, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ঝরে পড়া, বাল্যবিবাহ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তার মূল কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
শিশু উন্নয়ন, শিশুদের অধিকার বাস্তবায়ন ও শিশু নির্যাতন বন্ধে কতক বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন মনে করে তিনি বলেন, শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশু অধিকার সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং পিতা-মাতা, শিশু ও তার চারপাশের মানুষকে এ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এছাড়া পারিবারিক নির্যাতনের ফলে শিশুর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজের সমন্বয় বৃদ্ধি করতে হবে। অধিবেশনে দেশের ৬৪টি জেলা হতে আগত চাইল্ড পার্লামেন্টারিয়ানবৃন্দ এবং সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ সরকারী/বেসরকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।