ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ পর্ষদ সভায় অবসান হচ্ছে মোরশেদ খান যুগের

এবি ব্যাংকের মালিকানায়ও পরিবর্তন আসছে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

এবি ব্যাংকের মালিকানায়ও পরিবর্তন আসছে

রহিম শেখ ॥ গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তিন ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। এ যাত্রায় বেসরকারী খাতের প্রথম প্রজন্মের এবি ব্যাংকের মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। প্রায় ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় রয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। যার বিরুদ্ধে এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে নতুন পরিচালক নির্বাচন করতে চায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এ লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও বিশেষ সাধারণ সভার আয়োজন করেছে এবি ব্যাংক। জানা গেছে, এবি ব্যাংকের প্রায় ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে বিএনপি সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের হাতে। তিনি এক সময় এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই পদে থাকার সুবাদে এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার অভিযোগ উঠে মোরশেদ খানের ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি তদন্ত করে হতবাক হয়ে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল। তারা জানান, অফশোর ইউনিট থেকে সিঙ্গাপুরের ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেডকে ১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার (১১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা) ঋণসুবিধা দেয়া হয়। অথচ প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৩ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার। ঋণের মঞ্জুরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মিলেনিয়াম ডিস্ট্রিবিউশন, মিলেনিয়াম মোটরস, মিলেনিয়াম চাং ইয়ং মোটরস, মেসার্স হুন্দাই মোটরস বাংলাদেশ লিমিটেড ও মেসার্স প্যাসিফিক মোটরসকে মোটরযান ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য মূলধন হিসেবে এই ঋণ মঞ্জুর করা হয়। সবগুলো প্রতিষ্ঠানই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মালিকানাধীন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে এসব অনিয়ম বেরিয়ে আসার পর গত ৩১ মে’র মধ্যে এবি ব্যাংককে অর্থ ফেরত আনার নির্দেশনা দেয় হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন অর্থই ফেরত আনতে পারেনি ব্যাংকটি। এ ঘটনায় গত ১০ ডিসেম্বর ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৪ জনকে তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই পরিস্থিতি কিছু দিন ধরেই এবি ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের গুঞ্জন ওঠে। চার মাস আগেই এবি ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা ও বিশেষ সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। ভ্যানু নির্বাচন করা হয় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরাতে। তবে অজ্ঞাত কারণে সেই সভাটি সম্পন্ন করতে পারেনি বর্তমান পর্ষদ। এরপর সিদ্ধান্ত হয় ২১ ডিসেম্বর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে এ দুটি সভা হবে। কিন্তু শেষে এসে আবার স্থান পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ গত রবিবার এজিএমের স্থান পরিবর্তন করে লা মেরিডিয়ান ঠিক করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও বিশেষ সাধারণ সভার (ইজিএম) মাধ্যমে নতুন পরিচালক নির্বাচন করবে পর্ষদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, পর্ষদের পরিবর্তন অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল। দেরি হলেও এটি ব্যাংকের জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, সভা পূর্বনির্ধারিত। তবে পর্ষদের পরিবর্তনের বিষয়ে ঠিক নির্দিষ্ট করে কিছু জানি না বলে ফোন কেটে দেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী যে কোন প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে পরিবর্তন আসতেই পারে। তা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের না। তবে নতুন পরিচালক নিয়োগ দিতে আমাদের অনাপত্তি লাগে। খেলাপী কেউ পরিচালক হচ্ছেন কি না, আরও বেশ কিছু বিষয় দেখে অনাপত্তি দেয়া হয়। সূত্র মতে, বেশ কিছু দিন ধরেই বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ আদান-প্রদান করছেন। এছাড়া ঋণ বিতরণে অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। যাচাই-বাছাই না করেই দেয়া হচ্ছে ঋণ। বিশেষ সুবিধায় পুনর্গঠন করা ঋণ আবার খেলাপী হচ্ছে। ফলে খেলাপী ঋণ এখন লাগামহীন। সেই সঙ্গে প্রভিশন সংরক্ষণ বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিও বাড়ছে। সরকারী ও বেসরকারী খাতের সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। ব্যাংকের এই আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য ২০১৬ সালের শুরুতে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংক এবং গত অক্টোবরে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথমত শেয়ারহোল্ডাররা পরিবর্তন করে থাকলে আপত্তি করার কিছুই নেই। কারণ শেয়ারহোল্ডাররা তা পারেই। দ্বিতীয়ত, এসআইবিএল ও ইসলামী ব্যাংক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকায় সরকারের দিক থেকে ব্যাংক দুটিকে তা অব্যাহত রাখতে দেয়া ঠিক হচ্ছিল না। তাই এ পরিবর্তন হয়েছে। পাশাপাশি এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। ভবিষ্যতে কোন ধরনের অনিয়মের আগেই লাগাম টেনে ধরা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
×