ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে অসহনীয় যানজট ॥ ২০ মিনিটের পথ ৪ ঘণ্টায়

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

রাজধানীতে অসহনীয় যানজট ॥ ২০ মিনিটের পথ ৪ ঘণ্টায়

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজধানীর বিশ্বরোড থেকে মালিবাগ। মাত্র ২০ মিনিটের পথ। অথচ এটুকু রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগে কমপক্ষে চার ঘণ্টা। উড়াল সড়ক উদ্বোধনের পর সঙ্কটের মাত্রা বেড়েছে আরও। প্রশ্ন হলো যানজট নিরসনে নির্মাণ হলো মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়ক। তবে সমস্যা বাড়ার কারণ কি। এ প্রশ্নে যাওয়ার আগে বিশ্বরোড থেকে মালিবাগমুখী বাস যাত্রীরা একজন অপরজনকে বলছিলেন এই মুহূর্তে রাজধানীতে সবচেয়ে নাগরিক বিড়ম্বনা কি। অন্তত ১০ যাত্রী একসঙ্গে জবাব দিলেন ‘যানজট’। এ থেকেই অনুমান করা যায় সমস্যার মাত্রা কতটা বেশি। আর কতটা সমস্যার মুখোমুখি হলে কোন বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে প্রথম স্থান অধিকার করে। একের পর এক উড়াল সড়ক। ফুট ওভারব্রিজ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রো রেলের নির্মাণকাজ চলমান। কিন্তু যানজটের মাত্রা কমেনি। এখন রাজধানীতে যানজটের ভোগান্তির অন্তত আটটি কারণ গত এক সপ্তাহের জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এরমধ্যে প্রধান কারণ হলো ভাঙাচোরা সড়ক, রাস্তা কাঁটাকাটি, ইচ্ছেমাফিক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া, ইউলুপ, ইচ্ছেমত পার্কিং ও যাত্রী ওঠানো, বাড়তি যানবাহন, সমন্বয়ের অভাব ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি। যেসব সড়কে বাসের চলাচল নেই সেখানেও ভোগান্তি। রাসেল স্কয়ার থেকে কাওরান বাজার কিংবা সেন্ট্রাল রোড সড়ক। এখানে নিত্য ভোগান্তি মানুষের। কত সময় পর সিগন্যাল ছাড়বে কেউ জানে না। ট্রাফিক পুলিশরা বলছেন, সরু সড়কে গাড়ির চাপ বেশি। তাই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এরমধ্যে সড়কের দু’পাশে পার্কিং, পণ্য ওঠানামা তো আছেই। যেমন চিত্র গুলিস্তান, রায়সাহেব বাজার, সদরঘাট থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকায়। তাছাড়া সড়কের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী কত গাড়ি চলতে পরাবে এর কোন হিসাবও ঢাকায় নেই। যানজটে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট ॥ যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এই তথ্য বিশ্বব্যাংকের। আর যানজটের কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত কয়েক বছরের বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে আর্থিক ক্ষতির এ আনুমানিক পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় আরও বলা হয়, এই শহরে এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। তীব্র যানজটের সময় গাড়ির আগে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নগরবাসীর কাছে অপরিচিত নয়। যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও যে বাড়বে, তা বলা বাহুল্য। যানবাহনের সংখ্যা যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোন উদ্যোগ না নেয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম। মানুষের হাঁটার গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার বলে মনে করা হয়। ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকার উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে রাজধানীর একটি হোটেলে দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্য থেকে এই চিত্র উঠে এসেছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, দিল্লীর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতসহ বিশেষজ্ঞরা এতে অংশ নিয়েছিলেন। সম্মেলনে ‘ঢাকাকে একটি আধুনিক নগরী বানানোর সুযোগ’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান। তাতে যানজটকে ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ১০ বছর আগেও ঢাকায় যানবাহনের গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। বর্তমানে যা ঘণ্টায় সাত কিলোমিটারের কম। যানবাহনের সংখ্যা বর্তমান হারে বাড়তে থাকলে এবং যানজট নিরসনে উদ্যোগ না নেয়া হলে ২০২৫ সালের মধ্যে যানবাহনের গতি প্রতি ঘণ্টায় হবে চার কিলোমিটার। চিমিয়াও ফান তার প্রবন্ধে আরও বলেন, প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যা প্রতিবছর অর্থনীতিতে বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করছে। যানজটের কারণে নগরায়ণের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার অনেকগুলোই পাওয়া যাচ্ছে না, যা দেশের এবং নগরের অর্থনৈতিক দুর্বলতার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ওই সম্মেলনে ‘ঢাকাকে বদলাতে প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাতে তিনি ঢাকার যানজট নিরসনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। মন্ত্রী দাবি করেন, গণপরিবহন-ব্যবস্থার উন্নয়নে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) এবং বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও চলমান। