ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ শেষ নবী (সা) শান্তি সংস্থাপক -অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ শেষ নবী (সা) শান্তি সংস্থাপক  -অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম

(গত শুক্রবারের পর) মনীষী ল্য মারটিন বলেন : If greatness of purpose, smallness of means and astounding result are the three criteria of human genious, who could dare to compare any great man in modern history with Muhammad? The most famous men created arms, laws and impires only. They founded. If anything at all, no more than meterials powers which often crumbled away before their eyes. This man moved not only armies, legislations, empires, peoples and dynasties, but millions of men in one third of the then inhabited world and more than that, he moved the alters. The Gods, the religions, the ideas, the beliefs and souls, on the basis of a Book, every letter of which has become law, he created a spiritual nationality which blended together people of every tongue and of every race. ...Philosopher, orator, aposite legislator, warrior, conqueror of ideams, restorer of rational dogmas, of a cult without images, the founder of twenty terrestial empires and one spiritual empire, that is Muhammed. As regards all standards by which human greatness may be measured. we may well ask, is there any man greater than he? ...উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব, উপায়ের ক্ষুদ্রতা এবং বিস্ময়কর ফলাফল এই তিনটি যদি হয় মানব প্রতিভার মানদন্ড, তাহলে আধুনিক ইতিহাসে কার এমন ধৃষ্টতা আছে যে, কোন মহৎ ব্যক্তিকে হযরত মুহম্মদ (সা)-এর সঙ্গে তুলনা করতে পারে? অধিকাংশ মশহুর ব্যক্তি শুধুমাত্র সৈন্যবাহিনী গঠন করেছেন, আইন বানিয়েছেন এবং গড়ে তুলেছেন সাম্রাজ্য। তাঁরা যদি কিছু করেই থাকেন তা পার্থিব ক্ষমতার নামান্তর মাত্র, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের চোখের সম্মুখেই ধূলিসাত হয়ে গেছে। এই পুরুষ (হযরত মুহম্মদ মুস্তাফা (সা) কেবল সৈন্যবাহিনী পরিচালনাই করেননি, তিনি কেবল আইনই দেননি, রাজত্ব প্রতিষ্ঠাই করেননি, কেবল জনগণকে সুসংগঠিতই করেননি এবং কেবল সালতানাত সংস্থাপনই করেননি, বরং সেই সঙ্গে তিনি সেই সময়কার পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ কিংবা তারও বেশি জনঅধ্যুষিত এলাকার লাখ লাখ মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আনয়ন করেছেন, বহু দেবতার খপ্পর থেকে তাদের উদ্ধার করেছেন, ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা, ভাব ও বিশ্বাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছেন এবং আত্মার বিকাশ ঘটিয়েছেন। একখানি কিতাবের ভিত্তিতে তিনি গড়ে তুলেছেন এক অনন্য রুহানি জাতীয়তা যা প্রতিটি ভাষাভাষী ও প্রতিটি গোত্রের মানুষকে এক সুদৃঢ় ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করেছে। সেই কিতাবের প্রতিটি হরফ আইনে পরিণত হয়েছে। ...দার্শনিক, বাগ্মী, রসূল, আইনদাতা যোদ্ধা, ভাবসমূহ বিজয়ী, যুক্তিসিদ্ধ ধর্মমত উদ্ধারকারী, নিরাকারে ইবাদত আনয়নকারী, কুড়িটি পার্থিব সাম্রাজ্যের এবং একটি রুহানি সালতানাতের প্রতিষ্ঠাকারী হচ্ছেন হযরত মুহম্মদ (সা)। মানুষের মহত্ত্ব পরিমাপের সমস্ত মানদ- জড়ো করে আমাদের একটিই জিজ্ঞাসা : তাঁর চেয়ে মহত্তর কোন মানুষ কি কোথাও আছেন? আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের আলোচনাকে তাঁর খ্যাতি ও মর্যাদাকে বুলন্দ করে দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন : ওয়া রাফা’আনা লাকা যিকরাক। (সূরা ইনশিরা : আয়াত ৪)। আমরা দেখতে পাই পৃথিবীর খ্যাতিমান, যশস্বী প-িতজনেরা, মনীষী, ইতিহাসবেত্তা সবাই প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম যে বিশ্ব শান্তির মহান দূত, তিনি যে মানবতার মুক্তিদূত, তাঁর দ্বারা পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্ত আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যবস্থাই যে, বিশ্ব মানবতার জন্য একমাত্র কল্যাণকর জীবন ব্যবস্থা, এটা এমন এক জীবন ব্যবস্থা যাতে দাখিল হতে হলে আল্লাহ্র ওপর ইমান আনতে হয়, তাঁর ফেরেশতাগণের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়, তাঁর সব রসূলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়, সমস্ত আসমানী কিতাবের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়, রোজহাশরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হয় ইত্যাদি। এখানেই ইসলামের বৈশিষ্ট্য। জর্জ বার্নার্ড শ বলেন : If all the world was united under one leader then Muhammad would have been the best fitted man to lead the people of various creeds, dogmas and ideas to peace and happiness. -নানা ধর্মরত, ধর্মবিশ্বাস ও চিন্তাধারার মানুষকে শান্তি ও সুখের দিকে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যে যদি গোটা পৃথিবীকে একত্র করে একজন নেতা খোঁজা হয় তাহলে সে জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ও যোগ্যতম ব্যক্তি হবেন হযরত মুহম্মদ (সা)। পৃথিবীতে নবী-রসুল আগমনের ধারাবাহিকতায় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের আগমন ঘটে সবার শেষে। তিনি নবীগণের সমাপ্তি, শেষ নবী। তিনি ইসলামের পূর্ণতা আনয়ন করেন এবং বিশ্বমানব সভ্যতায় স্বর্ণোজ্জ্বল মাত্রা সংযোজন করে এক বিস্ময়কর অবদান রাখেন। তিনি অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি আনয়ন করেন। ইসলামের জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, সত্য-সুন্দরকে বিশ্বমানবতার হৃদয়গভীরে স্থান করে দেয়ার জন্য, আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য। ইসলাম সন্ত্রাসকে ঘৃণা করে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : লা তুফ্সিদু ফীল্ ্আরদ-পৃথিবীতে সন্ত্রাস সৃষ্টি কর না। (সূরা বাকারা : আয়াত ১১)। আর ইসলাম শব্দের শব্দমূল সলম-এর অর্থই তো হচ্ছে শান্তি। মুসলিমদের পারস্পরিক অভিবাদন হচ্ছে আসসালামু আলায়কুম-ওয়া আলায়কুমুস সালাম। চেম্বার্স এনসাইক্লোপিডিয়াতে বলা হয়েছে : It was the prophet who laid the foundation of that vast edifice of enlightment and civilization which has adorned the world since his time... . Such were the seeds which grew into whose branches spread to Bagdad. Cicily, Egypt and Spain and whose fruits are enjoyed to this day by modern Europe. প্রিয় নবী (সা)-ই জ্ঞানালোকের ও সভ্যতার সুবিশাল প্রাসাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যা তাঁর সময়কাল থেকেই পৃথিবীকে অলঙ্কৃত করে আসছে। ...এমনতরই ছিল সেই বীজগুলো যা গজিয়ে উঠল অনেক বৃক্ষ হয়ে, যার শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়ল বাগদাদে, সিসিলিতে, মিসরে ও স্পেনে এবং যার ফলগুলো আজকের দিনে আধুনিক ইউরোপ ভোগ করছে। (সমাপ্ত) লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ
×