ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ উইমেন্স হিউম্যানিটারিয়ান প্ল্যাটফর্মের সংবাদ সম্মেলন

আশ্রিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ১১ সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

আশ্রিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ১১ সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিগত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিগত নিধনযজ্ঞের মুখে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। এসব আশ্রিত রোহিঙ্গা নারীর শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তাসহ সার্বিক সুরক্ষা ও স্বস্তি নিশ্চিত করতে ১১ সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ উইমেন্স হিউম্যানিটারিয়ান প্ল্যাটফর্ম। বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘মানবিক বিপর্যয় ও রোহিঙ্গা’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশমালা তুলে ধরেন প্ল্যাটফর্মের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানবক্তা ছিলেন মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল। প্ল্যাটফর্মের সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে নারী মাঝি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া; স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি, পয়ঃনিষ্কাশন, শিশু খাদ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া; পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ ও কর্মসূচী জোরদার; আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা; রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিতে গিয়ে স্থানীয় জনগণের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান; নারীবান্ধব সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি; মনোসামাজিক পরামর্শ প্রদানের কার্যক্রমের ওপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ; ত্রাণকাজে অধিকসংখ্যক নারীকর্মী অন্তর্ভুক্ত করা; মানবিক সহায়তা বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার; মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে শক্তিশালী দল তৈরি ও সমন্বয় সাধন এবং জরুরী পরিস্থিতিতে মানব সক্ষমতা উন্নয়নে জীবন দক্ষতামূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ‘বাংলাদেশ উইমেন্স হিউম্যানিটেরিয়ান প্লাটফর্মের উপদেষ্টা ও আমরাই পারি জোটের সম্মানিত চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল বলেন, ‘গত বছর (২০১৬) অক্টোবর মাস থেকে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে কয়েক সীমান্তরক্ষী সেনা নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা এলাকাগুলোতে অভিযান শুরু করে। সেনা সদস্য ও স্থানীয় মগ বহু গ্রামে হামলা ও লুটপাট চালিয়ে, বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে নির্মমভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে। এতে অসংখ্য রোহিঙ্গা নিহত এবং কয়েক লাখ গৃহহীন হয়। নারী, শিশু ও কিশোরীরা বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই ঘটনাবলি বিশ্ব মানবতার জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানে সাধারণ মানুষের ওপর বিভিন্ন নির্যাতন ও সহিংসতায় প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার প্রায় ৮০ ভাগই নারী ও শিশু। যারা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা এবং মানবপাচারের অতিরিক্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। এর পুরোপুরি প্রভাব এসে পড়ছে নারী এবং শিশুদের ওপর। আনুমানিক প্রায় ২০ হাজার গর্ভবতী নারী এরই মধ্যে সন্তান প্রসব করেছে এবং বর্তমানে অনেকেই গর্ভবতী। স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারের জন্য বেসরকারী উদ্যোগে অন্যান্য মানবিক সহায়তাও প্রদান করছে। প্রায় ১১৮ সংগঠন এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আছে। এমন মানবেতর পরিস্থিতিতে বিশেষত নারী ও কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিকসহ সার্বিক নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও স্বস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, পাশাপাশি মনোসামাজিক পরামর্শ দেয়া জরুরী। সংবাদ সম্মেলনে নাজমুন নাহার (জেন্ডার জাস্টিস প্রোগ্রাম ম্যানেজার, অক্সফাম) বলেন, গত ৮-১০ ডিসেম্বর দুর্যোগ ও মানবিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে ‘বাংলাদেশ উইমেনস্ হিউম্যানিটেরিয়ান প্লাটফর্ম’ কক্সবাজার জেলাধীন উখিয়া উপজেলার বালুখালী-১ ও ২ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে। দলটি ক্যাম্পে অবস্থানরত সব মানুষের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যাসমূহ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এবং সরকারী ও বেসরকারী সেবাদান সংস্থাসমূহের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করে এবং তাদের প্রতি কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরেন। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দলটি কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সাথেও সাক্ষাত ও মতবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলটি উখিয়া থেকে বালুখালী পর্যন্ত আশ্রয় শিবির ও এলাকা পরিদর্শন করে। রওশন আরা (প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, নারীপক্ষ) বলেন, উখিয়া থেকে বালুখালী পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থ্যা রয়েছে তা বিশাল জনসংখ্যার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরাসরি যে ক’জন রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগই ছিলেন গর্ভবতী।
×