ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকারের ৯ বছরের সাফল্য তুলে ধরা হবে

৯ থেকে ১১ জানুয়ারি সারাদেশে উন্নয়ন মেলা

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

৯ থেকে ১১ জানুয়ারি সারাদেশে উন্নয়ন মেলা

এম শাহজাহান ॥ বত্রিশ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। এ লক্ষ্যে রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ প্রস্তুত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নয় বছরের সাফল্য তুলে ধরতে সারাদেশে তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। গতবারের ন্যায় এবারও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সামনে রেখে আগামী ৯-১১ জানুয়ারি উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ৬৪টি জেলা এবং প্রতিটি থানায় যাতে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা রয়েছে। শীঘ্রই মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠানের বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হবে। এবারের উন্নয়ন মেলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পৃথকভাবে তাদের উন্নয়ন কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার নয় বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় প্রায় তিন গুণ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। প্রায় চার গুণ বেড়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে রফতানি আয়। সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে প্রবাসী আয়। প্রায় দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। একইভাবে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ানো, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই অর্জন দেশের প্রতিটি মানুষকে জানাতে তিন দিনব্যাপী শুরু হচ্ছে উন্নয়ন মেলা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ অর্জনে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সাফল্যগাঁথা জনগণের সামনে তুলে ধরাই এই মেলার মূল লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগেই উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। জেলায় জেলা প্রশাসক এবং থানায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেলার আয়োজন করবেন। এতে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আলাদা আলাদাভাবে তাদের উন্নয়ন কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরবে। তিনি বলেন, গত বছরের ন্যায় এবার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সামনে রেখে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলার সার্বিক বিষয় মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই তা অনুমোদন পাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষে ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই ১০টি বিশেষ উদ্যোগ হচ্ছে- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রায়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচী, নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচী, সকলের জন্য বিদ্যুত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ বিকাশ ও পরিবেশ সংরক্ষণ। এবারের ঢাকার মেলায় দেশের সব মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, আনসার, অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পৃথক পৃথক স্টল থাকবে। এদিকে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে দেশ কতটুকু এগিয়েছে সেসব বিষয় উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে-আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য বিমোচন। এছাড়া রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে কাজ করছে সরকার। এই লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেটে প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুও দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর দারিদ্র্য বিমোচনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশের অর্থনীতি আর স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি। তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ হতে পারেনি। তবে ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের কৌশলগত দলিল হিসেবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) প্রণয়ন করে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় গৃহীত কর্মকৌশল ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ ২০১০-২০১৫ মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ সময়ে আর্থ-সামাজিক খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। কর্মসংস্থান, মজুরি, খাদ্যশস্য উৎপাদন, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানিসহ সকল অর্থনৈতিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি বজায় রয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা। সরকারের দারিদ্র্যবান্ধব কর্মসূচী এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দারিদ্র্যের হার কমার পাশাপাশি বৈষম্যও হ্রাস পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৫ সালে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের অন্যান্য লক্ষ্যসমূহ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে ২০১৬-২০২০ অর্জন করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, জঙ্গীবাদ-বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি এবং নানা প্রতিবন্ধকতার মুখেও বর্তমান সরকার উন্নয়নের পথে হাঁটছে। আগামী ২০২১ সালে এ উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রাথমিক ধাপ শেষ হবে। কিন্তু ২০৪১ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য মধ্যমেয়াদে যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তা হলো বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কর্মসৃজন, দক্ষ উৎপাদনশীলতা, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং টেকসই পরিবেশবান্ধব নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। এসব বিষয় উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।
×