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দখলমুক্ত এবং খনন করে চক্রাকার নৌপথ চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্ন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘নগর পরিস্থিতি-২০১৬ : ঢাকা মহানগরে যানজট-শাসন-ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক গবেষণায়ও বলা হয়, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতিঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা ছিল গড়ে ২১ দশমিক ২ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ১০-১২ বছর আগে ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সে পরিকল্পনা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। সেটি গত বছর সংশোধন করা হয়েছে। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির শহরে যদি সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে সমস্যা তীব্রতর হবে এটাই স্বাভাবিক। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি (প্রাইভেটকার)। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে বাস ও মিনিবাসের চেয়ে সাত গুণ বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, দীর্ঘদিন বলার পরও গণপরিবহন-ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করায় এখন পুরো ঢাকা স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার পরিকল্পনা করছে, কিন্তু কাজ সেভাবে হচ্ছে না, এটি দুঃখজনক। তিনি বলেন, ঢাকা ও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে গণপরিবহনভিত্তিক দ্রুতগতির পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এত আয়োজনেও সঙ্কট তিমিরেই ॥ ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ সড়কের ওপর দিয়ে পথচারী পারাপার। এটি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় বিভিন্ন সময় নির্মিত হয়েছে ৬৬টি ফুট ওভারব্রিজ, যার বেশির ভাগই অব্যবহৃত। নগরীতে নির্মিত তিনটি আন্ডারপাসের মধ্যে দুটিই কোন কাজে আসছে না। নগরীর যাত্রীর চাপ কমাতে বেশ ঘটা করে চালু হয়েছিল ডেমু ট্রেন সার্ভিস। নানা কারণে সেটাও এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই অবস্থা ওয়াটার বাস সেবারও। রাজধানীর যানজট কমানোর সবচেয়ে বড় উদ্যোগ ফ্লাইওভার। নয় ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। সমাধান মিলছে না তাতেও। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ফ্লাইওভারের দু’দিকেই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট হচ্ছে ফ্লাইওভারের ওপরেও। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর যানজট নিরসনের বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবসম্মত নয়, প্রকল্পসর্বস্ব। এ কারণেই যানজট নিরসনে গৃহীত এসব উদ্যোগ থেকে সফলতা আসছে না। যানজট নিরসনে ফ্লাইওভারে কোন সমাধান দেখছেন না পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি বলেন, আমরা একের পর এক ফ্লাইওভার বানিয়ে চলেছি এবং এগুলো করছি নিজেদের পছন্দ মতো প্রকল্প নিয়ে। আমাদের ফ্লাইওভারগুলোর একটিও গণপরিবহন উপযোগী নয়। ঢাকার যানবাহনের গড় গতি ২৫ থেকে ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, আমরা আসলে উল্টো পথে হাঁটছি। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়া, প্রয়োজনীয় ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান ছাড়াই আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা, সড়ক বিবেচনা না করে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেয়াসহ নানা কারণে ঢাকায় যানজট বাড়ছে বলে জানান ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (ট্রাফিক) রাজিব খাদেম। তিনি বলেন, এ সমস্যা সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়। সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট যত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যানজট কমিয়ে আনা সম্ভব। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ ॥ যানজট কমাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণের বিষয়টি উঠে এসেছে। গত অক্টোবর মাসে সংসদ ভবনে কমিটির ১৮তম বৈঠকে রাজধানীর যানজট নিরসনে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তোলার কারণে নানা রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বৈঠকে শহরের চারপাশে আউটার রিং রোড নির্মাণসহ রিং রোডের পাশে নতুন কয়েকটি আস্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়ও উঠে আসে। বৈঠকে বলা হয়, রাজধানীর যানজট সমস্যা হঠাৎ তৈরি হয়নি। অতি দ্রুত হারে বেড়েছে রাজধানীর মানুষ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে যানবাহন। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি সড়কের পরিধি। বর্তমানে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, নগর পরিকল্পনায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হয়েছিল কিনা, কিংবা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক ছিল কিনা। গণপরিবহনে বর্তমানে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজমান, তার অবসান না হলে বক্তিগত গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়বে। এ অরাজক পরিস্থিতি চলতে থাকলে একসময় এ শহরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। গুলশানের সুখ দুঃখ ॥ যানজটে নাকাল রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। এখন গুলশান যেতেও বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই। প্রতিদিন মানুষের শত শত কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের ভেতরের রাস্তাগুলোতে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল লিংক রোড থেকে গুলশান আড়ং পর্যন্ত রাস্তাটির কিছু অংশ বন্ধ থাকায় যানজট আরও তীব্র আাকার ধারণ করেছে। পুলিশ ও রাজউক বলছে, উন্নয়ন কর্মকা- চলমান থাকায় যানজট হচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল আলম জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন সেবা সংস্থা রাস্তায় উন্নয়নমূলক কর্মকা- চালাচ্ছে। বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইন যাচ্ছে রাস্তার নিচ দিয়ে। আর সড়ক মেরামতেরও কাজ চলছে। এজন্য রাস্তায় যানবাহনের চলাচলের গতি কমে গেছে। আস্তে যানবাহন চলাচল করায় স্বাভাবিক কারণেই যানজট হচ্ছে। কোন কোন রাস্তায় যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত এসব কারণে যানজট বেড়েছে। গুলশান আড়ং পর্যন্ত হাতিরঝিল সংলগ্ন রাস্তাটি উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য সাময়িক বন্ধ রয়েছে। দেখা গেছে, তেজগাঁও এলাকার বেশ কিছু সড়ক কাটা রয়েছে। কিছু সড়কে গাড়ি চলতে পারলেও কিছু সড়কে একেবারেই গাড়ি চলাচল বন্ধ। সবচেয়ে বেশি কাটা রয়েছে শিল্প এলাকার ভূমি অফিসের সামনের সড়কটি। এই সড়কটি দিয়ে একেবারেই গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। আশপাশের প্রতিটি রাস্তার অবস্থা একই। এসব রাস্তার অধিকাংশই হাতিরঝিলের রাস্তার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। রাস্তাগুলোতে উন্নয়ন ও মেরামতের কাজ চলছে। এজন্য এসব এলাকায় কোন যানবাহন যাতায়াত করতে পারছে না। চালকসহ যাত্রীরা জানান, গুলশান আড়ংয়ের কাছে রাস্তা বন্ধ থাকায় তেজগাঁও ডাইভারশন রোড হয়ে নিকেতনের ভেতর দিয়ে গুলশান যেতে হচ্ছে। ফলে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। এলাকার প্যাসিফিক মোটরস ও নাভানা গলিতেও বাড়তি গাড়ির চাপ ও ভোগান্তির চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। তারা জানান, মধ্য রাতেও বাড্ডা হয়ে গুলশান প্রবেশ করতে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) শামসুল আরেফিন জানান, গুলশানমুখী সড়কটিতে যানজটের বিষয়টি তার অজানা। রাজউকের হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া জানান, উন্নয়ন কর্মকা- চলায় আড়ংয়ের সামনের রাস্তা বন্ধ রয়েছে। যন্ত্রণার নাম বিশ্বরোড-মালিবাগ ॥ মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়ক চালু হলেও ভোগান্তি কমেনি। বিশ্বরোড থেকে মালিবাগের রাস্তা এখন আতঙ্কের নাম। যাত্রীসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০ মিনিটের সড়ক যাতায়াতে সময় লাগছে অন্তত তিন থেকে চার ঘণ্টা। ফলে এই রুটটি এখন যাত্রীসহ চালকদের কাছে আতঙ্কের নাম। খুব বেশি সমস্যা না হলে কেউ এই রুটে আসতে চান না। কিন্তু কেন এই যানজট? পরিবহন চালকরা জানিয়েছেন, যানজটের মূলত চারটি কারণ। এরমধ্যে ইউটার্ন, অবৈধ পার্কিং, ইউলুপ নির্মাণসহ রাস্তা কাটাই মূল সমস্যা। তারা বলছেন, বিশ্বরোড থেকে মালিবাগ আসতে বসুন্ধরার সামনে ডানের মোড় বন্ধ করা হলেও গাড়ি পার্কিং ও বাস থামানোকে কেন্দ্র করে যানজটের সৃষ্টি হয়। একই সমস্যা নতুন বাজার এলাকায়। গুলশানমুখী ডানে মোড় বন্ধ করা হয়েছে। তবে এর একটু সামনে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ইউটার্নকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ যানজট হয়। এরপর গুলশান এক নম্বর যেতে নতুন রাস্তার যানজট ও বাড্ডার ইউলুপসহ আশপাশের সংযোগসড়ক বেশিরভাগ রাস্তা কাটা। এছাড়া বাড্ডা সড়কের বেশিরভাগ মূল সড়ক কাটা। এসব কারণেই যানজটে ভোগান্তির মাত্রা দিনকে দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া হাতিরঝিল থেকে রামপুরা সংযোগ সড়কের রাস্তাটিতে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে চরম অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর ধানম-ি, রাসেল স্কয়ার, পান্থপথ, গ্রীন রোড, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, আজিমপুর, শাহবাগ, এ্যালিফেন্ড রোড, মতিঝিল, ফরিকরাপুল, পল্টন, কাকরাইল, বাংলামোটর, মগবাজার, প্রেসক্লাব, মতিঝিল, আরামবাগ, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, আমতলী, বনানী, কামাল আতাতুর্ত এভিনিউ, বিমানবন্দর, নীলক্ষেত, মীরপুর, মীরপুর রোডসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যানজট আর মানুষের ভোগান্তির নানা চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ মত দিয়েছেন, সমন্বয় ও ট্রাফিক সিস্টেম পদ্ধতি আধুনিক করা সম্ভব হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
×