ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গৌরনদীতে বিজয় পতাকা উড়েছিল আজ

২৮দিন যৌথ আক্রমণের পর আত্মসমর্পণ করে পাকিরা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

২৮দিন যৌথ আক্রমণের পর আত্মসমর্পণ করে পাকিরা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশের বিজয় ঘোষিত হলেও বরিশালের গৌরনদী পাকহানাদার মুক্ত হয়েছিল ২২ডিসেম্বর। বাংলাদেশের মধ্যে সর্বশেষ বিজয় পতাকা উড়েছিল গৌরনদী। টানা ২৮দিন মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর যৌথ আক্রমণের পর ওইদিন গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পে অবস্থানরত শতাধিক পাক সেনা মিত্রবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছিল। হানাদার বাহিনী এলাকায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পাঁচ সহস্রাধিক নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা ও তিন শতাধিক মা-বোনের ইজ্জত হরণ করে। ওই বছরের ২৫ এপ্রিল হানাদাররা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে এ জনপদে প্রবেশের মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার ইতিহাসে সবচেয়ে লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ১৫ মে। পাকসেনারা ক্ষিপ্ত হয়। কসবার হযরত মল্লিক দুধ কুমার পীর সাহেবের মাজার সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে চাঁদশী হয়ে পশ্চিম দিকে শতাধিক সেনা অগ্রসর হয়ে জনতার ওপর এলএমজির ব্রাশ মারে এবং গুলি করে পাখির মতো মানুষ মারতে থাকে। রাংতার উত্তর পাশের সুবিশাল ক্যাতনার বিলে ধান ও পাট ক্ষেতের মধ্যে আশ্রয় নিতে এসে পাক বাহিনীর গুলিতে ওইদিন পাঁচ শতাধিক লোক প্রাণ হারায়। কোটালীপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত হয় হেমায়েত বাহিনী। তিনি সর্বপ্রথম ওই অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার নেতৃত্বে আগৈলঝাড়ার শিকির বাজার, রামশীল ও পয়সারহাটে পাক সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখে যুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে গৌরনদীর হোসনাবাদ গ্রামের নিজাম উদ্দিন আকনের নেতৃত্বে ৬০ থেকে ৭০ মুক্তিবাহিনীর একটি দল ভারত থেকে প্রশিক্ষণ শেষে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় আসেন। নিজাম উদ্দিন কৃতিত্বের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৯নং সেক্টরের গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষে মুজিব বাহিনীর একটি দল ভারত থেকে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, তার চাচাত ভাই রকিব সেরনিয়াবাত, কসবার ফজলুর রহমান হাওলাদার, বিল্বগ্রামের মেজর শাহ আলম তালুকদার ছিলেন তার সহযোগী। পশ্চিম দিক থেকে মুজিব বাহিনী ও পূর্বদিক থেকে নিজাম বাহিনী আক্রমণ করে। টানা ২৮দিন যুদ্ধের পর পাক সেনারা পরাজিত হয়ে ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর মেজর ডিসি দাসের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। দিবসটি পালনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে র‌্যালি, আলোচনা সভা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মিলাদ ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
×