ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি মামলায় সাফাই সাক্ষ্য দেবেন না খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

দুর্নীতি মামলায় সাফাই সাক্ষ্য দেবেন না খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ২৬, ২৭, ২৮ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করে দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন। ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মোঃ আখতারুজ্জামান বকশীবাজারের কারা অধিদফতরের মাঠে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে বসে শুনানি নেয়ার পর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টা থেকে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত মামলাটিতে তার নির্দোষের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান। মাঝে দুপুরে এক ঘণ্টা আদালতের বিরতি ছিল। এদিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেছে আদালত। আদালত তা গ্রহণ করে তাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি সাফাই সাক্ষী দেবেন কি না? আদালতকে বিএনপি চেয়ারপার্সন জানান, তিনি সাফাই সাক্ষী দেবেন না। এরপর আদালত এই মামলাটির যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেন। বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্কে খালেদার আইনজীবী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে এ মামলায় জবাব দেয়ার জন্য ডেকে আনা হয়েছে। এটা চকবাজার বা পাটুয়াটুলীর কোন পাইকারি দোকান নয়। মামলাটি কোনরকমভাবে শেষ করলে হবে না। মাননীয় আদালত এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলতে পারব না। আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খানের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এজে মোহাম্মদ আলী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবেন। এর আগে বুধবার খালেদার আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। যুক্তি উপস্থাপনে তিনি বলেন, ‘বিচারে যেন কোনরকম বিভ্রান্তি না হয়। বেগম খালেদা জিয়া যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন।’ তিনি আরও বলেন, মামলাটির সঠিকভাবে চার্জ গঠন হয়নি। মামলার এজাহারের সঙ্গে চার্জ গঠনের কোন মিল নেই। কোন সাক্ষী বলে নাই খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং বিদেশ থেকে তার এ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। এদিকে এদিন শুনানির আগে হঠাৎ করেই আদালতপাড়ার বাইরের এই এজলাস ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, আদালতের বাইরে আর্চওয়ে বসানো, আশেপাশে মোটরসাইকেলে করে র‌্যাব টহল দিচ্ছে। পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সদস্যদের উপস্থিতিও অন্য দিনের চেয়ে বেশি। সকাল ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার ঢোকার কিছুক্ষণ পরই তার আইনজীবী শুনানি শুরু করেন। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-আর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। খালেদা জিয়া, সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ এ মামলায় জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান গত নয় বছর ধরে দেশের বাইরে, তার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এছাড়া কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। মামলার বিচার শুরুর প্রথম থেকেই বার বার শুনানিতে অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া। অনুপস্থিতির কারণে একাধিকবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত। নানা অজুহাতে অসংখ্যবার উচ্চ আদালতেও গিয়েছেন। তার এসব কর্মকা-কে বিচার বিলম্বিত করার অপচেষ্টা বলেই মনে করেন অনেকে।
×